শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

চাঁদাবাজি-তদবিরের অভিযোগ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ‘গণবিরোধী প্ল্যাটফর্ম’ আখ্যা দিয়ে ৩ নেতার পদত্যাগ

আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ০৯:৩৬ পিএম

নিজ দল থেকে পদত্যাগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈছাআ) বরিশাল জেলার মুখ্য সংগঠকসহ তিন নেতা। রবিবার রাত ৮টায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই পদত্যাগের ঘোষণা দেন তারা।

সংগঠনের বর্তমান কার্যক্রমকে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের প্রত্যাশিত রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক’ উল্লেখ করে পদত্যাগপত্রে তারা বৈছাআ-কে ‘গণবিরোধী প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। একইসঙ্গে বরিশাল জেলা ও মহানগরের অধিকাংশ নেতার বিরুদ্ধে অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন তারা।

পদত্যাগকারী নেতারা হলেন—বৈছাআ বরিশাল জেলার মুখ্য সংগঠক হাসিবুল ইসলাম তুরান, যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম আবিদ ও সদস্য তাহাসিন আহমেদ রাতুল।

সংবাদ সম্মেলনে তুরান বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার শক্তিকে রূপান্তর করে আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশপন্থী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আসা কিছু নেতা এ প্ল্যাটফর্মকে বিতর্কিত করে তোলে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আমার (তুরান) পরিচয়ে বৈছাআ জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মহসিন উদ্দিন চাঁদাবাজি এবং অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে। কথিত কিছু নেতাকর্মী প্রান্তিক জনগণের সঙ্গে না গিয়ে সরকারি দপ্তরে তদবির করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা দেশের মানুষকে সচেতন না করে পুরনো রাজনৈতিক ধারায় দখলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মামলাবাণিজ্যে লিপ্ত।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিষ্কার না রেখে একটি উদ্দেশ্যহীন রাজনৈতিক মদ তৈরি করা হয়েছে। সংগঠন রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত সদস্য গড়তে ব্যর্থ হয়েছে। নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকলেও তাদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে সংগঠনটি।’

তুরান আরও বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান সুযোগ থাকা রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ তৈরি। কিন্তু বৈছাআ সে পথে না গিয়ে ব্যক্তিস্বার্থে পরিচালিত একটি অপতৎপরতায় পরিণত হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি না করতেই আমরা পদত্যাগ করেছি।’

তিনি জানান, অতীতে একাধিকবার পদত্যাগপত্র জমা দিলেও সংগঠন তা গ্রহণ করেনি। বরং তার (তুরান) সামনেই পদত্যাগপত্র ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, যার প্রমাণ তার কাছে রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বৈছাআ বরিশাল জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মহসিন উদ্দিন বলেন, ‘মুখ্য সংগঠক তুরান নয়, বরং একজন স্থানীয় কর্মীর নাম ব্যবহার করা হয়েছিল। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় থেকে কৌশলগত কারণে ছদ্মনাম ব্যবহার করা হচ্ছে। পুলিশ কমিশনার তদন্ত করে দেখেছেন—চাঁদাবাজির অভিযোগ মিথ্যা।’

তিনি বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ অভিযোগ আনা হয়েছে।’

এদিকে সংগঠনের জেলা আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সোহাগ বলেন, ‘চাঁদাবাজির অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমরা কেউ তদবির করিনি, যদি কেউ গোপনে করে থাকে তবে তা ব্যক্তিগত ব্যাপার। তারা পদত্যাগ করবে বলে আমাদের কিছু জানায়নি। সংগঠনে অনিয়ম থাকলে তারা তা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ করতে পারত, কিন্তু সেটা না করে এখন বাহ্যিক অভিযোগ তুলে দল ত্যাগ করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত