আওয়ামী লীগ শাসনামলে পরিবেশ নিয়ে কথা বলার কারণে গ্রেপ্তার হওয়ার দাবি করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। তিনি বলেছেন, এখনও তার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চলছে।
শনিবার দুপুরে ঢাকার আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে ডিএনসিসিসহ ১৬টি সংগঠন আয়োজিত ‘ম্যানিফেস্টো টক: ইউথ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে গ্রেপ্তারের বিষয়ে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, আমরা যখন কাজ করেছি, তখন আমাদের স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, সচেতনতা তৈরি কথা বলা যাবে, কিন্তু জনবল নিয়ে কোনো কথা বলতে পারবেন না। জনবল নিয়ে কথা বললে আপনাকেই তুলে নেওয়া হবে। এবং তুলে নেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন সময়ে। আপনারা দেখেছেন, এখন হয়ত অনেক ক্যাম্পেইন আমার বিরুদ্ধে হয়, আপনারা জানেন, সেগুলো ওগুলোরই বাই প্রোডাক্ট।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি সিটি করপোরেশন ভেঙে দিলে প্রশাসক হিসেবে ঢাকা উত্তরে নিয়োগ পান মোহাম্মদ এজাজ। একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে তাকে অপসারণের দাবি নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই সোচ্চার নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদ।
এর আগে একজন প্রবাসী সাংবাদিক এমন অভিযোগ নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট করেন। দাবি করেন, নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরের নেতা এই এজাজ। আওয়ামী লীগ শাসনামলে তিনি এ কারণেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
এই অভিযোগের পর তোলপাড়ের মধ্যে প্রথম বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন এজাজ। তার অফিসের সামনে আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, হাসিনার সময়ে আমাদের যেভাবে ফ্রেমিং করা হয়েছে একই ধরনের ফ্রেমিং করে আমার অফিসের সামনে আন্দোলন হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতাও কামনা করে তিনি বলেন, জুলাইয়ের পর আমরা একটি ইতিবাচক পরিবর্তন করতে চাই। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো আমাদেরকে ডেকে হলেও তো নসিহত করবে যে, এভাবে করলে ভালো হয়।
গত ৫৪ বছরের সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃষ্টিতেও এবার রাজধানীতে জলাবদ্ধতা না হওয়ার দাবিও করেছেন ডিএনসিসি প্রশাসক। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে এবার হাসিনার নৌকা চলতে দেইনি।
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, শুক্রবার ঢাকায় ১৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যেটি গত ৫৪ বছরে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সকাল বেলায় যারা রাস্তায় বেরিয়েছেন, রাজপথে আপনারা কোনো জলাবদ্ধতা পাননি। ভেতরে পেয়েছেন, ভেতরে অনেক জায়গায় ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক নাই।
জলাধার, নদী ও খাল ভরাট করে শহর তৈরি করার কারণে ঢাকার পানি যাওয়ার জায়গা পাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন এজাজ। তিনি বলেন, এই শহর তৈরিই হয়েছে, গত ৪০ বছর, বিশেষত যখন ১৯৮৮ সালের বন্যা হয়, তখন শুষ্ক করার নাম দিয়ে জলাধার, নদী ভরাট করা হয়েছে। নদী ও খান ভরাট করে এই শহর তৈরি করা হয়েছে। তো বৃষ্টি হলে পানি যাবে কোথায়?
ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একশ বছরের পুরনো বলে মন্তব্য করে এজাজ বলেন, সেটা আমরা পরিবর্তন করতে গিয়ে যখন কমিউনিটিগুলোর সঙ্গে বসি, তারা রাজি। কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা আমাদের এই আবর্জনা সংগ্রহ করতে দেবে না। তারা এলাকায় এলাকায়, বাসায় গিয়ে গিয়ে বলছেন যে, ‘আবর্জনা সংগ্রহ হোক না হোক, আমাদের পাঁচশ টাকা করে দিতে হবে। না হলে আমরা ময়লা এনে বাড়ির সামনে ঢেলে দেব।’
রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের হাতবদল হয়েছে মন্তব্য করে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, সেটাকে আমরা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি।