প্রায় সোয়া ১১০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রাজবাড়ী জেলায় প্রায় ১২ লাখ মানুষের বসবাস। প্রতিদিনই মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের মধ্যে একটি বড় অংশই চক্ষু রোগী। কিন্তু জেলার কোনো সরকারি হাসপাতালে নেই চক্ষু চিকিৎসক। ফলে রোগীদের ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিকে। এতে অর্থের পাশাপাশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার মানুষের চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যাবিশিষ্ট রাজবাড়ী সদর হাসপাতালটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। এই হাসপাতালে দুজন চক্ষু চিকিৎসক ছিলেন। হাসপাতালটিতে প্রতি মাসে গড়ে ২০০টি চোখের বিভিন্ন ধরনের অপারেশন করা হতো। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকেই তারা দুজন একসঙ্গে বদলি হয়ে চলে যান। তারপর থেকেই পদ থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালটি চক্ষু চিকিৎসকবিহীন রয়েছে।
এদিকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আওতায় পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। পাঁচটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোনোটিতেই চক্ষু চিকিৎসক নেই।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের দ্বিতীয়তলায় চক্ষু কনসালট্যান্টের কক্ষে তালা ঝুলছে। হাপাতালের জরুরি বিভাগের পাশেই বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার। সেখানে রোগীরা চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য টিকিট চাচ্ছেন। কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে চোখের ডাক্তার নেই। রোগীরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। রাজবাড়ী পৌর এলাকার লক্ষ্মীকোল গ্রামের বাসিন্দা অলোকা রানী দাস চোখের সমস্যা নিয়ে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এলে তাকে কাউন্টার থেকে বলা হয় চোখের ডাক্তার নেই।
অলোকা বলেন, ‘আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। কিন্তু হাসপাতালে ডাক্তার নেই। এখন বাইরে কোনো বেসরকারি ক্লিনিক থেকে চোখ দেখাতে হবে। ক্লিনিকে একবার ডাক্তার দেখাতে শুধু ৮০০ টাকা ফি দিতে হয়। এখন আমি এত টাকা কই পাব।’
সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের বাসিন্দা মাজেদ মোল্লা বলেন, কাজ করার সময় আমার চোখে লোহা ঢুকে রক্ত জমে গিয়েছিল। প্রথমে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে যাই। সেখানে কোনো চিকিৎসক পাইনি। পরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চোখের চিকিৎসককে দেখাই। প্রথমবার চিকিৎসককে দেখাতেই আমাকে ৮০০ টাকা পরামর্শ ফি দিতে হয়েছে। ওষুধপত্র মিলিয়ে আমার প্রায় দের হাজার টাকা লেগেছে। এক সপ্তাহ পর আবারও আমাকে যেতে বলেছে। হাসপাতালে চিকিৎসক থাকলে আমাকে এত টাকা দিতে হতো না।
পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. এবাদত হোসেন বলেন, ‘কমপ্লেক্সে চক্ষু চিকিৎসকের পদটি শূন্য রয়েছে। চক্ষু রোগীদের জন্য কমপ্লেক্সে একটি “কমিউনিটি আই কর্নার” রয়েছে। সেখানে চক্ষু রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। প্রয়োজন হলে অনলাইনের মাধ্যমে এই সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।’
রাজবাড়ী লেখক-পাঠক কেন্দ্রের সভাপতি কবি নেহাল আহমেদ বলেন, রাজবাড়ী জেলা চিকিৎসায় একটি অনগ্রসর জেলা হিসেবে পরিচিত। এখানে কোনো ভালো হাসপাতাল নেই। যে হাসপাতাল আছে সেখানে কোনো জটিল রোগী গেলে তাৎক্ষণিক তাকে ফরিদপুরে রেফার্ড করা হয়। জেলার কোনো সরকারি হাসপাতালে চোখের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে কোনো চিকিৎসক নেই। এটি ভাবাও বিস্ময়কর। সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য কোথায় যাবে। কর্তৃপক্ষের বিষয়টি নজরে আনা দরকার।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) মো. জিয়াউল আহসান বলেন, হাসপাতালে প্রায় ১৮ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে চক্ষু চিকিৎসক নেই। এতে রোগীদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। হাসপাতালে চক্ষু চিকিৎসক খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন এস এম মাসুদ বলেন, জেলায় অনেক চিকিৎসকের পদই শূন্য রয়েছে। অন্যান্য চিকিৎসক থাকলেও চক্ষু চিকিৎসক একেবারেই নেই। এটি খুবই জরুরি বিষয়। আমরা চিকিৎসকের শূন্যপদ পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত হলে এই চিকিৎসক সংকট কেটে যাবে।