
গত ৩ নভেম্বর ইউল্যাবের মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ, রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ ইউল্যাবের গবেষণা ভবনে উন্নয়নের জন্য যোগাযোগ ও পেশাগত দক্ষতা শীর্ষক একটি আলোচনাসভা আয়োজন করে। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন ইউল্যাবের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও উন্নয়নকর্মী আয়েশা খানম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ইউল্যাবের মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. জুড উইলিয়াম হেনিলো শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, 'পেশাগত দক্ষতা বিষয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই বর্তমান শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি শিখতে পারে।'
পরবর্তীতে আয়েশা খানম এবং ইউল্যাবের মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন আলোচনাপর্ব শুরু করেন। আয়েশা খানম কিছু অনুপ্রেরণামূলক গল্পের মধ্য দিয়ে তার উন্নয়নকর্মী হয়ে ওঠার পেছনের গল্পগুলো তুলে ধরেন। এর পাশাপাশি তিনি শিক্ষার্থীদের সামনে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোতে উন্নয়নের জন্য যোগাযোগ বিদ্যার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
পেশাগত সম্ভাবনার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নোত্তরের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।
মাল্টি পারপাস সিমেন্টের মোড়ক উন্মোচন করেন হাইডেলবার্গ সিমেন্ট এর সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ডিরেক্টর সায়েফ নাসির এবং ডিভিশনাল সেলস হেড মীর শামসুদ্দিন আহমেদ।
জার্মান বহুজাতিক সিমেন্ট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হাইডেলবার্গ সিমেন্ট সম্প্রতি চট্টগ্রামে তাদের স্বনামধন্য ব্র্যান্ড রুবি সিমেন্ট-এর নতুন একটি ক্যাটাগরি ‘মাল্টি পারপাস সিমেন্ট’ বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে। এখন থেকে অর্ডিনারি পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট (ওপিসি) ও পোর্টল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্টের (পিসিসি) পাশাপাশি তাদের এই মাল্টি পারপাস সিমেন্ট (এমপিসি) বাজারে পাওয়া যাবে।
মাল্টি পারপাস সিমেন্ট মূলত সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও বিশ্বমানের কাঁচামাল ব্যবহার করে প্রস্তুতকৃত একটি কার্যকরী সিমেন্ট যা স্থাপনার ফাউন্ডেশন, ঢালাই, বিম, কলাম, প্লাস্টার ইত্যাদি সব কাজে ব্যবহার করা যায়। মাল্টি পারপাস সিমেন্টের স্ট্রেন্থ ৪২.৫ এমপিএ থেকে ৬২.৫ এমপিএ পর্যন্ত হওয়ার কারণে এটি সার্বিকভাবে পিসিসি সিমেন্টের সমতুল্য এবং এটি কংক্রিটকে দীর্ঘ মেয়াদে পিসিসি থেকে অধিক শক্তি প্রদানে সক্ষম।
চট্টগ্রামের পেনিনসুলা হোটেলে আয়োজিত রুবি মাল্টি পারপাস সিমেন্টের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাইডেলবার্গ সিমেন্টের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ডিরেক্টর সায়েফ নাসির, ডিভিশনাল সেলস হেড মীর শামসুদ্দিন আহমেদ, প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ডিলার ও রিটেইলারগণ।
সায়েফ নাসির বলেন, রুবি সিমেন্ট কোয়ালিটির জন্য সর্বদাই মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সুপরিচিত একটি নাম। দীর্ঘ ৫০ ধরে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবহারকারীদের একটি আস্থার নাম হিসেবে রয়েছে রুবি সিমেন্ট। বিশ্বব্যাপী নেতৃস্থানীয় নির্মাণসামগ্রী প্রস্তুতকারক হিসেবে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশে সর্বপ্রথম পিসিসি সিমেন্টের প্রচলন শুরু করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং মানুষের আস্থা অর্জনে সফল হয়, সেই ধারাবাহিকতায় এবার নতুন প্রজন্মের এই মাল্টি পারপাস সিমেন্টের প্রচলনের মাধ্যমে এই অবস্থান হবে আরও সুদৃঢ়। রুবি সিমেন্ট-এর সঙ্গে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য এবং ব্যবহারকারীদের বিশ্বাস-এর সম্পর্ক রয়েছে দীর্ঘদিনের। রুবি মাল্টি পারপাস সিমেন্টের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি স্থাপনার যেকোনো স্থানে ব্যবহারযোগ্য এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণের শক্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ইউনাইটেড হেলথকেয়ারের সহপ্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড হসপিটাল, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, এম এম রশিদ হসপিটাল এবং মেডিক্সে বিশ্ব ক্যানসার দিবস উদযাপন করেছে গতকাল ৪ ফেব্রুয়ারি।
এ উপলক্ষে ইউনাইটেড হেলথকেয়ার ফ্রি ক্যানসার স্ক্রিনিংসহ পুরো মাস জুড়ে নানামুখী কর্মসূচি পালন করেছে। ক্যানসার স্ক্রিনিং সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং শুরুতেই ক্যানসার শনাক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করবে।
উল্লেখ্য, শুরুতেই ক্যানসার শনাক্ত এবং সঠিক চিকিৎসায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্যানসার নিরাময় সম্ভব। এই উদ্যোগটি সারা দেশের মানুষকে উচ্চমানের স্বাস্থ্যসেবা এবং সহায়তা প্রদানের জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালের প্রতিশ্রুতির অংশ।
মাসব্যাপী আয়োজনের অংশ হিসেবে গুলশানের ইউনাইটেড হসপিটালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নেতৃত্বে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ দিন ক্যানসার স্ক্রিনিং অনুষ্ঠিত হবে।
জামালপুরের এম এ রশিদ হসপিটাল গতকাল দিনব্যাপী ক্যানসার স্ক্রিনিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হসপিটালে আগামীকাল সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এবং আগামী শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ধানমন্ডির মেডিক্সে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ক্যানসার স্ক্রিনিং অনুষ্ঠিত হবে। ফ্রি ক্যানসার স্ক্রিনিং প্রোগ্রামে যে কেউ ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস ও শারীরিক লক্ষণাদি পর্যালোচনা করে ক্যানসারের উপস্থিতি কিংবা সম্ভাবনা যাচাই করতে পারবেন। প্রয়োজনে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারবেন।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ইউআইইউ) স্প্রিং ২০২৩ এর আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে নতুন ভর্তি হওয়া নবাগত শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠান গতকাল (৩ ফেব্রুয়ারি) শুক্রবার বিকেল ৩টায় ইউআইইউ খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।
স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকস, স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং স্কুল অব হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সের সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন।
নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাননীয় উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া।
অনুষ্ঠানে ইউআইইউ’র উপর একটি প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন ইউআইইউ সিএসই বিভাগের অধ্যাপক এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড কো-অপারেশন সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. এ. কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তৃতায় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মনোযোগী হওয়া এবং নিজেকে সফল ও বিশ্বমানের দক্ষ মানব সম্পদ হিসাবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে নানামুখী দক্ষতা অর্জনের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডা. জুলফিকার রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক নিয়মাবলি তুলে ধরেন। অন্যান্যদের মধ্যে ইউআইইউ’র দুজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং দুজন নবাগত শিক্ষার্থী বক্তব্য প্রদান করেন।
নবীনবরণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এ.এস.এম সালাহউদ্দিন, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও পরিচালকসহ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও অবিভাবকবৃন্দ।
অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও বিকাশ পেমেন্টে ১০% ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক পাচ্ছেন বইপ্রেমীরা। মেলা চলাকালীন একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক উপভোগ করতে পারবেন। একইসাথে, ৫০০ টাকা বা তার বেশি বিকাশ পেমেন্ট করলেই রয়েছে আরো ৫০ টাকার কুপন, যা মেলা চলাকালীন সময়ে উপভোগ করতে পারবেন গ্রাহক।
বইমেলার অধিকাংশ স্টলেই বিকাশ অ্যাপে কিউআর কোড স্ক্যান অথবা *২৪৭# ডায়াল করে পেমেন্ট করলেই ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক পাবেন গ্রাহক। প্রকাশক ও বিক্রেতাদের দেয়া ছাড়ের পাশাপাশি বিকাশ পেমেন্টে পাওয়া এই ক্যাশব্যাক আরো বেশী বই কেনার সুযোগ করে দেবে পাঠকদের। অফারগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে এই লিংকে- https://www.bkash.com/campaign/book-fair-offer।
উল্লেখ্য, বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলা আয়োজনে এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সহযোগিতা করছে বিকাশ। শুধু তাই নয়, গত তিনটি মেলার ধারাবাহিকতায় এবারো মেলায় আসা দর্শনার্থী-লেখক-প্রকাশকদের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করবে বিকাশ। পাশাপাশি, বিকাশের পক্ষ থেকে দেয়া বই যোগ করে তা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার পাঠকদের মাঝে বিতরণ করবে বিকাশ। বইমেলায় বই সংগ্রহের এই কার্যক্রমের আওতায় গত তিন বছরে ৭২,৫০০ বই বিতরণ করেছে বিকাশ।
মেলায় বিকাশের সৌজন্যে স্থাপিত ‘বই প্রদান বুথ’-এ এসে নতুন বা পুরাতন বই প্রদান করে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন পাঠক-দর্শনার্থীরা। যারা ঢাকার বাইরে আছেন, তারা নিজ নিজ এলাকার বিকাশ গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে গিয়েও বই দিয়ে আসতে পারবেন।
এদিকে যাদের বিকাশ অ্যাকাউন্ট নেই, চাইলে তারাও মেলা প্রাঙ্গনে জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে নিয়ে বিকাশের বুথ থেকে তাৎক্ষণিক অ্যাকাউন্ট খুলে বিকাশ পেমেন্টে বই কিনতে পারবেন। এছাড়া মেলার পাঠক-লেখক-ক্রেতা-দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য বিকাশের সৌজন্যে এবারও রয়েছে বসার ব্যবস্থা। শিশু কিশোরদের জন্য বিকাশের সৌজন্যে আছে মজার পাপেট শো।
এক দশক আগে, ইউনিসেফ, ইউএন গ্লোবাল কমপ্যাক্ট এবং সেভ দ্য চিলড্রেন, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানসমূহে স্বেচ্ছায় ব্যবহারের লক্ষ্যে শিশু অধিকার এবং ব্যবসার নীতি সংক্রান্ত এক সহায়িকা তৈরি করেছিল। এই সহায়িকার উদ্দেশ্য ছিল কর্মক্ষেত্র, বাজার এবং ব্যবসায়ী কমিউনিটির সকলে যেন শিশুদের অধিকারকে সম্মান জানিয়ে নিজ নিজ কর্পোরেট দায়িত্ব পালন করে। এই বৈশ্বিক সহায়িকার লক্ষ্য ছিল ব্যবসার কারণে সৃষ্ট শিশুদের উপর নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে এবং ব্যবসা-পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দুতে শিশু অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে দায়িত্বশীল আচরণ পালন করা। গত এক দশকে এই বিষয়ে বেশ কিছু অগ্রগতি সাধিত হলেও এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
এই প্রেক্ষাপটের উপর ভিত্তি করে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সিন্ডিকেট হলে আজ এক জাতীয় সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়। এনএসইউ'র উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে, পূর্বে-ধারণকৃত ভাষণে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ব্যবসার সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব প্রশমিত করতে শিশু অধিকার এবং ব্যবসায়িক নীতির কাঠামো মেনে চলার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
অনুষ্ঠানে ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, সরকার, বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসা-প্রতিঠানসমূহের পক্ষেই এই বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নের সক্ষমতা রয়েছে। শিশুদের প্রতি প্রতিশ্রুতি পালনে পিতামাতা, চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠানসহ সকলকেই এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন ভবিষ্যতে তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বজায় থাকে এবং ব্যবসার সম্মৃদ্ধিতে পরবর্তী প্রজন্মের প্রয়োজনীয় দক্ষতাও অর্জিত হয়।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম উল্লেখ করেন,বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে নারীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের অধিকার পায় না।
তিনি আরও বলেন, শিশুরা আমাদের সমাজের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ এবং তাদের রক্ষা করতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশে ইইউ প্রতিনিধিদলের প্রধান এইচ.ই. মিস্টার চার্লস হোয়াইটলি বলেন, শিশুরা ক্রমাগত দারিদ্র্য, শোষণ এবং বৈষম্যের সম্মুখীন হয়, ব্যবসা এতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তিনি আরও যোগ করেছেন, আমরা খুব আশাবাদী যে এই সম্মেলন এমন একটি নিরবচ্ছিন্ন এবং অনায়াসে পরিবর্তনের রূপান্তর হবে এবং এই সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক মহিলা, সরকারী এবং অন্যান্য স্তরে কাজ করছেন।
বাংলাদেশে ইইউ প্রতিনিধিদলের প্রধান এইচ.ই. মিস্টার চার্লস হোয়াইটলি, বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, বাংলাদেশে সুইডিশ রাষ্ট্রদূত মিস আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে; শ্রম ও কর্মসংস্থান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক, এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাসহ বেসরকারি খাত- ইউনিলিভার, গ্রামীণফোন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, ডিবিএল গ্রুপ এবং বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও এই সিম্পোজিয়ামে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে এনএসইউ এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের মধ্যে সম্প্রতি সম্পাদিত একটি সমঝোতা স্মারকের আওতায় পারস্পরিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।