বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত চাল বিতরণের অভিযোগ ফুলছড়িতে

আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, ১১:৪৪ এএম

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নে ভিজিডির আওতায় বিতরণ করা চালের মান নিয়ে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। সুবিধাভোগীদের দাবি, বিতরণকৃত চাল ছিল পচা, দুর্গন্ধযুক্ত এবং খাওয়ার অনুপযোগী। ফলে ক্ষুব্ধ উপকারভোগীরা চাল গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান এবং বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।

ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ইউনিয়নের পুরাতন ফুলছড়ি এলাকায়। সেখানে চাল বিতরণের সময় কয়েকজন উপকারভোগী চালের বস্তা খুলে দেখতে পান, চালে লালচে রঙ, পচা গন্ধ ও আর্দ্রতা রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তারা প্রতিবাদ জানিয়ে উপস্থিত ট্যাগ অফিসারের সহায়তায় গোডাউনের তালা লাগিয়ে বিতরণ বন্ধ করে দেন।

ফজলুপুর ইউনিয়নে ৩৬০ জন দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের জন্য ভিজিডির আওতায় মাসিক ৩০ কেজি করে চাল বরাদ্দ রয়েছে। উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ঈদে নির্ধারিত চাল উত্তোলন না করায় চলতি মাসে দুই মাসের বরাদ্দ একসঙ্গে উত্তোলন করে ইউনিয়ন পরিষদ।

ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা গুদাম কর্মকর্তা ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক। উপকারভোগীদের শান্ত করে তারা আশ্বাস দেন, বিতরণকৃত পচা চাল পরিবর্তন করে ভালো চাল দেওয়া হবে।

চাল দেখে ক্ষুব্ধ আয়নাল হোসেন বলেন, “এই চাল মানুষের তো নয়ই, পশুরও খাওয়ার উপযুক্ত না। যারা সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”

আরেক সুবিধাভোগী দুদু মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই চাল গরুও খাবে না। খেলে রোগ হবে। আমরা এটা নেব না।”

সখিনা বেগম বলেন, “চাল এতটাই খারাপ যে ভাত পাক করতে গেলে ট্যাঙ্গা ধরে যাবে।”

হান্নান প্রামানিকের ভাষ্য, “আমাকে পচা চাল ধরায় দিছে, আমি নিই নাই। এমন চাল গরু-ছাগল খাওয়ালেও অসুখ হবে।”

এ বিষয়ে ফজলুপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মুক্তার প্রামানিক বলেন, “সব চাল দেখার সুযোগ হয় না। গুদামের কর্মকর্তা মোরশেদ কয়েক বস্তা ভালো চাল দেখিয়ে পুরোনো, পচা চাল পাঠিয়েছেন। শুনেছি, জিআর ও কাবিটার পুরোনো চাল এক চালকলের মাধ্যমে সরকারের কাছে বিক্রি করে আসছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে চাল সরবরাহ চলছে।”

তবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. গোলাপ মোস্তফা বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলুন।”

খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) মো. মোরশেদের দাবি, “চরের মানুষ লাল চালের ভাত খেতে পছন্দ করেন। তাই সেসব মানুষের জন্য এই চাল রাখা হয়েছে। চাল ভালোই আছে, তোমরা ভুল ভাবছ।”

এদিকে, এ ঘটনার বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জগৎবন্ধু মণ্ডলের সরকারি নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া মেলেনি।

এমন ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা দ্রুত তদন্ত ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত