শিশুদের ওপর নৃশংসতার কারণে দ্বিতীয় বছরের মতো ইসরায়েলকে ‘কালোতালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত করেছে জাতিসংঘ। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই কালোতালিকাভুক্ত দেশগুলোর নাম প্রকাশ করে জাতিসংঘ বলেছে, ২০২৪ সালে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শিশুদের ওপর সহিংসতা ‘নজিরবিহীন মাত্রায়’ পৌঁছে গেছে। বিশ্বের যেসব দেশ সশস্ত্র সংঘাতে শিশুদের ওপর গুরুতর নির্যাতন চালিয়েছে তাদেরকে এই তালিকায় অন্তর্ভক্ত করে সংস্থাটি। তবে ইসরায়েলের জাতিসংঘ মিশন এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে বলা হয় শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরে। ইসরায়েলি বাহিনীই এসব ঘটনার জন্য দায়ী বলেও উল্লেখ করা হয় এই প্রতিবেদনে। গেলো প্রায় ২০ মাস ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
এছাড়া ‘চিলড্রেন ইন আর্মড কনফ্লিক্ট’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী শিশুদের ওপর সহিংসতা বেড়েছে ২৫ শতাংশ। এর মধ্যে রয়েছে হত্যা ও অঙ্গহানি, যৌন সহিংসতা, স্কুল ও হাসপাতালের ওপর হামলার ঘটনা। শুধুমাত্র অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও ইসরায়েলেই ২ হাজার ৯৫৯ শিশুর ওপর ৮ হাজার ৫৫৪টি গুরুতর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় সংগঠনটি। নির্যাতিত শিশুদের মধ্যে ২ হাজার ৯৪৪ জনই ফিলিস্তিনি শিশু ও ১৫ জন ইসরায়েলি শিশু।
জাতিসংঘ বলছে গাজায় চলমান সহিংসতায় ১ হাজার ২৫৯ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত ও প্রায় ১ হাজার শিশু আহত হয়েছে। যদিও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। জাতিসংঘ বলেছে, ইসরায়েলের অধিকৃত এলাকায় ২০২৪ সালে নিহত আরও ৪ হাজার ৪৭০ শিশুর ওপর নির্যাতনের তথ্য যাচাইয়ের কাজ চলছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে লেবাননের ওপর ইসরায়েলের চালানো হামলার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে গত বছর পাঁচ শতাধিক শিশু নিহত বা আহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ। এই প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডস এবং ইসলামিক জিহাদের আল-কুদস ব্রিগেডসকেও দ্বিতীয়বারের মতো কালোতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায় গত বছর গাজা ছাড়াও বেশকিছু দেশে শিশুদের ওপর বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে প্রায় ৪ হাজার, সোমালিয়ায় আড়াই হাজার, নাইজেরিয়ায় আড়াই হাজার এবং হাইতিতে প্রায় ২ হাজার ২০০ শিশু ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালে শতকরা হারে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা বেড়েছে লেবাননে এরপরের অবস্থানে আছে মোজাম্বিক, হাইতি, ইথিওপিয়ায় এবং ইউক্রেন।