
সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বিতর্কিত ৪২ ধারা বাতিলের দাবি জানানো হলেও তা বহাল রেখেই জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ‘সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩’ পাসের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে সংসদীয় কমিটি। তবে বিলের ৩২ ধারাটি (অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের বিধান) বাতিলসহ কয়েকটি ধারায় সংশোধন ও কিছু ক্ষেত্রে ভাষাগত পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিলটি চূড়ান্ত করে সংসদে প্রতিবেদন উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে সংশোধিত খসড়া মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার বিলটি সংসদে তোলা হয়। এরপর বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
সংসদীয় কমিটির সভাপতির অনুপস্থিতিতে কমিটির সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, আহমেদ ফিরোজ কবির, মো. নুরুল আমিন, মনিরা সুলতানা ও জাকিয়া পারভীন খানম অংশ নেন। বিশেষ আমন্ত্রণে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিএফইউজে একাংশের মহাসচিব দীপ আজাদ, বিএফইউজে আরেকাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন প্রমুখ।
বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিলে অনেক পরিবর্তন করেছি। বিলের ২১ ধারার বিষয়ে বিএফইউজে থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, আমরা তা গ্রহণ করেছি। ৩২ ধারার অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বাতিল করে দিয়েছি, এ আইনে সেটা থাকবে না। মিথ্যা মামলার বিষয়ে যে পরামর্শ এসেছে সেটা আমরা গ্রহণ করেছি। দ্রুত বিলের প্রতিবেদন সংসদে জমা দেওয়া হবে।’
এর আগে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আগেই সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। প্রস্তাবগুলো থেকে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ২১, ৩২ ধারাসহ কয়েকটি ধারা সংশোধন করার বিষয়ে কমিটি সম্মত হয়েছে। বিলের ৪২ ধারায় সংজ্ঞাগত কিছু পরিবর্তন এনেছে। সাব-ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকর্তার স্থলে ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকর্তা করা হয়েছে। তবে আমরা এ ক্ষেত্রে সন্তুষ্ট নই। আমরা প্রেস কাউন্সিলের কথাই বলেছি।’
প্রস্তাবিত আইনের ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের কয়েকটি সংগঠন এটি বাতিলের দাবি জানিয়েছিল। তবে তা পুরোপুরি গ্রহণ করা হয়নি। এখানে পুলিশ পরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন, এমন সংশোধনী আনা হচ্ছে।
প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। যেসব বিষয়ে সাংবাদিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে সেটা আমরা কমিটিতে জানিয়েছি। তারা সেগুলো সংশোধন করবেন বলে জানিয়েছে।’
বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘সংসদীয় কমিটি দু-একটি জায়গায় ভাষাগত পরিবর্তন এনেছে। তবে আমরা এতে সন্তুষ্ট নই। আলোচনাকালে আমরা ১৪ দফা দাবির বিষয়ে অনড় ছিলাম। বিশেষ করে ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার, তল্লাশির বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি। আমরা বলেছি, স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হয়, এমন ধারাগুলো বাতিল করে সংশোধনী আনলেই শুধু আমরা মেনে নেব।’
সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্তে হতাশা ব্যক্ত করেছেন ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধক ৪২ ধারা বাতিলের জন্য বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু তা কাজে আসেনি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ ধারা এই বিলের ৪২ ধারায় হুবহু রাখা হয়েছে। কিছু পরিবর্তনের কথা বলা হলেও তা কতটা হবে তা সংশোধিত বিলটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হলে জানা যাবে। সেটা দেখার পরই ডিইউজে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’
বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া বিলের ৩২ ধারায় বলা হয়েছিল, ‘যদি কোনো ব্যক্তি অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংঘটন করেন বা করিতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’
বিলের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণা চালান বা তাতে মদদ দেন, তাহলে তা হবে অপরাধ। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। এ ধারায় কিছু শব্দগত পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিএফইউজের প্রস্তাব ছিল ‘বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণা চালানো হবে অপরাধ’ এটি প্রতিস্থাপন করা। তাদের এ প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে সংসদীয় কমিটি।
ঢাকা সফররত রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, অনেক দেশ বাংলাদেশের একটি দলের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যা অগ্রহণযোগ্য। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর বাংলাদেশ তাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের পরিপ্রেক্ষিতেও বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্র নীতিতে অটুট থাকবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব মন্তব্য করেন।
এর আগে সন্ধ্যায় সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় এসেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ। এটাই তার প্রথম ঢাকা সফর। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।
দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন ধরে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে রাশিয়া। ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ সংলাপ এবং আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সংকটের সমাধানের পক্ষে। আমরা এ অঞ্চলে প্রক্সি ওয়ার চাই না। ল্যাভরভ বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শিডিউল অনুযায়ী চলছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। বাংলাদেশে এলএনজি, সার, গম রপ্তানির জন্য আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশের একটি দলের ওপর অনেক দেশের চাপ সৃষ্টি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতিসংঘ এবং এর বন্ধুদের ওপর চাপের পরও বাংলাদেশ তার নিজের স্বার্থরক্ষা করে চলবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
ল্যাভরভ বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে সাপ্লাই-চেইনে সমস্যা হয়েছে সত্যি; তবে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের সব মালামাল সময়মতো বাংলাদেশে পৌঁছেছে। এ প্রকল্পের জন্য নিউক্লিয়ার ফুয়েল বাংলাদেশে আসবে অক্টোবরে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের মালামালের মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে দুই দেশের স্থানীয় মুদ্রা বিনিময় নিয়ে আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চাপের মধ্যেও বাংলাদেশ তার স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি বজায় রেখেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে প্রতিহত ও ভারতকে একঘরে করতে চায়। এটি তাদের উদ্দেশ্য।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ল্যাভরভ বলেন, এটা সমাধানে আমরা জাতিসংঘসহ নানা প্ল্যাটফর্মে কাজ করছি। মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করছি, যা অব্যাহত থাকবে। এ ইস্যুতে পশ্চিমারা চাপ দিলে হিতে-বিপরীত হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ এ অঞ্চলে কোনো প্রক্সি ওয়ার দেখতে চায় না। বাংলাদেশ যেকোনো সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠক পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে তাদের মধ্যে অত্যন্ত খোলামেলা এবং ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন উপায়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ নিয়ে ঢাকার মন্তব্য জানতে চাওয়া হয় ড. মোমেনের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি আছে ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। আমরা ভারসাম্য কূটনীতি মেনে চলার চেষ্টা করি। আমরা আমাদের আগ্রহকে গুরুত্ব দিই। আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। সংলাপ এবং আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ সব সমস্যার সমাধান করতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, আমরা এ অঞ্চলে প্রক্সি ওয়ার চাই না। আমরা সব সমস্যার সমাধান শান্তিপূর্ণ সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে করতে চাই। এটাই আমাদের অবস্থান।
ড. মোমেন বলেন, মস্কোর সঙ্গে ঢাকার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া আমাদের সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ গঠনে তারা আমাদের অনেক সাহায্য করেছে। আমাদের সঙ্গে তাদের গভীর সম্পর্ক। রাশিয়া আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করছে।
প্রায় আধঘণ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আলোচনার বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে (গতকাল) আমরা আলোচনার মধ্যে অনেক ইস্যু তুলে নিয়ে এসেছি। আমাদের ইস্যু ছিল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এটা মোটামুটি যথাসময়ে শেষ হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ইস্যুতে তারা (রাশিয়া) আমাদের সঙ্গে একাত্ম। তারা বলেছে, রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। এ ব্যাপারে আমরা তাদের সহায়তা চেয়েছি। আমরা উভয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বাড়ানোর কথা বলেছি। এ দেশে অনেক স্কোপ রয়েছে। ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে, হাইটেক পার্ক রয়েছে। এগুলোর সুবিধা তারা নিতে পারে। তারা বলেছে, নিউক্লিয়ার ফুয়েল টেকসইভাবে অনেক দিন দেবে।’
রাশিয়া বাংলাদেশকে এলএনজি এবং ক্রুড অয়েল আনার প্রস্তাব দিয়েছে জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, তারা বলেছে, তাদের দেশ থেকে আমরা এলএনজি আনতে পারি। তারা আমাদের প্রস্তাব করেছে, তাদের দেশ থেকে ক্রুড ওয়েল আনতে পারি। ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশও ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান তিনি। ড. মোমেন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য একটি অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বলেছি, তাদের দেশে ইকোনমিক একটা কমিশন আছে, আমরা তার সুবিধা নিতে চাই। বাকি রাষ্ট্র যারা সদস্য, বিশেষ করে তাজিকিস্তান, তাদের অনুমতি লাগবে। সবাই মিলে যেন সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় ইস্যু তুলে ধরেছি। তিনি এ ব্যাপারে খুব আন্তরিক। এগুলোর ব্যাপারে দেখবেন বলে জানান ল্যাভরভ। বৈঠক শেষে নৈশভোজে অংশ নেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে ঢাকা-মস্কোর মধ্যে কোনো চুক্তি হবে না। তবে দ্বিপক্ষীয় লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় দুই দেশের মধ্যে ঝুলে থাকা চুক্তির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় ৬টা ১৭ মিনিটে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় পৌঁছান। তাকে বহন করা বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। পরে তারা বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কিও উপস্থিত ছিলেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন আজ শুক্রবার সকালে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধানম-ির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর তিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকা থেকে নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা করবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় বাংলাদেশকে সমর্থন জানিয়েছে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। তবে স্বাধীনতার পর গত ৫২ বছরে মস্কোর কোনো প্রতিনিধি ঢাকা সফর করেননি। নির্বাচন সামনে রেখে যখন পশ্চিমাদের নানা তোড়জোড়, এমন সময় মার্কিনবিরোধী অবস্থান নেওয়া রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ঢাকা সফরে এলেন।
সকাল ৮টায় থাকার কথা ছিল কমলাপুরে। আমাদের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার সুপন সিকদারকে নিয়ে কমলাপুরে পৌঁছাই সাড়ে ৮টায়। মিডিয়াকর্মীর অনেকেই তখন স্টেশনের প্ল্যাটফরমে দাঁড়িয়ে। এর মধ্যে অনেকে আসছেন। ৭ নম্বর প্ল্যাটফরমে দাঁড়িয়ে আছে পরীক্ষামূলক ট্রেন। ৮২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ট্রেনটি যাবে ফরিদপুরের ভাঙ্গায়। মাঝখানে পাড়ি দিতে হবে বাঙালির গর্বের পদ্মা সেতু। ৯টার দিকে ট্রেনের কামরার দরজা খোলা হলো। ট্রেনে ছয়টি কামরা। দুটি কামরা মিডিয়াকর্মীদের জন্য বরাদ্দ। একটি সামনে। আরেকটি একেবারে পেছনে। সংবাদকর্মীদের কামরা দুটিই নন-এসি। পত্রিকার আলোকচিত্রী আর টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যানরা যেন জানালা খুলে ছবি তুলতে পারেন তাই এই ব্যবস্থা।
১০টা ৭ মিনিটে খুবই ধীর গতিতে ট্রেনটি চলতে শুরু করল। শহর পর্যন্ত এই ধীর গতি। ট্রেন দেখার জন্য রাস্তায় অসংখ্য কৌতূহলী মানুষ। কেউ মোবাইল ফোনে ছবি তুলছে, কেউ হাত নাড়াচ্ছে। উল্লাস করছে। সবার চোখে-মুখে আনন্দের বান। শহর অতিক্রম করে ট্রেনের গতি বাড়ল। দিগন্ত-বিস্তারি সবুজের মাঝখান দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে চলছে ট্রেনটি। সংবাদচিত্রীরা জানালার ফাঁকগলে মাথা বের করে ছবি তুলছেন। যখনই বাঁক আসে তখনই আলোকচিত্রীদের ব্যস্ততা বাড়ে। নতুন ট্রেন দেখতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে গায়ের বধূ ও শিশু। কাজ বন্ধ রেখে ট্রেনের দিকে তাকিয়ে থাকে হাল-বাওয়া কৃষক। নিজের মোবাইলে ছবি তুলে রাখেন কেউ কেউ। আলোকচিত্রীরাও তাদের ছবি তোলেন। যখনই বাঁক পাই তখন ছবি তুলি। তাতে আশ মেটে না। একসময় ট্রেনটি পৌঁছে যায় পদ্মা সেতুর কাছে। ট্রেন ও পদ্মা সেতুকে এক ফ্রেমে ধরার চেষ্টা করি। কিন্তু ভেতর থেকে ট্রেন ও সেতুর ছবি তোলা কঠিন।
এভাবে সারা রাস্তায় ছবি তুলতে তুলতে হঠাৎ ট্রেনটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশনে গিয়ে থামে। ঘড়িতে তখন দুপুর ১২টা ২০ মিনিট। জংশনের পাশেই এক বিশাল মঞ্চ। ট্রেন থেকে নামার পর রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে নিয়ে যাওয়া হয় মঞ্চের পুবদিকে। তার সঙ্গে মন্ত্রী, চিপ হুইপ, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতাসহ অসংখ্য ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সেখানে বেলুন ওড়ানো হয়। আকাশে ফুটতে থাকে আতশবাজি। এরপর রেলওয়ে জংশন পরিদর্শন করে মঞ্চে ওঠেন রেলমন্ত্রী। বক্তব্য আর আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঞ্চ থেকে নেমে আসেন তিনি। সফরসঙ্গীদের নিয়ে গিয়ে তাঁবুতে বসেন। এর মধ্যে ভাঙ্গা থেকে ঘুরে ভাঙ্গা জংশনে আসে ট্রেনটি।
সারা পথে ট্রেনের ভেতর থেকে যে ছবি তুলেছি তা থেকে পত্রিকার লিড ছবি পাওয়া যায়নি। ঢাকা থেকে যেভাবে এসেছি, ফিরতে হবে ওভাবেই। তাই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। শেষে সমকালের প্রধান আলোকচিত্রী মাহবুব হোসেন নবীন আর আমি কয়েকজন সংবাদচিত্রীকে সঙ্গে নিয়ে রেলমন্ত্রীর কাছে গিয়ে বলি, আমাদের ছাপার মতো ছবি হয়নি। ফেরার পথে পদ্মা সেতুর ওপর যেন কিছুক্ষণের জন্য ট্রেনটি থামানো হয়। তিনি রাজি হলেন। বললেন, ‘আপনাদের জন্য পাঁচ মিনিট থামানো হবে। এর মধ্যেই ছবি তোলা শেষ করতে হবে।’ এই তথ্যটা কয়েকজন সংবাদচিত্রী ছাড়া আর কোনো সংবাদকর্মী জানতেন না। বেলা ২টা ১৫ মিনিটে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে এসে থামে ট্রেনটি। কয়েকজন আলোকচিত্রী ট্রেন থেকে নেমে ছবি তুলতে শুরু করলাম। আমাদের দেখে বাকি সবাই নেমে পড়লেন। ছবি তুললেন। টিলিভিশনের কেউ কেউ লাইভ দেওয়ার প্রস্তুতি নিলেন। এর হুইসেল বেজে ওঠে। আমরা হুড়োহুড়ে করে ট্রেনে উঠলাম। মিনিট দশেক পর ট্রেনটি আবার ঢাকার দিকে চলতে শুরু করল। শ-দুয়েক যাত্রী নিয়ে বিকেল ৪টায় এসে পৌঁছে কমলাপুরে।
লেখক : দেশ রূপান্তরের আলোকচিত্র সম্পাদক
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দুদিনের সফরে দিল্লি যাচ্ছেন। সেখানে আজ সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন তিনি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলপত্র ইস্যুতে প্রভাবশালী দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে এ সফরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের ভাষ্য, দিল্লিতে কাল থেকে যে সম্মেলন হতে যাচ্ছে, সেটা অংশগ্রহণকারী সব দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আর বাংলাদেশের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের অব্যাহত চাপের মধ্যে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া। এ সফরে নির্বাচন নিয়ে দিল্লির কাছে ঢাকার অবস্থান স্পষ্ট করা এবং দিল্লির সমর্থন আদায় করার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা শেখ হাসিনার ভারত সফরকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দুভাবেই সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারতের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরাও হাসিনা-মোদির একান্ত বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। কারণ বাংলাদেশে চলতি বছরের শেষদিকে বা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ভারতেও আগামী বছরের প্রথমার্ধে নির্বাচন হওয়ার কথা।দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন শিবিরের সঙ্গে অস্থিরতা চলছে। ওয়াশিংটন এবার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অনেক বেশি আগ্রহী। গত দুই বছর ধরে দেশটি বাংলাদেশের অবাধ,দিল্লি সফরে গুরুত্ব পাবে রাজনীতি ও কূটনীতি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সবক দিয়ে চলেছে। এমনকি র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার পর গত মে মাসে নির্বাচন ইস্যুতে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, জি-২০ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ প্রভাবশালী দেশের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এ কারণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্বাচন নিয়ে তাদের সঙ্গে চলমান অস্থিরতার বিষয়ে আলোচনা ও সমাধান সূত্র আসতে পারে।
তারা বলছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জো বাইডেনের মধ্যকার অনুষ্ঠিত বৈঠকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আলোচনায় বাংলাদেশের বিষয় আসবে। তার আগে হাসিনা-মোদি বৈঠকটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যুক্তরাষ্ট্র যেমন চায় না যে, বাংলাদেশ তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীনের দিকে ঝুঁকে পড়–ক। ঠিক একইভাবে প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতও চায় না বাংলাদেশ তাদের শত্রু দেশ চীনের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ হোক। কারণ ইন্দো-প্যাসিফিকে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক জরুরি মনে করে ভারত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মোদির সরকারি বাসভবনেই ওই বৈঠক হবে। বৈঠকে তিস্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনা করতে চায় ঢাকা। এ ছাড়া জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিসহ গুরুত্বপূর্ণ সব ইস্যুতে আলোচনা হবে। দুই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, নিরাপত্তাসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয় আসতে পারে দুই নেতার আলোচনায়। সে ক্ষেত্রে ভারতের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিরাপত্তা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময় ভারত নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়েছে। বাংলাদেশ তার ভূখণ্ড ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে দেয়নি।
তিন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে : শেখ হাসিনার দিল্লি সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, জি-২০ সফরকালে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে টাকা ও রুপির লেনদেন সহজ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও ভারতের এনপিসিআইর মধ্যে সমঝোতা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যে তিনটি সমঝোতা স্মারক হবে, তা হলো কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক চুক্তির মেয়াদ ২০২৩ থেকে ’২৫ পর্যন্ত বাড়ানো এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনপিসিআইর মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে কি না, এ প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে কি না আমি জানি না। আমরা যেটি চাই আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য। আমরা কোনো কারচুপি চাই না। তিনি বলেন, আমরা স্বচ্ছ ও সুন্দর নির্বাচন চাই। সেখানে কেউ যদি আমাদের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়, সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে কেউ যদি মাতব্বরির ভূমিকা নিয়ে আসে, আমরা সেটি সহ্য করব না। আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কাউকে ভয় পান না।’
ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা কোনো চাপের মুখে নেই। কারণ আমরা অত্যন্ত পরিষ্কার যে, সুন্দর একটি নির্বাচন করব। অন্যরা পছন্দ করুক বা না করুক, এটি তাদের সমস্যা। তারা চাপের মুখে পড়ে ছাই হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা টিকে থাকব।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও সাইডলাইনে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ কোরিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের সম্ভাবনা আছে। প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে বাংলাদেশের হাঁড়িভাঙা জাতের আমের চারা রোপণ করবেন বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীকে আপ্যায়ন করা হবে পঞ্চবটীতে : শেখ হাসিনার সফরকে ভারতের পক্ষ থেকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর আপ্যায়নের রীতিতেও তা স্পষ্ট। সাধারণত রাষ্ট্রীয় কোনো অতিথি ভারত সফরে গেলে দেশটির রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হায়দরাবাদ হাউজ অথবা সাউথ ব্লকে আপ্যায়ন করা হয়ে থাকে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আপ্যায়ন করানো হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারি বাসভবন ৭ লোককল্যাণ মার্গে বা পঞ্চবটীতে। গতকাল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আন্তরিকতার বার্তা দিতেই এ গৃহঅভ্যর্থনার আয়োজন করা হয়েছে। আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়া, আর্জেন্টিনা ও সৌদি আরবের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নৈশভোজে এবং সম্মেলন কক্ষে বাইডেনের সঙ্গে হাসিনার ‘দেখা হয়ে যাবে’।
জি-২০-এর সদস্য না হলেও এবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। ২৫টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সামনে ‘গ্লোবাল সাউথের’ পক্ষে বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা।
তিস্তার পানিতে আশা, সাইডলাইনে হতে পারে হাসিনা-মমতা বৈঠক : এদিকে তিস্তার হিস্যা নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মতামতও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জি-২০ সম্মেলনের নৈশভোজে অংশ নেবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ভারতীয় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুর্মুর আমন্ত্রণে সেখানে যাচ্ছেন তিনি। অনুষ্ঠানের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতার বৈঠক হতে পারে বলে জানিয়েছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, হাসিনা-মোদির বৈঠকে তিস্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় একই সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর অংশগ্রহণ এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান তিস্তা নদীর হিস্যার বিষয়টি তুলবেন। তিনি বলেন, আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি রয়েছে, সেটিও (আলোচনায়) তোলা হবে। সব বিষয়ে আমাদের যৌথ নদী কমিশন এবং অন্যরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের গুরুত্ব সম্পর্কে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত মো. ওয়ালিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্ক এমনিতেই অনেক ভালো। জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে দেখা হবে। রোহিঙ্গা সংকট ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কথা বলবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর অবশ্যই কূটনৈতিক গুরুত্ব রাখে। কারণ সেখানে তিনি বক্তৃতা দেবেন এবং দক্ষিণের অর্থনীতি নিয়ে কথা বলবেন। তিনি উন্নয়নশীল বিশ্বের হয়ে কথা বলবেন এবং কীভাবে আমরা আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাব, সেই বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরবেন।’
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি মনে করি এ সফর অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের (বাংলাদেশ-ভারত) প্রধানমন্ত্রীর যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে, তা অবশ্যই দুই দেশের মধ্যকার অমীমাংসিত ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে কথা হবে। আর সেই আলোচনা সাধারণত গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা চাপের বিষয়ে দুই শীর্ষ নেতা কী বলবেন, সেটি হয়তো কোনো পক্ষই প্রকাশ করবে না। ধারণা করছে সবাই এ নিয়ে আলোচনা হবে।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই হবে এ অবস্থানে অনড় আওয়ামী লীগ। তার বিপরীতে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করে নির্বাচন দিতে হবে, এমন দাবিতে অনড় থাকা বিএনপি ও সমমনা দলগুলোও মাঠে রয়েছে। এমন পরিস্থিতির কারণে আগামী দিনগুলোতে সংঘাত-সহিংসতার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক জটিলতা নিরসন না হলে সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়। এখন সেই অবস্থা বিরাজ করছে। তারা দাবি করেন, নির্বাচন দূরে থাকায় আওয়ামী লীগের আন্দোলন মোকাবিলার কর্মসূচি আর বিএনপির দাবি আদায়ের কর্মসূচি কখনো জ¦লে উঠেছে, আবার ধপ করে নিভেও গেছে। সেপ্টেম্বর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত বাকি সময় পরিস্থিতি উত্তপ্তই থাকবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির নেতাদের মধ্যেও সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি দুই দলের নেতারাই এ আশঙ্কা প্রকাশ করে বক্তব্য দিচ্ছেন।
সেপ্টেম্বর মাস থেকে নির্বাচন পর্যন্ত সহিংসতার আশঙ্কা করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, খুবই ‘ক্রিটিক্যাল’ সময় এখন। দুই দলের নেতারাই এমন পরিস্থিতির জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করে চলেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেন, সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিদেশে বসে বিএনপির নেতা তারেক রহমান তাদের প্রস্তুত করেছেন। অন্যদিকে বিএনপির নেতাদের দাবি, ইচ্ছে করে সরকারি দল আওয়ামী লীগ সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। সরকারবিরোধীরা কর্মসূচি দিলেই তারাও পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের ভেতরে প্রতিনিয়ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করছে।’ ইতিহাসের এ অধ্যাপক আরও বলেন, ‘সেপ্টেম্বর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত সবার মধ্যেই উদ্বেগ থাকবে।’
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আরেক অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখন যারা মনে করছে বিরোধী দলের দাবির ন্যায্যতা আছে, অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। ওনাদের দেখার একটা চশমা আছে। আবার যারা সংবিধানকে আপন করতে চান তাদের দেখার আরেকটা চশমা আছে। সেখানে কে কতটা চাপ প্রয়োগ করতে পারে তার একটা ব্যাপার আছে। আমাদের এ অঞ্চলে রাজনীতি কখনো কখনো ভায়োলেন্সের (সহিংসতা) দিকে চলে যায়। অনেকে এজন্য একটু আগাম আশঙ্কার মধ্যে পড়ে থাকে। তবে সময়ই বলে দেবে।’
সেপ্টেম্বরে সংঘাত সৃষ্টির সব মহলের আশঙ্কা এরই মধ্যে সত্যিও হয়েছে। গত বুধবার অস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া দেওয়ার ঘটনাও ঘটে গেছে। মাগুরায় স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং সংঘর্ষে অন্তত তিনজন আহত হয়েছে। মাগুরা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ের এ ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের অভিযোগ, কর্মিসমাবেশ উপলক্ষে তাদের একটা মিছিলে ছাত্রলীগের কর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়লে সংঘর্ষ শুরু হয়। ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি, স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল থেকে তাদের ওপর হামলা চালানো হলে প্রতিরোধ করেন তারা। সংঘর্ষের সময় একজনের হাতে পিস্তল দেখা গেছে।
ঢাকার বাইরে মাগুরার এ ঘটনায় একে অন্যকে দোষারোপ করে সংঘাতের ঘটনা ছোট করতে চাইলেও আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুই দলের শীর্ষ একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সেপ্টেম্বর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত এ সময়টা খুবই ক্রিটিক্যাল (সংকটপূর্ণ)। দুই দলের নেতারাই দাবি করেন, তাদের আশঙ্কা সংঘাতের ঘটনা শুরু হবে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকেই। ঢাকায় দুই দলের আন্দোলন ও আন্দোলন মোকাবিলার কর্মসূচি বিভিন্ন কৌশলে দুর্ঘটনা ছাড়াই শেষ করা সম্ভব হলেও ঢাকার বাইরের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিগুলো সংঘাত-সহিংসতা ছাড়া শেষ হওয়ার সুযোগ এখন কম। কারণ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাথায় নির্বাচন করা এবং যেকোনো মূল্যে নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করা। সবার মাথায় ঢুকে গেছে জিততে হবে। আর এ মানসিকতা পরিস্থিতিকে সহিংসতার দিকে টেনে নেবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির লক্ষ্যই হলো নির্বাচন ঠেকানো ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে তাদের সুবিধা হয় এমন একটি সরকার আনা। ফলে তারা অস্ত্রে শান দিচ্ছে। তারা হানাহানির পরিকল্পনা করছে। মাগুরার ঘটনাও তারই একটি বার্তা দেওয়া যে, অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিতই হচ্ছেন না তারা, প্রয়োজন পড়লে আবারও আগুন সন্ত্রাস সৃষ্টি করবে, পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ মারবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘তারা (বিএনপি) নির্বাচন চায় না। কারণ নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোট দেবে না। তাই জনগণের ওপরই তাদের ক্ষোভ বেশি। সেজন্য আন্দোলনের নামে তাদের লক্ষ্য মানুষের ক্ষতি করা।’ তিনি বলেন, ‘সেই সুযোগ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপিকে দেবে না। এজন্যই আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ দিয়ে মানুষের জানমাল রক্ষা করার জন্য অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে মাঠে থাকে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের উসকানিমূলক পদক্ষেপের কারণে যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তার জন্য সরকার দায়ী থাকবে। কেননা আমরা সম্প্রতি দেখেছি, সরকারের বিশেষ ব্যক্তিরা উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, উসকানিমূলক কাজও করছেন। আমরা আশা করি তারা পাল্টা কর্মসূচি না দিয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে চেষ্টা করবে এবং সরকার তা নিশ্চিত করবে।’
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা কর্মসূচি দিলেই তারা পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। মাসখানেক ধরে তারা এ পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে। আমরা কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন করেছি। তারা ইচ্ছে করে সেই তারিখে তাদের কর্মসূচি নিয়ে গেছে। এটা তো পরিষ্কার, সরকারের সব পাগল মিলে এক জায়গায় হয়েছে। তা না হলে ইচ্ছে করে কেউ সংঘাতের পরিস্থিতির জন্য এ কাজ করে না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য এবার পরিষ্কার, যুগে যুগে শুধু মার খাব না, এজন্য দেশ স্বাধীন করিনি। কেউ আঘাত করলে পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা কোনো প্রাণহানি চাই না। শান্তিপূর্ণভাবে পদত্যাগ চাই। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত শেখ হাসিনার পতনের জন্য মাঠে থাকব।’
ঢাকা কাস্টম হাউজের নিজস্ব গুদাম থেকে ‘সোনা চুরির’ ঘটনা রহস্যের জন্ম দিয়েছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চুরি দাবি করে থানায় মামলা করেছে। মামলায় যে তারিখে চুরির কথা বলা হচ্ছে তারও অন্তত ১৪ দিন আগে সোনা গায়েবের বিষয়টি জানতে পারেন কাস্টমসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। বিষয়টি দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকারও করেছেন শীর্ষপর্যায়ের এক কর্মকর্তা। তাহলে মামলা এত পরে কেন আর কেনইবা চুরির নাটক। গুদামের ‘সোনা চুরির’ আগে আশপাশের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরাগুলো নষ্ট ছিল। টাকার অভাবে এক বছর ধরে সিসি টিভি লাগাতে পারেনি কাস্টমস। তবে ‘সোনা চুরির’ পর গত বুধবার নতুন করে ১০টি সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা কাস্টম হাউজের নিজস্ব গুদাম থেকে ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি সোনা গায়েবের ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়েছে গত ৩ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সোনা গায়েবের বিষয়টি কাস্টমসের শীর্ষ কর্তারা প্রথম জানতে পারেন গত ২১ আগস্ট। পরদিন ২২ আগস্ট সোনার পরিমাণ জানার উদ্যোগ নেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবে এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে করা চুরির মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘গত ২ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ১২টা থেকে পরদিন সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে যেকোনো সময় কে বা কারা স্বর্ণের বার ও স্বর্ণালংকার গুদামের স্টিলের আলমারির লকার ভেঙে চুরি করেছে।’ মামলায় অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনা প্রকাশ পাওয়া থেকে মামলা হওয়ার মাঝের এই ১৪ দিন গুদামে থাকা সোনা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে বলে দাবি ঢাকা কাস্টম হাউজের শীর্ষ কর্তাদের। নাম প্রকাশ না করে কাস্টম হাউজের শীর্ষপর্যায়ের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত ২১ আগস্ট আমরা প্রথম জানতে পারি গুদাম থেকে আট কেজি সোনা গায়েব হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে গণনা করে জানা গেছে ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি সোনা কম আছে আলমারিতে।’
সোনা চুরির মামলাটি বিমানবন্দর থানা থেকে গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু ডিবি এখনো কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। কাস্টমসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কোনো ক্লু মিলছে না বলে দাবি তদন্ত তদারকি কর্মকর্তাদের। গতকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তারও দেখায়নি ডিবি।
জানতে চাইলে ডিবি উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার বদরুজ্জামান জিল্লু গতকাল বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের হেফাজতে যে আটজন আছে তারা কোনো কিছুই বলতে পারছে না। তারা দাবি করছে, ঘটনাটি চুরি এবং তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
তাদের গ্রেপ্তার করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের আমাদের কাছে দিয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া আমরা তো তাদের গ্রেপ্তার দেখাতে পারব না।’
গতকাল ডিএমপির ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি। সোনা চুরির ঘটনায় যত বড় কর্মকর্তাই জড়িত থাকুক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’ তিনি বলেন, বিমানবন্দরের মতো একটা জায়গা যেখানে কঠোর নিরাপত্তা, সেখানে এত বড় একটা চুরির ঘটনা, এটা আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। পাশাপাশি গত চার-পাঁচ মাস গুদামে কারা গেছে সেটিও তদন্তে আনা হবে। সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ, দায়িত্ব পালন ও জিজ্ঞাসাবাদের পর বলা যাবে আসলে ঘটনাটি কীভাবে হয়েছে এবং কারা ঘটিয়েছে।’
ডিবিপ্রধান বলেন, এক কর্তৃপক্ষ সোনাগুলো আরেক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করল। কিন্তু তারা কীভাবে বুঝিয়ে দিল আর যারা বুঝে নিল তারাইবা কীভাবে বুঝে নিয়েছে সব বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত চলছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই তদন্ত শেষ করা হবে।
কাস্টমস সূত্র বলছে, গত ২১ আগস্ট সোনা গায়েবের প্রাথমিক তথ্য কাস্টমস কমিশনার একেএম নুরুল হুদা জানার পরদিন সোনা গণনা ও পরীক্ষার উদ্যোগ নেন। কাস্টমসের সহকারী কমিশনার (বিচার) মো. আতিকুজ্জামান চৌধুরী দুজন বিশেষজ্ঞ চেয়ে বাংলা গোল্ড (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চিঠি দেন। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গোল্ড এনালিস্ট অমিত ধর ও ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার রনি সোনা গণনা ও পরীক্ষা করেন। এ সময় ধরা পড়ে ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি সোনা আলমারিতে কম আছে।
এ ঘটনা তদন্তে দুই দফা কমিটি গঠন করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে ১১ সদস্যের, যার সভাপতি করা হয়েছে কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার কাজী ফরিদ উদ্দীন আর সদস্য সচিব করা হয়েছে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (প্রিভেন্টিভ) মোহাম্মদ সোহরাব হোসেনকে। এ ছাড়া দুজন যুগ্ম কমিশনার, দুজন ডেপুটি কমিশনার, একজন রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে মামলা তদন্তে নেমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানতে পারে গুদামের আশপাশে কাস্টমসের সবগুলো সিসি টিভি ক্যামেরা নষ্ট। ফলে কোনো ফুটেজ বা আলামত পাওয়া যাচ্ছে না। এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি টিভি নষ্টের বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার একেএম নুরুল হুদা আজাদ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সোনা চুরির বিষয়টির প্রাথমিক তথ্য আমার কাছে আসে গত ২১ তারিখে (২১ আগস্ট)। এরপর আমি তাৎক্ষণিক গুদামে থাকা স্বর্ণের বার ও স্বর্ণালংকার গণনার উদ্যোগ নিয়েছি। এরপর যখন চুরির বিষয়টি প্রমাণ হয় আমিই পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছি এমন ঘটনা ভবিষ্যতে যেন না ঘটে সেজন্য।’
সিসি টিভি নষ্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে লাগানো সিসি টিভি নষ্ট হয়ে গেছে। আমি গত বছর থেকে নতুন সিসি টিভি লাগানোর চেষ্টা করেও পারিনি। কারণ বাজেট থাকলেও টাকা খরচে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা ছিল।’
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।