২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী ২ জুন টেলিভিশনের পর্দায় বাজেট পেশ করবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। সাধারণত জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করা হলেও গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিলুপ্ত হয়ে যায় দ্বাদশ সংসদ। এ বাজেট চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় প্রায় ১ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার।
জুনের প্রথম সপ্তাহে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ফলে প্রথমবারের মতো বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে সোমবার (২ জুন) বাজেট পেশ করা হবে। আসছে বাজেটে থাকবে না কোনো রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর ও বড় প্রকল্পের বাহাদুরি। বর্তমানে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করায় সংকোচনমূলক বাজেটের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা থাকবে সরকারের।
বাজেটে নাগরিকদের স্বস্তি দিতে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো ও সামজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে। তবে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এ শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলন।
এবার জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি ও করহার প্রায় ৪০ শতাংশ কমতে পারে। বর্তমানে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে অঞ্চলভেদে প্রায় ১৪ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বিভিন্ন ধরনের কর ও ফি রয়েছে। আগামী অর্থবছর এটি কমিয়ে ৮ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে বলে জানা গেছে।
আসন্ন জাতীয় বাজেটে ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের ওপর করের চাপ কমাতে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো ও নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম শিথিলসহ বেশকিছু উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। গত কয়েক বছরের দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যক্তিপর্যায়ে কিছুটা স্বস্তি দিতে এসব ব্যবস্থা বিবেচনা করা হচ্ছে।
বাজেট এলেই প্রতিবছর সিগারেটের দাম বাড়ে। তবে আসন্ন বাজেটে তামাক ও তামাকজাত পণ্যের দাম না বাড়ানোর প্রস্তাব থাকতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এবার থাকছে না কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। এসি-ফ্রিজ-মোবাইল ফোনে ভ্যাট বাড়নো হবে। বিদেশ থেকে বছরে একবার স্বর্ণ আনার সুযোগ থাকছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে যেহেতু রাজস্ব আহরণে তেমন গতি নেই, তাই সরকার সংকোচনমূলক বাজেট দিতে যাচ্ছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। তবে এ বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হতে পারে। আর স্বাভাবিক সময়ে পূর্বের অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৪ থেকে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে নতুন বাজেট ঘোষণা করা হয়। কিন্তু আগামী অর্থবছরের ক্ষেত্রে ঘটতে যাচ্ছে ব্যতিক্রম। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এ বাজেট চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় প্রায় ১ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। তবে এ বাজেট বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে এরই মধ্যে সংশোধন করে বাজেটের আকার সাত লাখ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকেই প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে নির্ধারণ করেছে সরকার। আর বাজেট ছোট করা হলেও কর্মসংস্থানের ওপর যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে জন্য গ্রামীণ পর্যায়ে রাস্তাঘাট নির্মাণ, সংস্কারসহ গ্রামীণ অবকাঠামো খাতের কর্মযজ্ঞ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে বড় তেমন কোনো প্রকল্প নেওয়া হবে না। এরই মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। গত রবিবার অনুমোদিত এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। এটি সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতিরই বহিঃপ্রকাশ।
এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকেই মূল অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হবে। এ ছাড়া বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জ্বালানি সাশ্রয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হবে।
এডিপি ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকার যে নীতিতে হাঁটছে, সেটিকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরাও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। সেই বাস্তবতায় এডিপি বাস্তবায়নে যাতে কোনো ধরনের অপচয় না হয়, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’
