রোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

তারেক–ইউনূস বৈঠক

মৌলিক সংস্কার ও বিচার হবে মুখ্য আলোচ্য, মনে করে এনসিপি

আপডেট : ১২ জুন ২০২৫, ০৯:০৩ এএম

লন্ডনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আসন্ন বৈঠককে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির অভিমত, ভোটের সময়সূচির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে মৌলিক কাঠামোগত সংস্কার এবং গত জুলাইয়ে সংঘটিত আন্দোলনে নিহতদের বিচারের প্রসঙ্গ।

চার দিনের সফরে লন্ডনে অবস্থান করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচন নিয়ে তীব্র বিতর্কের আবহে তাঁর সঙ্গে তারেক রহমানের আলোচিত এ বৈঠক রাজনৈতিক অঙ্গনে সম্ভাবনার নতুন দরজা খুলতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন বৈঠকের মধ্য দিয়ে নির্বাচন, সংস্কার ও জুলাই সনদ বিষয়ে সরকার ও বিএনপির দূরত্ব কমে আসতে পারে বলে ধারণা করছে অনেকেই।

গতকাল বুধবার এনসিপির তিন শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলাপে তাঁরা জানান, আলোচনায় অগ্রাধিকার পাবে রাষ্ট্রীয় সংস্কার, আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিচার এবং জুলাই সনদের রূপরেখা। তাঁদের মতে, এ বৈঠকে যদি কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না আসে, তাহলে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বেড়ে যেতে পারে।

গণ–অভ্যুত্থান থেকে জন্ম নেওয়া এনসিপি মনে করে, বিএনপি যদি সংস্কার ও বিচারের বিষয়গুলোতে অনুকূল অবস্থান গ্রহণ না করে, তাহলে জনগণের হতাশা রাস্তায় গড়াতে পারে। দলের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “জুলাইয়ের আন্দোলন কেবল ভোটের জন্য ছিল না। মানুষ একটি নতুন রাষ্ট্রকাঠামোর স্বপ্নে জীবন দিয়েছে। বিএনপি যদি শুধু ক্ষমতার প্রশ্নে মনোযোগ দেয়, তাহলে জনগণ অন্য পথ খুঁজে নেবে।”

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য এই বৈঠককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর ভাষায়, “এটাই সময়ের সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট ইভেন্ট” এবং “টার্নিং পয়েন্ট” হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।

তবে এনসিপি বিষয়টিকে এখনই চূড়ান্ত বলছে না। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “আলোচনার পর যেসব প্রতিক্রিয়া ও কার্যক্রম দেখা যাবে, সেটাই বলে দেবে এই বৈঠকের প্রকৃত ফলাফল।”

গত কয়েক মাসে নির্বাচনের সময় নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপি ও সরকারের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। এনসিপির নেতারা মনে করছেন, তারেক-ইউনূস বৈঠকে যদি ফলপ্রসূ আলোচনা হয়, তাহলে সেই দূরত্ব অনেকটাই কমে যেতে পারে। তবে দলটি চায় বিএনপি সংস্কার ও বিচারের প্রশ্নে সুস্পষ্ট ও জোরালো অবস্থান নিক।

আদীব বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে কাঠামোগত রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে, সেখানেই বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট নয়। আমরা আশা করি, এই বৈঠকে তারেক রহমান বৃহত্তর স্বার্থে নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা, নাগরিক মর্যাদা ও কাঠামোগত সংস্কারকে গুরুত্ব দেবেন।”

এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে, এই বৈঠকের ফলাফলের ভিত্তিতে নির্বাচনের সময় কিছুটা এগিয়ে আনা হতে পারে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বলেন, “এই বৈঠকের মাধ্যমে রাজনীতিতে নতুন হাওয়া বইবে।”

এনসিপির নেতা আদীবের মতে, আলোচনায় মূলত গুরুত্ব পাবে—কোন কোন সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য রয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে এবং অপরাধের বিচারে আইনি প্রক্রিয়া কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে—এই বিষয়গুলো।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত