হাসনাইন আহমদ শিশুতোষ ছড়া, কবিতা, গল্প ও উপন্যাস সবখানেই তার উজ্জ্বল উপস্থিতি। তার লেখায় স্বকীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বর্তমান সময়ে যারা শিশুসাহিত্য নিয়ে কাজ করছেন, তাদেরই একজন তিনি। ভালো লেখা লেখার অদম্য আগ্রহ তার মধ্যে প্রবল। দীর্ঘ বাইশ-তেইশ বছরের অধিক সময় ধরে নীরবে নিভৃতে সাহিত্যচর্চা করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুসাহিত্য। তার লেখা বিভিন্ন মাসিক পত্রপত্রিকা থেকে শুরু করে সাপ্তাহিক ও জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
‘মেঘ পাখি ও প্রজাপতির ছড়া’ তার প্রথম শিশুতোষ ছড়ার বই। বইটিতে মোট বিশটি ছড়া স্থান পেয়েছে। ‘মেঘ পাখি ও প্রজাতির ছড়া’ বইয়ের কয়েকটি ছড়ার কিছু অংশ উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছি না। গ্রীষ্মতে ছড়াতে গ্রাম আর শহরের বাস্তব চিত্র ছড়াকার অসাধারণ নৈপুণ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন। যেমন, ... ‘কডূ কডূ গ্রীষ্মতে নেড়ে যায় কড়া/ টক্ টক্ রস্ রস্ মিষ্টিতে ভরা/ আম জাম থোকা থোকা, টক্ টক্ লিচু/ লাফ মেরে খাও পেড়ে, গাছ দেখে নিচু/ শহরের ছেলেদের এই সুখ নেই/ ওরা শুধু বাজারের কেনা ফলেতেই। বইয়ের প্রথম ছড়া হলো ‘ছুটি’। ছুটির আমেজ শিশু-কিশোরদের মনে কীভাবে ধরা দেয় তার একটি চিত্র তুলে ধরেছেন। যেমন,.... ‘আজকে আমার ছুটি/ সেই খুশিতে আনন্দে মন হেসেই কুটিকুটি/চোখ বুজে ফের ভাবি/ বাবার কাছে করব আজই/মুক্তি পাওয়ার দাবি/ ইটের পাঁজর ছেড়ে/ডাকছে শুনি বুনোপাতা/দু হাত নেড়ে নেড়ে।’
ছড়া নির্মাণে অবাক করা মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন ছড়াকার এই ছড়াটিতে। যা যেকোনো বোদ্ধা পাঠককে বিমোহিত করবে। এ ছাড়াও শিশু-কিশোররা আনন্দ পাবে এমন বেশ কিছু ছড়া এ বইটিতে স্থান পেয়েছে। যেমন, ...‘দাদির কাছে শুনছি বসে/পুরান দিনের গল্প/ এই জামানায় সবই নাকি/সেই তুলনায় অল্প। (পুরান দিনের গল্প)।
ছোটদের কল্পনার রাজ্য অনেক বড়। নিজের মতো করে কল্পনা করতে ভালোবাসে। কল্পনায় কত কিছু না ভাবে তারা। যেমন, ... ‘রঙধনুরা রঙ ধরে যে/কোথায় তাদের দেশ/ইচ্ছে করে তাদের খোঁজে/ চলতে নিরুদ্দেশ/ কোথায় তাদের ঘরবসতি/ কোথায় রঙের চিন/খুঁজে পেতাম সবই আমি/ হতাম যদি জিন।
(হতাম যদি)
যারা ছড়া লেখে বা লেখার ইচ্ছে আছে, তারা এই বইটি পড়লে উপকৃত হবে বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস। লেখায় নতুনত্ব, বৈচিত্র্য ও আধুনিকতা এসব ছড়ার বইতে থাকে না। ফলে নতুন লেখক বিভ্রান্ত হয়। ‘মেঘ পাখি ও প্রজাপতির ছড়া’ একটি আধুনিক ছড়ার বই। লেখক মেধাবী, পরিশ্রমী এবং প্রতিশ্রুতিশীল। যেমন,.... ‘নারকেলের ওই পাতার ফাঁকে/
চাঁদের নীরব হাসি/পিয়াল বনে আছড়ে পড়ে/জোছনা রাশি রাশি।’ ছড়াশিল্পী হাসনাইন আহমদ তাল-লয়-ছন্দ এবং অন্ত্যমিলের চমৎকার মেলবন্ধনে নির্মাণ করেছেন অসাধারণ সব ছড়া। ছোট-বড় সবাই বইটি পড়ে মুগ্ধ হবে। প্রখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ছোটদের সময় এই বইটি প্রকাশ করেছে। প্রচ্ছদ এঁকেছেন রজত। আর প্রতিটি ছড়ার সঙ্গে সংগতি রেখে অসাধারণ অলংকরণ করেছেন পার্বতী ঘোষ। বই এবং লেখক সম্পর্কে লিখেছেন বিখ্যাত ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিক আমিরুল ইসলাম। বইটির প্রথম প্রকাশ, অমর একুশে বইমেলা ২০২২। মূল্য ২০০ টাকা। বইটির ব্যাপক প্রচার প্রসার ও পাঠকপ্রিয়তা কামনা করি। সেই সঙ্গে ছড়াকার হাসনাইন আহমদের জন্য শুভকামনা।