পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীর বালুমহাল দখলদারিত্ব নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঈশ্বরদী উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের পদ্মা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধরা হলেন- ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের পূর্ব নওদাপাড়া গ্রামের মৃত জামান ড্রাইভারের ছেলে সেলিম হোসেন (৪৫), পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর বিবিসি বাজার এলাকার মৃত আনোয়ার সরদারের ছেলে চপল সরদার (২৭) ও চররূপপুর গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে রেজাউল হক ওরফে লালু, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার ষোলদাগ হাসপাতাল রোডের মৃত শুকুর আলীর ছেলে শওকত ইসলাম, একই উপজেলার গোলাপনগর বাঙালপাড়ার হযরত আলীর ছেলে রিপন হোসেন ও ফকিরাবাদ গ্রামের শাহিন আলমের ছেলে মো. সানাউল্লাহ। এদের মধ্যে গুরুতর আহত সেলিম হোসেনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরদীর সাঁড়ায় বালু ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন যাবত কুষ্টিয়ার মো. কাকনের সঙ্গে ঈশ্বরদী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সুলতান আলী টনি বিশ্বাসের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। বুধবার এ নিয়ে পদ্মার চরে উভয়পক্ষের মহড়ায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পদ্মা নদীর ঈশ্বরদীর সীমানায় কয়েকটি ট্রলারে কাকন ইঞ্জিনিয়ারের লোকজন এসে বালুমহাল দখল নিতে এলে টনি বিশ্বাসের লোকজন সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। একপর্যায়ে কাকন লোকজন প্রতিরোধের মুখে সেখান থেকে ট্রলার নিয়ে পালিয়ে চলে যায়।
ওই ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পদ্মার চরে দুই পক্ষ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে কাকনের লোকজন প্রতিশোধ নিতে যুবদল নেতা টনি বিশ্বাসের লোকজনের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় উভয়পক্ষ বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। নদীর ভেতরেই ট্রলারে দুই পক্ষের মহড়া হয় এবং সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
ঘটনা সম্পর্কে মুঠোফোনে টনি বিশ্বাস জানান, তিনি বৈধভাবে ইজারা নিয়ে নদীচর থেকে বালুর খাজনা আদায় করছেন। এরইমধ্যে বালুমহল দখল ও খাজনা আদায়ের নিয়ন্ত্রণ নিতে তার প্রতিপক্ষ কাকন বিভিন্নভাবে তাকে খাজনা আদায়ে বাধা দিচ্ছেন ও চরে যেতে দিচ্ছেন না। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালের দিকে হঠাৎ তিন-চারটা ট্রলারে করে এসে কাকনের লোকজন আমার লোকজনের ওপর হামলা চালায় ও গুলিবর্ষণ করে। এতে তার ১০-১২ জন লোক আহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৭ জন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত গুলিবিদ্ধ সেলিম হোসেনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানান।
এদিকে এ বিষয়ে কথা বলতে কাকনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ঈশ্বরদী লক্ষীকুন্ডা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এমরান মাহমুদ তুহিন বলেন, এ ঘটনায় সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঈশ্বরদী থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম জানান, মুলত বালুর ইজারা ও খাজনা আদায়ের দখলদারিত্ব নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের জেরে নদীর ভেতরে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। এ ঘটনায় কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত অভিযোগ দেয়নি।