
এ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক বিদেশি কর্মী কাজ করছে। নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি কর্মীর মধ্যে সমঝোতা থাকায় এদের অনেকে অবৈধভাবে বসবাস করলেও সরকারি খাতায় নাম উঠছে না। অনেকে আবার পর্যটন ভিসায় এসেও তথ্য গোপন করে কাজ করছে। এদের অনেকের বেতন আট দশ লাখ টাকার বেশি। অভিযোগ আছে, কর ফাঁকি দিতে বিদেশি কর্মীদের বেশিরভাগের বেতন ব্যাংকিং চ্যানেলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পাঠানো হচ্ছে। তবে হুন্ডিতে বিদেশে পরিশোধ করছে বেশি। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনেও বিদেশি কর্মীদের তথ্য গোপন করে অর্থ পাচার ও রাজস্ব ফাঁকির তথ্য উঠে এসেছে।
দেশে বৈধ-অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশি কর্মী ও তাদের নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠানের সন্ধানে জোরেসোরে কাজ শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিদেশি কর্মীদের নিয়ে ডাটা ব্যাংক হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিদেশি কর্মীদের প্রকৃত সংখ্যা ও বেতনের পরিমাণ জানতে এরই মধ্যে এনবিআরের কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক টাস্কফোর্স কাজ করছে। গোপন গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে বিনা নোটিশে টাস্কফোর্সের সদস্যরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বিদেশি কর্মীর বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে। টাস্কফোর্সের সদস্যরা অভিযানে দেখছে কত জন বিদেশি কর্মী, কত দিন থেকে, কত বেতনে কাজ করছে। এদের কাজে অনুমতি পত্র ও ভিসা আছে কিনা। বেতন ব্যাংকিং চ্যানেলে দেয়া হচ্ছে কিনা তা তাও খতিয়ে দেখছে।
বিদেশি কর্মী এবং নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হিসাব অনুযায়ী পাওনা রাজস্ব আদায়ে কঠোর হয়েছে এনবিআর কর্মকর্তারা। নিয়োগ দিয়েও বিদেশি কর্মীর তথ্য গোপন করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরী শেষে আরো বিস্তারিত তদন্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এনবিআরের ডেটা ব্যাংকে বিদেশি কর্মীর দেশ, কর্মরত প্রতিষ্ঠানের নাম, কাজের ধরন, আয় এবং পাওনা রাজস্ব, ভিসার ধরন ও মেয়াদ, কাজের অনুমতির মেয়াদসহ বিভিন্ন তথ্য রাখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিদেশি কর্মীর তথ্য গোপন করে আর বিদেশি কর্মীর তথ্য দিয়ে- এভাবে বিদেশি কর্মী নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান দুই ধরনের হিসেব রাখে। তদন্ত করতে আসলে বিদেশি কর্মীর তথ্য গোপন করে হিসেব উপস্থাপন করে থাকে। প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের বিদেশে প্রশিক্ষণ খাতে বা বিদেশে সেমিনার করতে বা অন্য কোন জরুরি খাতে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রকৃত খরচের চেয়ে বেশি পরিমাণ বিদেশে পাঠিয়েও অনেক প্রতিষ্ঠান বিদেশে কর্মীর বেতন দিয়ে থাকে। তবে হন্ডিতে বিদেশি কর্মীর বেতন বেশি পাঠানো হয়েছে।
সম্প্রতি এনবিআরের টাস্কফোর্সের সদস্যরা তৈরী পোশাকখাতের প্রতিষ্ঠান আহনাফ প্যাকেজিং লিমিটেডে বিনা নোটিশে উপস্থিত হয়ে কত জন বিদেশি কর্মী, কত বেতনে, কত দিন থেকে, কাজের অনুমতি নিয়ে কাজ করছে কিনা যাচাই করে দেখে। আহনাফ প্যাকেজিং কর্তৃপক্ষ মাত্র ৩ জন বিদেশি কর্মী কাজ করছে এবং এদের প্রতি জনের বেতন এক লাখ ৫০ হাজার টাকা করে এমন তথ্য জানায়। এনবিআর কর্মকর্তারা তদন্তে দেখে প্রতিষ্ঠানটিতে ১১ জন বিদেশি কর্মী এক বছরের চুক্তিতে কাজ করছে। এসব কর্মীদের এক জনের বেতন এক লাখ, তিন জনের বেতন এক লাখ ৫০ হাজার, পাঁচ জনের বেতন ২লাখ ৫০ হাজার এবং ২ জনের বেতন ৭ লাখ টাকা। সবচেয়ে বেশি বেতনের দুই জনের কাজের অনুমতি (ওয়ার্কপারমিট) নেই। জেরার মুখে আহনাফ প্যাকেজিং জানায়, যাদের হিসেব জানানো হয়নি এরা বিনা বেতনে পরামর্শ দিতে এসেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সমঝোতায় বিদেশি কর্মীদের প্রকৃত পাওনা বিদেশে হুন্ডিতে পাঠানো হয়েছে। এ অপকর্ম করায় সরকার একটি টাকাও কর পাইনি। বিস্তারিত তদন্ত এবং তথ্য প্রমাণ করা হচ্ছে।
জুতা-স্যান্ডেল উৎপাদনকারী দেশের আরেক প্রতিষ্ঠান অন্যান্য সু লিমিটেড পাঁচ জন বিদেশি কর্মী দুই বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন। টাস্কফোর্সকে জানানো হয়েছে দুই জন বিদেশি কর্মীর এক জন এক লাখ ১০ হাজার টাকা এবং আরেক জন এক লাখ ৭০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করছে। এদের আয়ের ওপর হিসেব কষে কর পরিশোধ করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের সদস্যরা প্রতিষ্ঠানটির নথিপত্র তল্লাশি করে দেখে যে পাঁচ জনের দুই জনের বেতন ঠিক থাকলেও বাকি তিন জনের বেতন তিন লাখ টাকা করে। কর্মীদের বেতন অন্য খাতের খরচ হিসেবে ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশে পরিশোধ করা হয়েছে। এভাবে অর্থপাচার ও কর ফাঁকি দেয়া হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, যাদের তথ্য এনবিআরকে জানানো হয়নি তারা বিনা বেতনে বিশেষজ্ঞ অতিথি হিসেবে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কিভাবে গতিশীল করা যায় মাঝে মাঝে তার কাজ দেখেন। কাজ শেষে তাদের শুভেচ্ছা হিসেবে কিছু উপহার দেয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, চলতি মাসে ২০টির বেশি নামীদামি প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি প্রতিষ্ঠানেই বিদেশি কর্মীদের ও তাদের আয়ের তথ্য গোপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ঠিক কত জন বিদেশি কর্মী কাজ করছে তার তথ্য নিয়েও রয়েছে ভিন্ন মত। এর আগে জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বাংলাদেশে কত বিদেশি নাগরিক কাজ করেন তার হিসেব জানিয়ে বলেছিলেন, এ দেশে ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন বিদেশি নাগরিক কাজ করেন, তাঁদের অর্ধেকই ভারতীয়। ভারতীয়দের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৩৮৬ জন এবং চীনা ১৩ হাজার ২৬৮ জন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) 'বাংলাদেশে বিদেশিদের কর্মসংস্থান : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়' শীর্ষক এক গবেষণায় উল্লেখ করেছে, বৈধ ও অবৈধ দুই ভাবেই বাংলাদেশে বসবাস করে বিদেশি কর্মীরা কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি এক বছর আট মাস সময়কালে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীদের সাক্ষাৎকার এবং আইনি নথি-নীতিমালা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য, গবেষণা প্রতিবেদন ও গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এ হিসেব দিয়েছে বলে দাবি করেছে টিআইবি’র গবেষণায় আরো উল্লেখ আছে, বৈধ ও অবৈধ মোট বিদেশি কর্মীর সংখ্যা কমপক্ষে আড়াই লাখ। বৈধ বিদেশি কর্মী প্রায় ৯০ হাজার। বাকিটা অবৈধ।
গত কয়েক করবর্ষে এনবিআরে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন প্রতি করবর্ষে গড়ে প্রায় ১৫ হাজার বিদেশি কর্মী। রিটার্নে দেয়া তথ্যানুসারে এদের বার্ষিক আয় প্রতি বছর গড়ে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বেশি। এতে মোট কর পাওয়া গিয়েছে প্রায় দুইশত ৭০ কোটি টাকা। তথ্য জানিয়ে-না জানিয়ে, বৈধ- অবৈধভাবে এক লাখ ৫০ হাজার বিদেশি নাগরিক এদেশে কাজ করতে পারে এমন হিসেব সামনে রেখে বিদেশি কর্মীর সন্ধানে নেমেছে এনবিআর।
এনবিআর সদস্য মইনুল খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এনবিআর বিদেশি কর্মীর তথ্য হাল নগাদে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন সময়ে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধভাবে লক্ষাধিক বিদেশি কর্মী কাজ করছে। এদের অনেকের বেতন এক লাখ টাকা থেকে দশ লাখ টাকা বা তারও বেশি বলে জানা যায়। এসব তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এনবিআরের সক্ষমতা যত দ্রুত বাড়ছে বিদেশি কর্মীদের চিহ্নিত করা তত সহজ হচ্ছে। এনবিআরের সক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়েছে এটা আশার কথা।
পর্যটন করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর গড়ে ৮ লাখ থেকে ১২ লাখ পর্যটক ভিসা নিয়ে দেশে আসে। খোঁজ নিয়ে জান যায়, পর্যটক ভিসায় কাজ করা নিষিদ্ধ হলেও এই ভিসায় বিদেশিরা অবৈধভাবে দেশের বিভিন্ন খাতে কাজ করছে। পর্যটকের অন্তত ৫০ শতাংশ ভিসা কাজের উদ্দেশ্যে ব্যবহার হয়। এসব ভিসার সর্বোচ্চ মেয়াদ ৩ মাস হওয়ায় তারা তিন মাস পরপর দেশে গিয়ে আবার ভিসা নিয়ে ফিরে আসে।
এ হিসেবে পর্যটক ভিসায় প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার বিদেশি কাজ করেন। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের হিসাবে কর্মোপযোগী ভিসার সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। আর বিডা, বেপজা ও এনজিও ব্যুরো- তিন সংস্থার দেওয়া কর্মানুমতির সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। সরকারি প্রকল্পে কর্মরত বিদেশিদের ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ আছে। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে যারা কাজ করেন তাদের অনেকেই ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া কাজ করছেন। তারাও সঠিক বেতন কত সেটা জানায় না।
টিআইবি’র গবেষণায় হিসেব কষে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশি কর্মীদের উপার্জিত ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এক বছরে বিদেশে পাঠানো হয়। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি।
কোন দেশ থেকে বেশি আসছেঃ
প্রায় ৪৪টি দেশ থেকে আসা বিদেশিরা বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে কর্মরত আছে। সবচেয়ে বেশি ভারতের। এছাড়া চীন, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, নরওয়ে ও নাইজেরিয়াসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও কাজ করছে।
বিশেষজ্ঞদের পরার্মশঃ
জার্মানিতে কর্মরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি কর্মীরা এবং নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একজোট হয়ে তথ্য গোপন করে অর্থপাচার করছে এবং রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এক সময়ে বড় মাপের প্রতিষ্ঠান বিদেশি কর্মী নিয়োগ দিলেও এক মাঝারি মাপের প্রতিষ্ঠানও নিয়োগ দিচ্ছে। তাই বিদেশি কর্মীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
এসব প্রতিষ্ঠান ধরা পড়লে অনেক সময় সমাজের প্রভাবশালীদের দিয়ে তদবির করে বা তদন্তকারিদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে পার পেয়ে যায়। দেশের অর্থ দেশে রাখতে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারলে এ ধরনের অপকর্ম কমে যেত।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার, বিদেশি কর্মী এবং তাদের নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠান তিন পক্ষকেই স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। ওয়ার্ক পারমিট না থাকলেও কাজ দেয়া যাবে না। বিদেশিরা আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে বা মিথ্যা তথ্য দিলে ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করতে হবে। একই ব্যক্তিকে তিন মাস এবং একই বছরে দুই বারের বেশি পর্যটন ভিসা দেয়া যাবে না। বিদেশি কর্মীদের তথ্য সংরক্ষণকারি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আমরা গত দুই-তিন অর্থবছরে বাজেটে অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ দিয়েছিলাম। বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার সুযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু পাচার করা অর্থ কেউ ফেরত পাঠায়নি। কোনো টাকাই বৈধ করা হয়নি। এর মানে দেশে কোনো অপ্রদর্শিত টাকা নেই। তাই এবারের বাজেটে এনিয়ে কোনো আলোচনা রাখা হয়নি। শুক্রবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কখনো লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হয়নি, এবারও ব্যর্থ হবো না। মানুষের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে, সেই দায়বদ্ধতা নিয়েই কাজ করছি আমরা।
মুস্তফা কামাল বলেন, গত বছরের বাজেটে বলেছিলাম, কেউ যদি অপ্রত্যাশিত টাকা বা পাচার করা টাকা দেশে নিয়ে আসে, তাহলে সেই টাকার কোনো কর দিতে হবে না। গত বাজেটে এ সুযোগ দেওয়ার পরও এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রত্যাশিত টাকা বাংলাদেশে আসেনি। তাই এবারের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়নি।
গত অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, কেউ যদি বিদেশ থেকে অর্থ আনেন, তাহলে ৭ শতাংশ কর দিলেই হবে। আর বিদেশে থাকা স্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনলে ওই সম্পদের মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ এবং বিদেশে থাকা অস্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনলে এর ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। গত বছরের ১ জুলাই থেকে চলতি মাসের ৩০ জুন পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছরের জন্য এ সুবিধা বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছিল।
বাজেট আইএমএফের শর্তের প্রতিপালন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আর্থিক খাতে সুশাসন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। আইএমএফের পরামর্শ আছে সেটা আমরা পুরোপুরি দেখি না। তাদের সার্বিক পরামর্শ যা আছে, যা তারা বলে, সেখান থেকে যেটুকু গ্রহণ করা উচিত বলে আমরা মনে করি সেটুকু আমরা গ্রহণ করব, বাকিটা আমরা নিজেদের মত করে নেব। সেখানে তাদের কোনো আপত্তি নাই।
আইএমএফের ঋণ নেয়াকে নেতিবাচক হিসেবে না দেখে ইতিবাচকভাবে দেখার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে শুধু আইএমএফ না, সবাই দেখে ব্যালেন্স শিট ঠিক আছে কি না, রেভিনিউ অ্যাকাউন্ট ঠিক আছে কি না, ট্রায়াল ব্যালান্স ঠিক আছে কি না, আয়-ব্যয়ের পার্থক্য ঠিক আছে কি না। আইএমএফের সঙ্গে যারা কাজ করে, আমি মনে করি এটা ভালো দিক এজন্য যে, তারা শুধু অর্থ দিয়ে মানে ঋণ দিয়ে সাহায্য করে না, পাশাপাশি কিছু প্রকল্পের পরামর্শও দেয়। সেগুলো কীভাবে কম সময়ে বাস্তবায়ন করা যাবে, এগুলোও তারা পরামর্শ দেয়। তাই আমি মনে করি, এসব থেকে শেখার অনেক কিছু থাকে এবং আমরা সমৃদ্ধ হই।
মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা আইএমএফের কাছ থেকে যে ঋণ নিয়েছি, তা আমাদের দেড় মাসের প্রবাসী আয়ের সমান। এটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
এ সময় আইএমএফ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, বৈশ্বিক সমস্যার কারণে আমরা কিছু সমস্যার মধ্যে যাচ্ছি। আইএমএফের কাছে যখন কোনো দেশ ঋণ চায় তখন তারা তাদের ম্যাক্রো ম্যানেজমেন্টকে মূল্যায়ণ করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এসে তারা এটা এত আপডেট হিসেবে পেয়েছে, এটা দেখেই তারা খুব কম সময়ের মধ্যেই ঋণ অনুমোদন করেছে।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, বাংলাদেশের সামষ্টিক ব্যবস্থাপনা খুব ভালোভাবে চলছে। তবে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, থাকতেই পারে। আইএমএফের ইমপ্রেশনটা হলো বাংলাদেশের সামষ্টিক ব্যবস্থাপনা ভালো আছে। কিছু ভর্তুকি যৌক্তিকভাবে দিচ্ছি। ১৯৯৬ সালে কৃষিতে ভর্তুকি দেয়া শুরু হয়েছিল।
এনবিআরের বিশাল রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আমরা যখন ক্ষমতা গ্রহণ করি তখন রাজস্ব আদায় ছিল ৫৯ হাজার কোটি টাকা। এ বছর তা আদায় হয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। প্রায় তিন লাখ কোটিতে রাজস্ব আদায় করা আমাদের অনেক বড় সাফল্য। আমরা এবারের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করতে পারব।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এবারের অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এ বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।
বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানতে দেশ রূপান্তর কথা বলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে।
রাজধানীর কাঁঠালবাগান এলাকার বাসিন্দা আল আমিন বলেন, করোনা পরবর্তী সময় থেকে মধ্যবিত্তদের জীবন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিয়ে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো হয়েছে। গতকাল যে বাজেট উপস্থাপন করলেন মন্ত্রী সেখানে তো মধ্যবিত্তদের জন্য কিছু নেই। বাজেট ঘোষণার পর এখন দেখা যাক বাজারে কি পরিমাণ জিনিসপত্রের দাম বাড়ে।
মিরপুরের বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস লাকি বলেন, কাল টিভিতে দেখলাম সাবান ও ফেসওয়াশে কর বাড়ানো হয়েছে। তাহলে ধরে নিচ্ছি বাজারে ইতিমধ্যে দাম বাড়ানো হয়ে গেছে। সবকিছুর ই নাকি দাম বাড়ছে তাহলে কমছে টা কি?
নিয়ম অনুসারে জুন মাসে জাতীয় বাজেট হয়, অনেকেরই তা জানা। তবে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের বাজেট নিয়ে তেমন বিশেষ কোনো কৌতূহল দেখা গেল না। রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকার চা দোকানি রমজান, ফুটপাতে খুচরা মোবাইল সামগ্রী বিক্রেতা সালাউদ্দীন, নির্মাণ শ্রমিক দেলোয়ার জানান, বাজেট সম্পর্কে তাদের কোন আগ্রহ নেই। বাজেট কবে হয়েছে সে খবর ও তারা জানেন না। তারা মনে করেন, বাজেট হচ্ছে শিক্ষিত আর টাকাওয়ালা মানুষের বিষয়।
নির্মাণ শ্রমিক সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকার কীভাবে বাজেট করে, আমি এতকিছু বুঝি না। আমি শুধু বুঝি আমার সংসার চলে না। দিনদিন দুমুঠো খাবার জোগানো কঠিন থেকে কঠিন হচ্ছে।
তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। কিছু কিছু মানুষ আছেন, যারা বাজেট নিয়ে ভাবেন । তাদের একজন রাহেলা আক্তার। তিনি জানান 'আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জীবনে প্লাস্টিক সামগ্রী খুব গুরুত্বপূর্ণ। দাম বেশি হওয়ার কারণে ছেলে মেয়েদের কাঠের টেবিলের পরিবর্তে প্লাস্টিকের টেবিল কিনে দিতাম। এখন প্লাস্টিকের দাম ও বেড়ে গেল। তা ছাড়া সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস হিসেবে প্লাস্টিক সামগ্রীর ওপর কর বৃদ্ধি মোটেও ঠিক হয়নি'।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কার্তিক কুমার দেব বলেন, জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতির ফলে বারবার কাটছাঁট করেও আয়-ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারছি না। বাজেটের পরে নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে দাম বাড়ছে। ফলে দুশ্চিন্তায় আছি। ভাবছি গ্রামে চলে যাব,সেখানে গিয়ে শাকসবজি খেয়ে কোনোমতে বেঁচে থাকার চেষ্টা করব।
সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমার মনে হয় গরিব জনসাধারণের যে ধরনের প্রয়োজনীয়তা এবং চাহিদা বর্তমানে চলমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষিতে আছে মূল্যস্ফিতির চাপ থেকে শুরু করে,জীবনযাত্রার মানের অবনমন সবকিছু মিলিয়ে আমার কাছে মনে হয় না,এই বাজেট গরিবদের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে যথোপযুক্ত হয়েছে।
সামগ্রিক বাজেট নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এত বড় একটা বাজেট দেওয়া হয়েছে সেখানে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু না কিছু তো থাকবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট হয়েছে কি না, প্রত্যাশার তুলনায় যথোপযুক্ত কি না সেসবের প্রেক্ষিতে বিবেচনা করতে হবে। এবার একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মূল্যস্ফিতি। যার ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ওপর একটা বড় ধরনের চাপ পরেছে। যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত তাদের ওপরও মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে।
তিনি বলেন, ন্যূনতম কর সীমার ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে, এতে কিছুটা স্বস্তি মিলবে। কিন্ত এসব মানুষের আবার বিভিন্ন সেবা গ্রহণের জন্য টিআইএন/টিন নিতে হয়, সে ক্ষেত্রে কর আয় যোগ্য না হলেও কিন্ত তাদের ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে। এর ফলে একটা প্রভাব পরবে। মূল্যস্ফিতি কিছুটা কমলেও, মূল্যস্তর যেখানে গিয়েছে সেটার একটা অভিঘাত পড়বে।
সিপিডির এ ফেলো মনে করেন, সামাজিক সুরক্ষা খাতে জিডিপি ও বাজেটের তুলনায় বরাদ্দ কিছুটা কমে গেছে। টাকার অঙ্কে কিছুটা বাড়লেও শতকরা হিসাবে কিন্ত কিছুটা কমেছে। সামাজিক সুরক্ষা খাতে আরও ব্যয় বৃদ্ধি করলে সাধারণ মানুষের উপকারে আসত।
গত মে মাসে দেশে ১ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন রেমিট্যান্স এসেছে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ কম।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীরা মে মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে পাঠিয়েছেন ১.৬৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ কম। এর আগে গত এপ্রিলেও আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ আয় কম এসেছিল।
এ বিষয়ে ব্যাংকাররা বলছেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা হুন্ডিতে পাঠানো ডলারের দাম বেশি পাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে বেশি পছন্দ করেন। এ কারণই কমছে আনুষ্ঠানিক মাধ্যমে ডলার আসা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১.৬৮ বিলিয়ন ডলার। গত মার্চে ২.০২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স বাংলাদেশে আসে, যা ছিল ফেব্রুয়ারির আয়ের চেয়ে ৪৬ কোটি ডলার বেশি। ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১.৫৬ বিলিয়ন ডলার। অপরদিকে জানুয়ারিতে ১.৯৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯.৪১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৯.১৯ বিলিয়ন ডলার।
বৃহস্পতিবার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৯ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময় ছিল ৪২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ অনুযায়ী তৈরি করা হয়নি।
তিনি বলেন,আমি স্পষ্টভাবে বলতে পারি, তাদের পরামর্শ মোতাবেক আমরা বাজেট তৈরি করিনি। তাদের ওভার অল যে পরামর্শ আছে সেখান থেকে যেটুকু গ্রহণ করা যায়, আমরা মনি করি তা গ্রহণ করা উচিত সেটা গ্রহণ করব।
শুক্রবার (০২ জুন) বিকেল ৩টার দিকে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আইএমএফ শুধুমাত্র অর্থ দিয়েই সাহায্য করে না। পাশাপাশি তারা কিছু প্রজেক্টের পরামর্শও দেয়।
তিনি বলেন, আমরা যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব ভার গ্রহণ করি, সেসময় প্রথম বছর রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সেখান থেকে আমরা এটা ২ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করেছি। সুতরাং আমি মনে করি, আমাদের যে প্রজেকশনগুলো আছে তা পূরণ করতে পারব।
২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সময় বাজেটে আমি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে পারব আমি সবগুলো পূরণ করেছি। আমি বলেছিলাম ২ কোটি মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করব।
মুস্তফা কামাল বলেন, কর্মসংস্থানের জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করি। এমনকি, 'মেইড ইন বাংলাদেশ' কনসেপ্টের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ দেশে যা তৈরি হবে তা আমাদের প্রয়োজন মেটাবে। কর্মসংস্থান তৈরি করবে।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাশিয়া থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টন এমওপি সার আসবে। এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও রাশিয়ার স্টেট করপোরেশন পোডিনটর্গ এর মধ্যে এ চুক্তি সই হয়েছে।
চুক্তিতে বিএডিসির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ ও পোডিনটর্গের মহাপরিচালক আন্দ্রেই সের্গেইভিচ স্বাক্ষর করেন। এ সময় কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, বিএডিসির সদস্য পরিচালক আব্দুস সামাদ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান বদিউল আলম উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এম ওয়াসিম রানার (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন তার বন্ধুরা। শুক্রবার (০২ জুন) রাত সাড়ে ১২টার দিকে চানখারপুলের একটি বাসায় তার বন্ধুরা তাকে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।
অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
রানার বন্ধু ইমরান হোসেন বাবু জানান, 'রানা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায়। কয়েক দিন যাবৎ রানার খু্ব মন খারাপ ছিল। একাকী থাকতে চাইত। চুপচাপ থাকত। তবে কী চিন্তা করত সে ব্যাপারে কিছু বলত না। তাই আমি তাকে বলেছিলাম- বন্ধু, তুমি কিছুদিনের জন্য কক্সবাজার ঘুরে আস।'
ঘটনার পরপরই রানার স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে রাত দেড়টার সময় সানজিদা নামে এক মেয়েকে আহাজারি করতে দেখা যায়। সানজিদা আক্তার (জান্নাতি) কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
সানজিদা আক্তারের প্রতিবেশী মাইদুল ইসলাম জানান, 'সানজিদা আপুকে আমরা জান্নাতি আপু বলে ডাকি। রানা ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে অনেকদিন আগে। রাজনৈতিক কারণে বিষয়টি জানাজানি হয়নি। জান্নাতি আপু ডেমরা রূপগঞ্জের তারাবো এলাকায় একটি বাসায় থাকতেন।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক সহসভাপতি বলেন, 'আমরা জানতাম, সানজিদার সঙ্গে প্রেম ছিল। বিয়ে হয়েছিল কি-না তা সঠিক জানি না।' মৃত্যুর কারণ যা-ই হোক, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উন্মোচন করে বিচারের দাবি জানান তিনি।
রানার মৃত্যুর খবরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং তারা শোক জানান। আজ (০৩ জুন) শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় কবি নজরুল সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রকাশিত গেজেটে কয়েকটি আসনে পরিবর্তন এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত গেজেট শনিবার (৩ জুন)বিজি প্রেসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১-এর ধারা ৬-এর উপধারা (৩)-এর অধীনে সংসদের পুনর্নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকার প্রাথমিক তালিকা গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয় এবং ওই বিজ্ঞপ্তির অনুচ্ছেদ ৩-এর অধীন পুনর্নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকার বিষয়ে দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত আহ্বান করা হয়।
আরও বলা হয়, পরে নির্ধারিত সময়সূচি মোতাবেক প্রাপ্ত দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামতের ওপর কমিশন কর্তৃক প্রকাশ্য শুনানি গ্রহণ করা হয়। নির্বাচন কমিশন উক্ত আইনের ধারা ৬-এর উপধারা (৪) অনুযায়ী দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত পর্যালোচনা করে প্রাথমিক তালিকায় প্রকাশিত নির্বাচনী এলাকার প্রয়োজনীয় সংশোধন করে সংযুক্ত তপশিল মোতাবেক জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করল।
চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চাপ চাপ রক্ত, ছেঁড়া জামাকাপড়, খাবার, ব্যাগপত্র, রক্তমাখা দেহ। এসবের মাঝেই ভাঙা লাইনের উপর পাওয়া গেলো ছোপ ছোপ রক্তমাখা একটি কবিতার খাতা।
খাতায় লেখা বিভিন্ন রকমের ভালোবাসার কবিতা, মাঝে মাঝে আবার নকশাও আঁকা। হাতে নিয়ে পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল,
‘‘অল্প অল্প মেঘ থেকে হালকা হালকা বৃষ্টি হয়, ছোট্ট ছোট্ট গল্প থেকে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়....’’
পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল আরও একটি কবিতা। তার শুরুতে লেখা,
‘ভালোবাসা এই মন তোকে চায় সারাক্ষণ,
আছিস তুই মনের মাঝে
পাশে থাকিস সকাল সাঁঝে।
কী করে তোকে ভুলবে এই মন,
তুই যে আমার জীবন...’
কবিতাটি লেখক কে, কার জন্য এই কবিতা লিখা, তা জানার উপায় নেই। সম্ভবত, কবিতার খাতার মালিক দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটিতেই ছিলেন। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে, সেই কবিতার খাতা ছিটকে এসে পড়েছে ভাঙা লাইনে।
কবিতার খাতার মালিক সুস্থ, আহত না মৃত, তাও জানা সম্ভব হয়নি। যিনি লিখেছেন, তিনি পুরুষ না মহিলা তা-ও জানা সম্ভব হয়নি। তবে লেখা পড়ে বোঝা যায়, কবিতাটি প্রিয় কারও উদ্দেশে লেখা। যাঁর উদ্দেশে এই কবিতা লেখা, এই কবিতার খাতা কি তাঁর কাছেও কোনও দিন পৌঁছাবে! তাও জানার উপায় নেই।
ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে এই কবিতার খাতা হাতে পায় আনন্দবাজারের প্রতিনিধি। এভাবেই এক প্রতিবেদনে বর্ণনা তুলে ধরে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির তথ্যমতে, শনিবার ভোর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩৩। আহত ৯০০ জনের বেশি। ভেতরে এখনও আটকে আছে অনেক মানুষ।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।