এদিকে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণের বিষয়ে সরকারের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। মূলত বড় কোনো রাজস্ব উৎসের সন্ধান করতে না পারায় সরকার খরচের খাত বাড়াতে চাচ্ছে না। আর অর্থের প্রবাহ বাড়লে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। তাই সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যয়ের খাতকে নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখতে চাইছে। দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশে ৯ শতাংশের বেশি হারে মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। আগামী অর্থবছরে সরকার এ মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে চায়। তবে মূল্যস্ফীতি এতটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলে মনে করছে বিশ^ব্যাংক। সংস্থাটি মনে করে, আগামী অর্থবছর মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ায় এ হার আরও কমবে বলে আত্মবিশ্বাসী সরকার।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আগামী অর্থবছরে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হতে পারে, যা চলতি বাজেটে ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্য কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৮১৭ টাকা, কিন্তু আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব ঘাটতি ৫৮ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ ২১ শতাংশ। এনবিআর ভেঙে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের বিষয়ে সম্প্রতি অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। এ অধ্যাদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন করছেন বিসিএস কর এবং বিসিএস শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এমন পরিস্থিতিতে এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।
কর হার কমাতে পারে সরকার : আগামী অর্থবছর থেকে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি ও করহার প্রায় ৪০ শতাংশ কমতে পারে। তবে করহার কমিয়ে সরকার চায় গতানুগতি মৌজামূল্য থেকে সরে এসে বাজারমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এসব সম্পত্তির দলিল মূল্য নির্ধারণ করা হবে। সরকার মনে করছে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে আবাসন খাতে কালো টাকার অপ্রতিরোধ্য দাপট কমে যাবে এবং একই সঙ্গে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আহরণ।
বর্তমানে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে অঞ্চলভেদে প্রায় ১৪ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বিভিন্ন ধরনের কর ও ফি রয়েছে। আগামী অর্থবছর এটি কমিয়ে ৮ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যা ক্রেতা-বিক্রেতাকে বড় ধরনের কর ছাড় দেওয়ার পরও আবাসন খাতে স্বচ্ছতা ও রাজস্ব আহরণ বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সভায় আইন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
করমুক্ত আয়সীমা বাড়তে পারে : আসন্ন জাতীয় বাজেটে ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের ওপর করের চাপ কমাতে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো ও নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম শিথিলসহ বেশকিছু উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, গত কয়েক বছরের দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যক্তিপর্যায়ে কিছুটা স্বস্তি দিতে এসব ব্যবস্থা বিবেচনা করা হচ্ছে। বর্তমানে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি), এফবিসিসিআই এই আয়সীমা বাড়িয়ে ৪-৪.৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেছে বিভিন্ন সময়।
তবে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হতে পারে বলে জানা গেছে। বর্তমানে সারা দেশে ১ কোটি ১১ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। এর মধ্যে বছরে গড়ে ৪০ লাখের মতো টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দেয়। আসন্ন বাজেটে এনবিআর কর দেওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করার জন্য কাজ করছে বলে জানা গেছে।
এবার নাও বাড়তে পারে সিগারেটের দাম : বাজেট এলেই প্রতিবছর সিগারেটের দাম বাড়ে। গেল কয়েকবছর ধরেই এমনটি হয়ে আসছে। তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এর ব্যতিক্রম হতে যাচ্ছে। বাজেটে এবার তামাক ও তামাকজাত পণ্যের দাম না বাড়ানোর প্রস্তাব থাকতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে এর কারণও আছে। গত জানুয়ারিতে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে একবার সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটেও সিগারেটের ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়েছিল। এক বছরেই সিগারেটের ওপর দুইবার কর বেড়েছে। তাই এবারের বাজেটে নতুন করে সিগারেটে শুল্ক না বসানোর পরিকল্পনার কথা জানা গেছে।
জানুয়ারিতে বিশেষ অধ্যাদেশে ভ্যাট ও শুল্ক বসানো ওই পণ্যের তালিকায় সিগারেটও ছিল। মূলত রাজস্ব বাড়াতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছিল। জানুয়ারির ওই অধ্যাদেশে অনুযায়ী, নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়। এতে প্রযোজ্য সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ করা হয়। এ ছাড়া, মধ্যমস্তরে ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ করা হয়। উচ্চস্তরে ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। আর অতি উচ্চস্তরের সিগারেটের দাম ১৬০ টাকা থেকে ১৮৫ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে না : আসন্ন বাজেটে কোনো খাতেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হবে না বলে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, কালো টাকার উৎস বন্ধে আমি চেষ্টা করছি, যে দামে জমি কেনাবেচা হয়, সে দামেই হবে জমির নিবন্ধন বা দলিল। এক্ষেত্রে করও কমানো হবে। এত তাড়াতাড়ি করা সম্ভব হবে কি না জানি না। গুলশানে প্রতিকাঠা জমি ১৫ কোটি টাকায় বিক্রি হলেও দলিল হয় ৫ কোটি টাকায়। এভাবে কেনাবেচায় দুপক্ষই বিপদে পড়েছে। অনেকে ঘুষটুষ দিয়ে এখান থেকে পার পাচ্ছে। আমরা এ প্রবণতা বন্ধ করতে চাই।
সরকার বলছে, প্রকৃত মূল্যে জমির দলিল হলে আরও আবাসন খাতে কারও কালো টাকা ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না।
ব্যবসায়ীদের দাবি : প্রতি বছরের মতোই দেশের ব্যবসায়ীরা আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসার বিভিন্ন ধাপে শুল্ক-করে বড় ছাড় দাবি করেছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এবার বলা হচ্ছে ঢালাও ছাড় না দিয়ে ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নেই বেশি মনোযোগী সরকার। একই সঙ্গে যৌক্তিক করের বিধান রেখে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য একটি বাস্তবসম্মত বাজেট প্রণয়ন করতে চায় সরকার।
এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে দৃঢ় করতে- ব্যবসায়িক খরচ কমিয়ে আনা, বিনিয়োগ আকর্ষণ ও সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগ সহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, শিপিং ও পরিবহন ব্যয় হ্রাস, সাশ্রয়ী ও গুণগত জ্বালানি নিশ্চিতকরণ, স্বচ্ছতা ও সুশাসন বাস্তবায়নের পাশাপাশি কর আদায়ের ক্ষেত্রে হয়রানি ও জটিলতা দূরীকরণের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব কর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের দাবি তুলে এফবিসিসিআই।
এর মধ্যে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানির বিপরীতে উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫০ শতাংশ করা, করমুক্ত আয়সীমা এক লাখ টাকা বাড়ানো, স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসকের হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ, শিল্পের উপকরণ ও কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবি করা হয়।
এসি-ফ্রিজ-মোবাইল ফোনে ভ্যাট বাড়ছে : বর্তমানে ফ্রিজ ও এয়ার কন্ডিশনারের উৎপাদন পর্যায়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত রয়েছে, তবে এনবিআর আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর তা ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা করছে। একইভাবে, মোবাইল ফোন তৈরিতে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের ওপর নির্ভর করে ৫ ও সাড়ে ৭ শতাংশ হারে যে ভ্যাট আরোপিত রয়েছে, তা বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ ও ১০ শতাংশ করারও প্রস্তাব করা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাটারি তৈরির ওপরও বিদ্যমান সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হতে পারে।
বিদেশ থেকে বছরে স্বর্ণ আনা যাবে একবার : কাস্টমস বিভাগের একাধিক সূত্রমতে, বিদেশফেরত যাত্রীদের জন্য ব্যাগেজ রুলে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। শুল্ক ছাড়াই বছরে একাধিক বার স্বর্ণ আনার সুযোগ থাকলেও এখন থেকে সেটি সীমিত করা হচ্ছে বছরে মাত্র একবার। একই সঙ্গে ১০ হাজার ডলারের বেশি বহন করলে তা নির্ধারিত ফরমে ঘোষণা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এ ছাড়া সেকেলে ও অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় কয়েকটি পণ্যের আমদানির সুযোগ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।
বর্তমান নিয়মে এক জন যাত্রী বছরে যতবার খুশি ততবার শুল্ক ছাড়াই ১০০ গ্রাম স্বর্ণালংকার বা ২০০ গ্রাম রুপার অলংকার আনতে পারেন। এছাড়া শুল্ক দিয়ে ১১৭ গ্রাম বা প্রায় ১০ ভরি স্বর্ণের বার আনার সুযোগ রয়েছে, যার জন্য প্রতি ভরিতে দিতে হয় ৪ হাজার টাকা শুল্ক। নতুন প্রস্তাবনায় এ সুযোগ সীমিত করে বছরে এক বার করা হতে পারে। বর্তমানে স্থলবন্দর দিয়ে বছরে তিন বার সর্বোচ্চ ৪০০ ডলার পর্যন্ত শুল্কমুক্ত পণ্য আনার সুযোগ থাকলেও তা কমিয়ে একবার করা হতে পারে।