সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

গাজা যুদ্ধে ১৯ মাসে ১৭ হাজারের বেশি শিশু নিহত

আপডেট : ২৪ মে ২০২৫, ০৭:১৫ এএম

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল ভূখণ্ডে আকস্মিক হামলা চালায়। ওই হামলায় বারোশরও বেশি ইসরাইলি নিহত হয়। একই সঙ্গে ২৫০ ইসরায়েলিকে আটক করে গাজায় নিয়ে আসে হামাস সদস্যরা। একইদিন গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। টানা সাড়ে ১৯ মাসের এ হামলায় ৫৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ১৬ হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে। এর মধ্যে এক বছরের কম বয়সী রয়েছে ৯১৬ জন। এক থেকে পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে রয়েছে ৪ হাজার ৩৬৫ জন। ৬ থেকে ১২ বছরের মধ্যে রয়েছে ৬ হাজার ১০১ জন। আর নিহতদের মধ্যে ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে ৫ হাজার ১২৪ জন। এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিবিসি জানায়, গাজায় প্রথম দফায় ত্রাণ পৌঁছানোর তিন দিন পর ৯০ ট্রাক ত্রাণ জাতিসংঘের দলগুলোর কাছে হস্তান্তর করেছে ইসরায়েলি কর্র্তৃপক্ষ। সীমিত পরিসরে অবরোধ তুলে নিলেও, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তা মানবাধিকার সহয়তাকারীদের কাছে ছাড়েনি ইসরায়েলি সেনারা। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ত্রাণবাহী ৯৩টি ট্রাক প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছিল বিবিসি, আলজাজিরাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। এর মধ্যে ৯০ ট্রাক জাতিসংঘের স্বেচ্ছাসেবীরা ইসরায়েলের কাছ থেকে বুঝে পেয়েছে। বাকি তিনটির ব্যাপারে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এ ত্রাণের ট্রাকগুলো ছাড়াও আরও ১০৮টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলি কর্র্তৃপক্ষ অনুমোদিত একমাত্র পথটিতে নিরাপত্তার অভাবে গাজাবাসীর কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। গাজায় যে পরিমাণ ত্রাণ প্রয়োজন, তার তুলনায় এটি নগণ্য বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত দুদিনে অনাহারে আরও ২৯ জন মারা গেছে। যাদের বেশিরভাগই শিশু। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাজেদ আবু রমজান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে গাজার ২১ লাখ মানুষ চরম অনাহারের মুখে পড়বে, বাড়বে অনাহারে মৃত্যু। মৌলিক খাবারের ঘাটতি এবং আকাশছোঁয়া দামের কারণে পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে। জাতিসংঘ সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশনের এক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক মাসে পাঁচ লাখ মানুষ অনাহারের মুখে পড়তে পারে।

ইসরায়েলকে গাজার বাসিন্দাদের প্রতি মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানোম গেব্রিয়াসুস। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলের নিজেদের স্বার্থেই শান্তি প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। গত বৃহস্পতিবার ডব্লিউএইচওর বার্ষিক অধিবেশনে এক আবেগঘন বক্তৃতায় অশ্রু সংবরণ করে এসব কথা বলেন তেদ্রোস আধানোম। বক্তৃতায় ডব্লিউএইচও প্রধান বলেন, এ যুদ্ধ ইসরায়েলকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং এতে কোনো স্থায়ী সমাধান আসবে না। ডব্লিউএফপি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজার জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার টন খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ছয় হাজার ট্রাক ত্রাণ প্রস্তুত করে রেখেছে তারা। এ পরিমাণ ত্রাণ গাজায় প্রবেশ করানো সম্ভব হলে উপত্যকার বাসিন্দাদের দুই মাসের খাবার নিশ্চিত হবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত