
রূপকথা নয়, রূপান্তরের বাংলাদেশ। ক্ষুধা, দারিদ্র্যের বৃত্ত ভেঙে, সব আশঙ্কা পেছনে ফেলে বর্তমান বাংলাদেশ অপরাজেয়-অপ্রতিরোধ্য এক নতুন বাংলাদেশ। শ্যামল-সুন্দর নদীতীরের কোটি মানুষের অদম্য শক্তির উন্মাদনাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রূপান্তরের বাংলাদেশের নতুন পরিচয়। অর্থনীতি, উদ্যোগ, শিল্প, সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যে প্রশ্নাতীত সাফল্যের হাত ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অপূর্ব মেলবন্ধন এখন বাংলাদেশ।
তবে মহামারী করোনাভাইরাসের আঘাত শেষ না হতেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির থাবা পুরো বিশ্বের অর্থনীতিকে টালমাটাল করে দিয়েছে। এর উত্তাপ লেগেছে বাংলাদেশেও। এরই মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ঝড়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট অর্থনীতিকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে সর্বস্তরের মানুষের জীবনযাপনে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ এখন চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। তাদের আয় নেই, অথচ খরচ বেড়েছে।
মূল্যস্ফীতি আর বাড়তি খরচের এ ক্রান্তিকালে সাধারণ মানুষ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আয়ের কেন্দ্র হতে পারত পুঁজিবাজার। একটি পরিণত, আধুনিক ও স্থিতিশীল পুঁজিবাজার থাকলে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও একে মোকাবিলার শক্তি পেত মানুষ। দুঃখজনক হলেও সত্য, সেটি করা সম্ভব হয়নি।
তবে এখনো সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের সামনে সুযোগ এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ-স্বনির্ভর সোনার বাংলা গড়তে হলে আর্থিক খাতের অন্যতম অংশ পুঁজিবাজারকে আমূল বদলে দিতে হবে। এ অবস্থায় ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসতে চাই আমরা। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এবিজি লিমিটেড চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার আগ্রহ দেখায়। আনন্দের বিষয় হলো, আমরা সেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্য পূরণের দিকে পা বাড়াতে যাচ্ছি। এখন আমাদের লক্ষ্য থাকবে, কীভাবে এ পুঁজিবাজারকে সর্বসাধারণের জন্য সমান সহায়ক আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়।
দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু ব্যবসা নয়, মানুষের ভালো-মন্দ বিবেচনায় রাখে। আমাদের সেøাগানই হলো ‘দেশ ও মানুষের কল্যাণে’। ...নানাভাবে আমরা তা করে যাচ্ছি। তবে আর্থিক খাত তথা পুঁজিবাজারের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে কিছু কাজ করার সুযোগ পেয়ে ভালো লাগছে। আশা করি, এখানেও আমরা লক্ষ্য পূরণে সমর্থ হব।
এরই মধ্যে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। সিএসইকে প্রযুক্তিবান্ধব করে তুলতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানো হচ্ছে। বিশেষ করে আধুনিক কারিগরি ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে উন্নত ও প্রযুক্তিবান্ধব করে পুঁজিবাজারকে দেশের প্রত্যেকটি মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দেওয়া আমাদের অন্যতম লক্ষ্য, যাতে করে মানুষ তাদের সঞ্চিত ৫-১০ হাজার টাকাও দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে পারে। এখান থেকে মুনাফা করতে পারে। এ আয় থেকে বছর শেষে বা হলিডেতে ঘুরতে বাড়তি টাকা ব্যয় করতে পারে তারা। কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজারে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের বড় দুটি ধসের ঘটনা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলেছে। মানুষ চরমভাবে ঘাবড়ে গেছে। এমনকি পুঁজিবাজারের নাম শুনলেই অনেকের মনে নেতিবাচক প্রশ্নের উদয় হয়। বেশিরভাগ মানুষই এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আস্থা পায় না। এমনকি বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে ভয় পায়। মূলত পর্যাপ্ত তথ্যের ঘাটতি, দুষ্টচক্রের কারসাজির ভীতি ও অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ায় এমনটি হচ্ছে।
আমরা সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা করে, সহজ পদ্ধতিতে মানুষের মনে হারানো ভরসার প্রদীপ জ¦ালিয়ে দিতে চাই। তারা যেন আবারও পুঁজিবাজারকে বিশ্বাস করে, বিনিয়োগ করে। এটি যেন তাদের কায়ক্লেশের সংসারজীবনে নিয়ামকের ভূমিকা রাখে। সিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে এবিজি লিমিটেড সবার আগে তথ্যের সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিতে কাজ করবে। পাশাপাশি সিএসইর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের নিয়মিত লেনদেনে নজরদারির ব্যবস্থা করবে। যেন কেউ কৌশলে বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নিতে না পারে। এ জন্য অবশ্যই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সহযোগিতা প্রয়োজন হবে।
আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে (এনএসই) দৈনিক গড়ে ২২ হাজার ৭২৪ কোটি রুপি লেনদেন হয়। অথচ বাংলাদেশের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জে দৈনিক গড় লেনদেন হাজার কোটিরও নিচে। এখন অনেকেই বলবেন, তাদের জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি, ওদের অর্থনীতির পরিধি বড়, ওদের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বেশি। কিন্তু আমাদের জনসংখ্যাও তো সাড়ে ১৬ কোটি ছাড়িয়ে। আমরা তো বিনিয়োগের জনসংখ্যার আনুপাতিক হারের দিক থেকেও পিছিয়ে আছি! তাহলে আমাদের লেনদেন কেন তাদের সাত ভাগের এক ভাগ হবে না? আমাদের পুঁজিবাজারে কেন বড় মূলধনী কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হবে না? আমাদের পুঁজিবাজারে কেন বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে না? কেন আস্থা ফেরানো যাবে না? আমি মনে করি এটা সম্ভব।
২০২১ সালে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যেও বিশ্বের বৃহত্তম ‘ডেরিভেটিভ এক্সচেঞ্জ’ হয়েছিল এনএসই। পাশাপাশি ট্রেডের সংখ্যার ভিত্তিতে নগদ ইকুইটিতে এনএসই বিশ্বের চতুর্থ স্থানে রয়েছে। আমরা আছি তালিকার একেবারে শেষের দিকে। এর কারণ হচ্ছে পরনির্ভরশীলতা। প্রযুক্তির জন্য আমাদের উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। নতুন কিছু শুরু করতে গেলে প্রথমেই বলা হয়, আমাদের দিয়ে সম্ভব নয়। কিন্তু কেউ তো মায়ের গর্ভ থেকে সবকিছু শিখে আসে না। নতুন কাজ, নতুন চ্যালেঞ্জ, নতুন অভিজ্ঞতা। প্রয়োজনে আমরা কাউকে পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে হলেও কাজ আদায় করে নেব। কিন্তু কাজটির দায়িত্বে আমাদের থাকতেই হবে। না হলে আমাদের দেশে আয় করে, এ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে নিয়ে যাবে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো।
খেয়াল করে দেখুন, বাংলাদেশে ব্যবসারত টেলিকম কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহকসংখ্যা ৮ কোটি ৪০ লাখ, রবি আজিয়াটার গ্রাহকসংখ্যা ৫ কোটি ৪৮ লাখ, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন লিমিটেডের ৩ কোটি ৮৫ লাখ। সেখানে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের গ্রাহকসংখ্যা মাত্র ৬৭ লাখ। বাংলাদেশ সরকারের আইনের পরিপালন করে অন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলো টেলিকম ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা বিদেশে নিয়ে গেলেও টেলিটক সেই প্রতিযোগিতায় নেই। এর মূল কারণই হলো ‘আমরা পারব না’ এ ভীতি। একই সঙ্গে বিদেশি কোম্পানিগুলোর প্রতি আমাদের বাড়তি আগ্রহ।
বর্তমানে দেশে সীমাহীন ডলারসংকটের পেছনে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোই দায়ী। এ প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে হাজার কোটি টাকার মুনাফা করলেও নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ সীমিত। ফলে টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। অথচ বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে দেওয়া বিনিয়োগের সুবিধার অর্ধেকও যদি দেশীয় কোম্পানিগুলোকে দেওয়া হতো, তবে আজকের পরিস্থিতি অন্যরকম থাকত। কারণ, আমরা ব্যবসা থেকে যে মুনাফা করি তা আবার দেশেই বিনিয়োগ করি।
বসুন্ধরা গ্রুপ সবসময়ই আমদানি বিকল্প দেশীয় পণ্য তথা দেশজ উৎপাদনে গুরুত্বারোপ করে আসছে। দেশের আইন ও নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে ভূমিকা রাখছি। একইভাবে পুঁজিবাজারেও আমরা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে চাই, যাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আবার তাদের হারানো আস্থা ফিরে পায়।
আমাদের দেশে বিনিয়োগ করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো মুনাফা করে হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নিলেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের তেমন আধিক্য নেই। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে সিএসইতে মাত্র ১ কোটি ৪১ লাখ টাকার বিনিয়োগ এসেছে। একই সময়ে ডিএসইর বিদেশি বিনিয়োগ নেমে আসে গেল সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে। সিএসইতে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ পাশাপাশি ডেরিভেটিভ ও অপশন মার্কেটও চালু করার জন্য প্রস্তুত করা হবে। আজ যে স্বপ্নের যাত্রা শুরু হচ্ছে তার পুরোপুরি বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে তিন বছর। ৩৬ মাস পর আপনারা নতুন এক সিএসই দেখবেন। যেটা হবে আরও আধুনিক, আরও নিরাপদ। থাকবে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড অটোমেশন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের সঙ্গে সঙ্গেই তা সেটেলমেন্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ ক্রেতা শেয়ার বুঝে পান, আর বিক্রেতা বুঝে পান অর্থ। কিন্তু আমাদের সেটেলমেন্ট সাইকেল এখনো টি-২। অর্থাৎ শেয়ার কেনার দুদিন পর শেয়ারটি বিক্রি করা যায়। একইভাবে শেয়ার বিক্রির টাকাও দুদিন পর বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্টে পৌঁছায়। মাঝের সময়ে টাকাটা থাকে ব্যাংকিং চ্যানেলে। এ সময়ে অর্থগুলো ব্যবহার করে মুনাফা হাসিল করছে ব্যাংকগুলো। অথচ বিনিয়োগকারীরা এ অর্থের কোনো সুবিধাই পান না। আমাদের ট্রেড সাইকেল পরিবর্তন করা উচিত। এবিজি লিমিটেড এ অবস্থা পরিবর্তনে কাজ করবে।
সেকেন্ডারি মার্কেটের পাশাপাশি আমাদের প্রাইমারি মার্কেট ও স্মলক্যাপ (ছোট মূলধনী কোম্পানি) মার্কেটেও সংস্কার আনতে হবে। কারণ, নামসর্বস্ব কোম্পানিগুলো ভুয়া প্রসপেকটাস দাখিল করে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এর সঙ্গে ইস্যু ম্যানেজার ও অডিট কোম্পানিগুলোর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এ ইস্যুগুলো বিনিয়োগকারীদের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। ফলে অনেক কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসার পর দেউলিয়া হয়ে গেলেও বিনিয়োগকারী অর্থ ফেরত পাননি। এমন পরিস্থিতিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ছাড়া মানুষের আস্থা ফেরানো সম্ভব নয়। এবিজি লিমিটেড ও সিএসই যৌথভাবে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করবে।
দেশে সরকারি-বেসরকারি বহু কোম্পানি হাজার কোটি টাকা মুনাফা করলেও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসছে না। কারণ পুঁজিবাজারে এলে বছরে চারটি প্রান্তিকে আর্থিক হিসাব দিতে হবে, বিনিয়োগকারীদের সম্পদ ও আয়-ব্যয়ও দেখাতে হবে। বছর শেষে করতে হবে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। ফলে ইচ্ছা করলেও কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অর্থ পাচার কিংবা আত্মসাৎ করতে পারবেন না। স্বচ্ছতার আওতায় আসতে হবে। এটা তারা করতে চান না। তাই সরকারের পক্ষ থেকে বড় মুনাফাধারী বহুজাতিক কোম্পানির কর সুবিধা কমিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা উচিত। এতে পুঁজিবাজারের মূলধন বাড়ার পাশাপাশি গভীরতাও বাড়বে। বিনিয়োগকারীরাও পুঁজিবাজারে আগ্রহ পাবে।
বড় কোম্পানিগুলো যেমন পুঁজিবাজারে আসতে চায় না, ঠিক তেমনি কিছু কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে চাইলে তাদের নানা চড়াই-উতরাই পার হতে হয়। যেমন ধরুন কোনো কোম্পানি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য অর্থ উত্তোলনের জন্য বিএসইসিতে আবেদন করেছে। কিন্তু কোম্পানিটিকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২২ সালে। এর মধ্যেই কোম্পানি ব্যাংকে ধারদেনা করে সম্প্রসারণের কাজ শেষ করেছে। এমনটি হওয়া উচিত নয়। নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা উচিত। পাশাপাশি শুধু এনআইডি ও মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাপের মাধ্যমে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ থাকা উচিত। এতে করে নতুন নতুন বিনিয়োগকারী যুক্ত হবেন।
সাধারণ বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্যও বিনিয়োগপ্রক্রিয়া সহজ করা উচিত। তাদের পুঁজিবাজারে আনতে শক্তিশালী একটি ইউনিট খুলতে হবে। এই ইউনিট থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগের জন্য প্রলুব্ধ করা হবে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ কৌশল শেখানোর পাশাপাশি তাদের সহজ শর্তে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রাখতে হবে।
মোটাদাগে, বাংলাদেশ যেভাবে উন্নয়নের সোপানে নতুন নতুন সাফল্যের ভিত রচনা করছে, তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে একটি সুষম, সুশৃঙ্খল ও টেকসই পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে হবে। আর এ লক্ষ্যে যত ধরনের সেবা ও সহায়তা প্রয়োজন, সব নিয়েই বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বসুন্ধরার এবিজি লিমিটেড।
উন্নত বিশ্বের অর্থনীতি আজ ডিজিটাল অর্থনীতি। বাংলাদেশ সরকারের ভিশন-২০৪১ পূরণের লক্ষ্যে মূল ভূমিকা রাখবে এ ডিজিটাল অর্থনীতি। আর এ ক্ষেত্রে এবিজি লিমিটেড পুঁজিবাজারে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ডিজিটাল অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত করতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। পুঁজিবাজার ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে আমরা চাই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করতে, যার মাধ্যমে অংশীদার হতে চাই ডিজিটাল অর্থনীতির বাংলাদেশ গড়তে।
লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বসুন্ধরা গ্রুপ ও এবিজি লিমিটেড
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ছিনতাই, মারামারি এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা পদ পেয়েছেন। কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন অছাত্ররা। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে সর্বোচ্চ ১২১ সদস্যের কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও কমিটিতে পদ পেয়েছেন ৩৮৮ জন। অন্যান্য শাখা কমিটিতে পদ থাকার পরও ঘোষিত কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন কয়েকজন। আবার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকে পদ পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে।
চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস্ বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আকতারুজ্জামান সোহেলকে সভাপতি এবং দর্শন বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান লিটনকে সাধারণ সম্পাদক করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
গত মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করা হয়। বিজ্ঞপ্তি মঙ্গলবার রাত সোয়া ৯টায় ছাত্রলীগের অফিশিয়াল ফেইসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়। রাত সোয়া ১২টায় বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক তাসমিয়া মেহরিনকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে। অফিশিয়ালি ঘোষণার পর কমিটিতে সংযোজন-বিয়োজন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহান খান বৃহৎ এই কমিটিকে শুভঙ্করের ফাঁকি বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘কমিটিতে বহিষ্কৃত কারও থাকা অন্যায়। ছাত্রলীগে এ ধরনের কমিটি হতে পারে না। কোনো ইউনিটে পদে থাকা অবস্থায় নতুন করে অন্য ইউনিটের পদে থাকা ছাত্রলীগের জন্য অবমাননাকর।’
জাবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি হয়েছেন ১০১ জন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ১১ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ১১ জন, সহ-সম্পাদক ৬৬ জন ও সদস্য ৫৫ জন। বিভিন্ন সম্পাদক ও উপ-সম্পাদক পদে আরও ১৪২ জন পদ পেয়েছেন। এছাড়া, একজন সভাপতি ও একজন সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর একটি ভ্রমণবিষয়ক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাড়ে পঁচানব্বই হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন ও কর্মী সৈয়দ লায়েব আলীর বিরুদ্ধে। লিটন বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আর সৈয়দ লায়েব আলী সহ-সভাপতির পদ পেয়েছেন।
২০১৯ সালের ৩০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীর জামাতাকে মারধর করে ছিনতাই ও তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে বহিষ্কৃত সরকার ও রাজনীতি বিভাগের আল-রাজি সরকার পেয়েছেন উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদকের পদ এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শাহ মোস্তাক আহমেদ সৈকত হয়েছেন সহ-সভাপতি।
২০১৯ সালের ২২ জুলাই রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের ঘটনায় ১১ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়। তাদের মধ্যে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ফয়জুল ইসলাম নীরব পেয়েছেন উপ-ক্রীড়া সম্পাদকের পদ ও ইতিহাস বিভাগের সারোয়ার হোসেন সাকিল হয়েছেন উপ-কৃষি সম্পাদক।
২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে লাঞ্ছনা এবং এক সংবাদকর্মীকে মারধরের ঘটনায় সাময়িক বহিষ্কৃত বাংলা বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শুভাশীষ ঘোষ পেয়েছেন উপ-ধর্ম সম্পাদকের পদ।
চলতি বছরের ২ আগস্ট বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের অতিথিকক্ষে এক সাংবাদিককে নির্যাতনের দায়ে বহিষ্কৃত আইন ও বিচার বিভাগের মাসুম বিল্লাহ হয়েছেন সহ-সম্পাদক। আর গত ৬ আগস্ট মওলানা ভাসানী হল ছাত্রলীগের এক কর্মীকে মারধরের ঘটনায় সাময়িক বহিষ্কৃত খালিদ হাসান ও সাব্বির হোসেন পেয়েছেন সদস্য পদ।
চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী এলাকার একটি ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ভাঙচুর ও লুটপাটে অভিযুক্তদের মধ্যে সহ-সভাপতি হয়েছেন সাজ্জাদুল ইসলাম ও এহসানুল হক, আর সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন ফারসাদ হোসেন ও মেহেদী জয়।
এছাড়া র্যাগিং, মারধর প্রভৃতি কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নানা মেয়াদে বহিষ্কৃত এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনায় বিতর্কিত আরও অন্তত ২০ জন কমিটিতে পদ পেয়েছেন।
এর বাইরে শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত নন এমন অনেকেই পদ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর শেষ হয়েছে। পরীক্ষায় ফেল করে নানাভাবে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখলেও বড়জোর ৪৪তম ব্যাচ পর্যন্ত ছাত্রত্ব আছে। অথচ পূর্ণাঙ্গ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে স্থান পেয়েছেন ৪২ ও ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়া কেউ কমিটিতে পদ পাওয়ার যোগ্য নন।
পদবঞ্চিত কর্মীরা বলছেন, কিছু নেতাকর্মী জেলা-উপজেলায় পদে থাকার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকা জেলা উত্তরের সহ-সভাপতি শান্ত মাহবুবকে দেওয়া হয়েছে ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদকের পদ। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা হয়েছেন কর্মসংস্থান সম্পাদক এবং বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি থোয়াই মহাজন হয়েছেন সদস্য।
নতুন কমিটির উপ-মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণা সম্পাদক ফারহান আনজুম তানজিল বলেন, ‘কমিটিতে যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হয়নি। বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত, অবৈধভাবে হলে থাকা পোষ্য কোটায় ভর্তি শিক্ষার্থী ও মাদক কারবারে অভিযুক্তরাও পদ পেয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘যেসব ছাত্রলীগ নেতাকর্মী অনেকদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং ইতিমধ্যে শিক্ষাজীবন শেষ করেছে তাদের করোনা-পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান দিয়েছি। আর বিভিন্ন সময়ে যারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে যুক্ত ছিল তাদের দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করেছি এবং শুধরানোর সুযোগ দিয়েছি। তাই অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকার পরও তাদের কমিটিতে রেখেছি।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা বলেন, ‘কমিটি গঠনে কোনো অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তার ব্যাখ্যা দেবেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে কল ও বার্তা পাঠালেও তারা সাড়া দেননি।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচন-২০২৩ এ সভাপতি পদে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সিনিয়র রিপোর্টার মুরসালিন নোমানী এবং সাধারণ সম্পাদক পদে দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র রিপোর্টার মাইনুল হাসান সোহেল নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন দৈনিক দেশ রূপান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার তোফাজ্জল হোসেন রুবেল।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিআরইউ কার্যালয়ে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এর আগে সকাল ৯টা থেকে ডিআরইউর নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ভোট গণনার পর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার মনজুরুল আহসান বুলবুল।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সভাপতি পদে নির্বাচিত মুরসালিন নোমানী পেয়েছেন ৬৩৫ ভোট আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাসসের কবির আহমেদ খান পেয়েছেন ৫৪৩ ভোট। এছাড়া আরেক সভাপতি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মিঠু (বিদায়ী কমিটির সভাপতি) পেয়েছেন ২৬৪ ভোট। সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন তিন জন। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে মাইনুল হাসান সোহেল পেয়েছেন ৪২২ ভোট আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ টিভির মহিউদ্দিন পেয়েছেন ৩৮৩ ভোট। এই পদে ৬ জন প্রার্থী ছিলেন। তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক পদে তোফাজ্জল হোসেন রুবেল পেয়েছেন ৭৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মানবজমিনের রাশিম মোল্লাহ পেয়েছেন ৫৫৮ ভোট।
নির্বাচিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মুরসালিন নোমানী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রবীণ ও নবীনদের সমন্বয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে সংগঠনটি পরিচালনা করব। পেশাদার সাংবাদিকদের এ সংগঠনে বিভিন্ন মতের লোক থাকলেও পেশাদারিত্বের ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ থাকব এবং এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন রুবেল বলেন, ‘আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাব। সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় দেশীয় অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ততার পাশাপাশি সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করে এমন আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থার সঙ্গেও সমন্বয় করে বিভিন্ন সভা-সেমিনারের আয়োজন করা হবে।’
নির্বাচিত অন্যরা হলেন : সহসভাপতি দীপু সারোয়ার, যুগ্ম সম্পাদক মঈনুল আহসান, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন, দপ্তর সম্পাদক কাউসার আজম, নারী বিষয়ক সম্পাদক মরিয়ম মনি (সেঁজুতি), প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামাল উদ্দিন সুমন, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিজান চৌধুরী, কল্যাণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ। এছাড়া কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মনিরুল ইসলাম মিল্লাত, ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, মহসিন বেপারী, মোজাম্মেল হক তুহিন, কিরণ সেখ, এস মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ও মো. ইব্রাহিম আলী।
মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যুতে মগজের কর্মক্ষমতা লোপ পাওয়ার ব্যাধির নাম আলঝেইমার্স। কয়েক দশকের প্রচেষ্টায় বারবার ব্যর্থতার পর অবশেষে স্মৃতিভ্রমের যন্ত্রণা-অসহায়ত্বের রোগ চিকিৎসায় প্রথম কোনো ওষুধ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। আলঝেইমার্স আক্রান্ত মস্তিষ্কের কোষ ধ্বংসের গতি কমিয়ে দেওয়ার এই ওষুধের আবিষ্কারকে ‘যুগান্তকারী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নতুন এই ওষুধ মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু কমিয়ে আলঝেইমার্স বৃদ্ধির গতি ধীর করে দিতে পারে। এর আগে আর কোনো ওষুধ এই সাফল্য দেখাতে পারেনি। ‘লেকানেম্যাব’ নামের এই ওষুধ কাজ করে আলঝেইমার্সের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে। যদিও রোগের বৃদ্ধি পুরোপুরি থামিয়ে দেওয়া বা রোগীকে সারিয়ে তোলার সাফল্য এ ওষুধ দেখাতে পারেনি। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এর প্রভাব নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে। তারপরও আলঝেইমার্সের ওষুধ উদ্ভাবনে বহু বছরের ব্যর্থতার কথা মাথায় রেখে লেকানেম্যাবকে ‘যুগান্তকারী’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। আলঝেইমার্স হলো মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ, যা ডিমেনশিয়ার একটি সাধারণ রূপ। একে বলে প্রগ্রেসিভ নিউরোলজিক ব্যাধি, যাতে মস্তিষ্কের কোষগুলো ধীরে ধীরে মারা যায়। সাধারণত ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের এ রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি। অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে কম বয়য়েও এ রোগ হতে পারে। স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া হলো আলঝেইমার্সের প্রাথমিক লক্ষণ। একসময় রোগীর কগনিটিভ কার্যকারিতা বা পারিপাশির্^ক সচেতনতা হ্রাস পেতে থাকে। সাধারণ বিষয়গুলো ভুলে যাওয়ার পাশাপাশি তৈরি হয় বিভ্রম। একপর্যায়ে খাওয়াসহ দৈনন্দিন কাজও নিজে করতে পারে না রোগী। ঠিক কেন আলঝেইমার্স হয়, তা এখনো জানা যায়নি। গবেষকরা বলছেন, বয়সের কারণে মস্তিষ্কের পরিবর্তন; কোষের বুড়িয়ে যাওয়া, জেনেটিক, পরিবেশগত এবং জীবনশৈলীর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে আলঝেইমার্সের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। মস্তিষ্কে অ্যামিলয়েড বিটা নামে একধরনের প্রোটিন তৈরি হয়। আলঝেইমার্স রোগীদের ক্ষেত্রে ওই প্রোটিন রক্তকণিকার সঙ্গে দলা পাকিয়ে মস্তিষ্কের কোষের ফাঁকে ফাঁকে অ্যামিলয়েড স্তর তৈরি করে। সে কারণে তাদের মস্তিষ্কের কোষ দ্রুত মারা যেতে থাকে। বিবিসি জানিয়েছে, ‘লেকানেম্যাব’ নামের ওষুধটি অ্যামিলয়েডের ওই আঠালো স্তরে আক্রমণ করে এবং কোষের ওপর অ্যামিলয়েডের আস্তর জমার গতি কমিয়ে দেয়। সে কারণে এই ওষুধকে আলঝেইমার্সের গবেষণায় বড় অগ্রগতি বলে মনে করছেন গবেষকরা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘আন্দোলন দমন করার জন্য আপনারা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কিন্তু দেশের ইতিহাস বলে পাকিস্তানিরা পারেনি, স্বৈরাচার এরশাদ পারেনি, যতই ষড়যন্ত্র করেন না কেন, আপনারাও পারবেন না।’
গতকাল বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণ জেগে উঠেছে। কারণ এ আন্দোলন শুধু বিএনপির আন্দোলন না। এ আন্দোলন শুধু খালেদা জিয়ার আন্দোলন না। তারেক জিয়ার আন্দোলন না। এটি জনগণের মুক্তির আন্দোলন। জনগণ গণতন্ত্র ফিরে চায়। ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়, বাঁচার অধিকার ফিরে পেতে চায়। দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, চাল, ডাল, পানি, গ্যাস সব জিনিস ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। জ¦ালানির তেল, পেট্রোলের দাম হুহু করে বাড়ছে। এর প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষরা, ছাত্ররা, যুবকরা অকাতরে প্রাণ দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের দাবি নিয়ে আমরা বিভাগীয় সমাবেশ শুরু করার পর তাতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে সরকার ভীত হয়ে পড়েছে। সরকার আক্রমণ করছে, গায়েবি মামলা দিচ্ছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গত সাত দিনে ১৬৯টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোতে আসামি করা হয়েছে ৬ হাজার ৬২৩ জনকে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১৫ হাজার বেশি নেতাকর্মীকে। কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’
সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করুন : সমাবেশে মির্জা ফখরুল সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে আবার বলছি, আপনাদের এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করুন। জনগণের ভাষা বুঝতে পেরে নয়াপল্টনে আমাদের ১০ তারিখ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। না নিলে দায়দায়িত্ব আপনাদের।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন সমাবেশ করা সম্ভব হচ্ছে না, তার কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘যে জায়গা আপনারা (সরকার) দিতে চান, সেই জায়গায় আমরা কমফোর্টেবল নই, খুব পরিষ্কার কথা। চারদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা, যাওয়ার রাস্তা নেই। একটি গেট, যে গেট দিয়ে দুয়েকজন মানুষ ঢুকতে পারে, বের হতে পারে না। যানজটের যুক্তি খোঁড়া যুক্তি। শনিবার দিন সরকারি ছুটির দিন। সেদিন যানজট থাকে না। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ সফল করতে আমরা সব করব।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেটে রুহুল কবির রিজভীসহ বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর যদি খালেদা জিয়া সমাবেশে যোগ দেন, তাহলে আদালত ব্যবস্থা নেবে। বিএনপি সমাবেশের নামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করলে ভুল করবে। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন) আয়োজিত বার্ষিক প্রশিক্ষণ সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
যদি সমাবেশে খালেদা জিয়া যোগদান করেন, তার জামিন বাতিল হবে কি না, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে আদালত জামিন দিয়েছে। তিনি যদি সমাবেশে যান, সেই বিষয়ে আদালত ব্যবস্থা নেবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নারী পুলিশ সদস্যরা বর্তমানে পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এমনকি মাঠপর্যায়ে পুলিশি কাজের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নারী পুলিশ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী পদক্ষেপে নারী পুলিশের সংখ্যা কয়েকটি ধাপে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ১৫ হাজার ৫৬১ জন হয়েছে; যা সামগ্রিক পুলিশ সদস্যের ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। মাঠপর্যায়ে পুলিশি কাজের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নারী পুলিশ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। জেলা পুলিশ, মেট্রো পুলিশসহ বিশেষায়িত নৌ-পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, রেলওয়ে ও হাইওয়ে পুলিশ এবং শিল্প পুলিশে নারী সদস্যের কার্যক্রমে গতি সঞ্চার হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সাতটি মেট্রোপুলিশসহ পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার সহিংসতার শিকার নারী শিশুর চিকিৎসা সহায়তা, আইনগত ব্যবস্থা, সাময়িক আশ্রয়দানসহ মনো-সামাজিক কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে নিষ্ঠার সঙ্গে জেন্ডার সংবেদনশীল সেবাদানে নিয়োজিত রয়েছে। রোহিঙ্গা নাগরিকদের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে নারী শিশুর নিরাপত্তায় পুলিশের নারী সদস্যরা আস্থা ও বিশ^াস অর্জন করেছে। মামলা তদন্ত, ফরেনসিক, জঙ্গি দমন, গোয়েন্দা কার্যক্রম, বিমান চালনা, ভিভিআইপি প্রটেকশন, ইমিগ্রেশনসর্বোপরি জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ প্রভৃতি ক্ষেত্রে পুলিশের নারী সদস্যরা দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে। তিনি বলেন, মুজিববর্ষের অঙ্গীকার হিসেবে সমগ্র দেশের থানাগুলোতে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সহায়তা ডেস্কের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকার সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবাদানের ক্ষেত্রে অনন্য মাত্রা যোগ করবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণ, দেশ-বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নারী পুলিশ পেশাগত দক্ষতার উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন) নারী পুলিশের চলার পথকে সুগম করতে যেমন পেশাগত উন্নয়নে অবদান রাখছে, তেমনি কমিউনিটির মধ্যেও জেন্ডারভিত্তিক অপরাধবিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বর্তমানে পুলিশের মোট জনবলের ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী সদস্য। এটি শুধু একটি সংখ্যা নয়, এটি জনবান্ধব পুলিশিং। সেবা ও আস্থার এক সম্মিলিত উচ্চারণ। নারীর সাহসী ও সক্রিয় ভূমিকা দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিম-লে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে ও নারী-শিশুর নিরাপত্তাবোধ তৈরিসহ মানবাধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে পুলিশের নারী সদস্যদের প্রতি অধিক জনপ্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নারী পুলিশের অবদানসংবলিত প্রকাশনা-“পুলিশ উইমেন ইন ব্লু হেলমেট : টেল অব সাকসেস অ্যান্ড প্রাইড” এ বইটি পড়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নারীর কাজ করার ক্ষেত্রে অধিকতর আগ্রহী ও সংকল্পবদ্ধ হবে। অ্যাডিশনাল আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ফাতেমা বেগমের “আমার পুলিশ হওয়া” গ্রন্থটি চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীদের উদ্বুদ্ধ করবে। বিপিডব্লিউএনের এ ধরনের অনুপ্রেরণামূলক প্রকাশনার উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।’
বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) সভাপতি ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিআইজি (প্রটেকশন আ্যন্ড প্রটোকল) আমেনা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। যে ইনিংসটি চোখে লেগে আছে ওপেনার লিটন দাসের। মুশফিকের এদিনের মতো ইনিংস বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারে ব্যাটেই দেখেননি বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায় বাংলাদেশ ইনিংসের পরই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ছয় নম্বরে খেলতে নেমে মুশফিক ৬০ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন। এ সময় মুশফিকের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি যতদিন খেলছি, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এভাবে শেষের দিকে গিয়ে ১০০ করেনি।’
মুশফিকে মুদ্ধ লিটন বলে যান, ‘যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে। মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন, আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল।’
‘যদিও রান বেশি নয়, ৪০ বা এরকম ছিল (২৬ বলে ৪৪)। এটাই কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে তিন শর বেশি রান করতে। আজকের ইনিংসটা তো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে। রানের হিসেবে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। সুবাদে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।
একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইন প্রণয়নই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন আইনের যথাযথ প্রয়োগ বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
সোমবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে আইন কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২২ পেশ করতে গেলে রাষ্ট্রপতি এ নির্দেশ দেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলে তা দূর করতে হবে।
জয়নাল আবেদীন জানান, কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। এ সময় কমিশনের সদস্য বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী এবং বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎকালে কমিশনের চেয়ারম্যান প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক ও কমিশনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন।
পরে রাষ্ট্রপতি দেশের বিদ্যমান আইনকানুন যুগোপযোগী ও মানুষের জন্য কল্যাণকর করতে উদ্যোগ নেয়ার জন্য আইন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।
এ সময় রাষ্ট্রপতির সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
ইরান জানিয়েছে, সৌদি আরব তাদের দেশের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এক চিঠিতে সৌদি আরবের বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ এ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে ইরানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। মাত্র কিছুদিন আগে দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্স্থাপনের বিষয়ে সম্মত হওয়ার পর এ আমন্ত্রণ পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই নতুন রাজনীতির ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ সফরের এই আমন্ত্রণের বিষয়টি এক টুইটে জানিয়েছেন ইরানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামশিদি। তিনি জানান, রাইসি এই আমন্ত্রণকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইরান প্রস্তুত আছে বলে জোর দিয়েছেন।
পৃথকভাবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান সাংবাদিকদের বলেছেন, এ দুই দেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে একটি বৈঠকের বিষয়ে সম্মত হয়েছে আর এ বৈঠকের জন্য সম্ভাব্য তিনটি স্থানের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে তিনি স্থানগুলোর নাম জানাননি এবং বৈঠকটি কখন হতে পারে সে বিষয়েও কিছু বলেননি।
চীনের উদ্যোগে দুপক্ষের মধ্যে কয়েকদিন ধরে আলোচনা চলার পর আকস্মিকভাবে এ দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে, সম্পর্কের এ উন্নতি বেগবান হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। উভয় দেশই দুই মাসের মধ্যে ফের দূতাবাস খোলার এবং বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্ক পুনর্স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ দুই দেশের সম্পর্কের এই উন্নতিকে সতর্কভাবে স্বাগত জানিয়েছে। এর আগে তাদের মধ্যে পুনর্মিলনের অনেক প্রচেষ্টা ভেস্তে গিয়েছিল।
বিক্ষোভকারীরা তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলা চালানোর পর ২০১৬ সালে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে রিয়াদ। সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর সৌদি আরব প্রখ্যাত শিয়া মুসলিম ধর্মীয় ইমাম শেখ নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলে প্রতিক্রিয়ায় শিয়া অধ্যুষিত ইরানের বিক্ষুব্ধরা সৌদি দূতাবাসে হামলা চালায়। তারপর থেকে সুন্নি প্রধান সৌদি আরবের সঙ্গে শিয়া প্রধান ইরানের উত্তেজনা প্রায়ই চরম আকার ধারণ করেছে। উভয়েই একে অপরকে মধ্যপ্রাচ্যে প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টারত হুমকি সৃষ্টিকারী শক্তি হিসেবে দেখে আসছিল। প্রতিবেশী সিরিয়া ও ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধসহ আঞ্চলিক অনেক সংঘাতে তারা পরস্পর বিরোধীপক্ষকে সমর্থন দিয়ে এসেছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহিয়ান আরও বলেছেন, বাহরাইনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে ইরান আশা করছে। আব্দুল্লাহিয়ান বলেন, আমরা আশা করছি, ইরান ও বাহরাইনের মধ্যে কিছু বাধা দূর হবে এবং আমরা দূতাবাসগুলো ফের খুলতে মূল পদক্ষেপগুলো নেব।
ইরান মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী আরব দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়নের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে; এসব দেশের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডানও আছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি ও ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্কের বরফ গলেছে যা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিকে পাল্টে দিতে পারে।
আলোচিত সোনা কারবারি রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভের জেল খাটার নামে প্রতারণা বিষয় নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। তার আসল আশ্রয়দাতা কে, তা এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে থাকলেও তদন্তকারী সংস্থাগুলো কয়েকজনের নাম উদঘাটন করতে পেরেছে। ওইসব নাম যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে বনানীতে এসবির পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে রক্ষা করতে দীর্ঘদিন গুলশান ও বনানী এলাকায় দায়িত্বরত ইন্সপেক্টর সোহেল রানা সব ধরনের সহায়তা করেছেন। সোহেল রানা বর্তমানে বরখাস্ত হয়ে ভারতের একটি কারাগারে আটক আছেন। চাঁদপুরের কচুয়ার আইনপুর এলাকার বাসিন্দা আবু ইউসুফ লিমনকে কোটি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে আরেকটি জজ মিয়ার নাটক সাজানোর পরিকল্পনা করেন। টাকা দেওয়া ছাড়াও জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানোর আশ্বাস দিয়ে আরাভের পরিবর্তে লিমনকে কারাগারে থাকতে বলা হয়। তাছাড়া পরিবারের ভরণপোষণ করার কথাও বলা হয়েছিল। কারাগারে যাওয়ার আগে তাকে লাখ টাকাও দিয়েছেন আরাভ। আর এসব কাজ চূড়ান্ত করার বিষয়টি পুুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অবহিত ছিলেন বলে একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
এদিকে নিরপরাধ লিমন পরিবার গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, সহজ-সরল ছেলেটিকে আরাভ চক্র খুনের মামলার আসামি পর্যন্ত বানিয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে পুলিশও জড়িত। বড় মাপের ক্রিকেটার ও টাকার প্রলোভন দেখিয়েছে চক্রটি। আরাভ নিজেকে আমেরিকার নাগরিক ও চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেছেন। লিমনকে কারাগার থেকে বের করতে ৫ লাখ টাকার ঋণ করেছেন লিমনের বাবা নুরুজ্জামান। তিনি কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের কার্যালয়ে এমএলএস পদে চাকরি করছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, আরাভ আপাদমস্তকের একজন প্রতারক। গরিব ও নিরীহ একটি ছেলেকে ‘খুনি’ বানাতে চেয়েছে। আরাভের অপকর্মে বেশি সহায়তা করেছে ইন্সপেক্টর সোহেল রানা। আর তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাদের আশকারা পেয়ে সোহেল বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের শেল্টারে না পেলে আরাভ এত বড় সাহস দেখাতে পারত না। তিনি আরও বলেন, আরাভকে যারা সহায়তা করেছেন তাদের তালিকা প্রায় গুটিয়ে আনা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। লিমনকে লোভনীয় অফার দেওয়া হয়েছিল। কোটি টাকা দেওয়ার আশ^াসের পাশাপাশি তাকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আর সেই অফারে লিমনও স্বাদ নেয়। চলে যায় সোজা কারাগারে। এসব বিষয় আমাদের নজরে এলে গোপনে তদন্ত করি। পুলিশের কয়েকটি ইউনিটও আলাদাভাবে তদন্ত করে সত্যতা পায়। তথ্যগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়।
আরেক জজ মিয়ার নাটক : পুলিশ সূত্র জানায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আলোচিত জজ মিয়ার মতোই আরেক জজ মিয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন আরাভ। পুলিশ হত্যা মামলা থেকে রক্ষা পেতে কোটি টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নামেন তিনি। দেশত্যাগের আগে আবু ইউসুফ লিমনকে বাছাই করেন তিনি। ফেসবুকের মাধ্যমে কৌশলে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন আরাভ। মিথ্যা আশ^াস দিয়ে তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বরখাস্ত হওয়া ইন্সপেক্টর সোহেল রানার সঙ্গে। তিনি ‘ওপরের মহলকে’ ম্যানেজ করার কথা বলে হাতিয়ে নেন অর্থ। সহায়তা করেন আরেকটি জজ মিয়ার নাটক বানাতে। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর রবিউল ইসলাম আপন সেজে ঢাকা মুখ্য মহানগর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন লিমন। ৯ মাস কারাভোগের পর তিনি জামিন পান। ২০১৬ সালে লিমন এসএসসি পাস করেছেন। পরে কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ায় ম্যার্টসে চার বছরমেয়াদি কোর্সে অংশ নেন। কিন্তু আরাভের পরামর্শে তিনি ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়েই ঢাকায় চলে আসেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন এবং ক্রিকেট খেলেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার সিংগাড্ডা ইউনিয়নের আইনপুর উত্তরপাড়া। আয়শা আকতার লিজা ও খাদিজা আক্তার তিশা নামে তার দুই বোন আছে। অভাব অনটনের মধ্যে লিমন বড় হয়েছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
লিমনের বাবা নুরুজ্জামান গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, “আরাভকে আমরা ‘আপন’ হিসেবেই চিনি। সে একটা মহাপ্রতারক। সে আমেরিকার নাগরিক ও চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আমার সঙ্গে কয়েকবার কথা বলেছে। আপন আমাকে জানিয়েছিল, আপনার ছেলেকে আমি ছোট ভাই হিসেবে দেখি। তাকে বিকেএসপিতে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানো হবে। আপনাদের কোনো অভাব-অনটন থাকবে না। প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ দেওয়া হবে। এসব কথা বলার পর আমার মনে ‘খটকা’ লাগে। এরই মধ্যে লিমনকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। নিখোঁজ থাকায় কচুয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।” তিনি আরও বলেন, ‘২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি জানতে পারি লিমন কারাগারে আছে। পরে আমি কাশিমপুর কারাগারে যাই। কিন্তু করোনা প্রকোপের কারণে তার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। গ্রামের বাড়িতে এসে লোকজনকে বিষয়টি অবহিত করি। ছেলের মুক্তির জন্য একটি এনজিও থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ করে লিমনকে কারাগার থেকে বের করা হয়। আপন আমাদের জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়েছে।’ তাকে দেশে ফেরত এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান নুরুজ্জামান।
জাতীয় পরিচয়পত্রেও জালিয়াতি : সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশকারা পেয়ে অল্প সময়ে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভ। তাদের মাধ্যমে গুলশান ও বনানী এলাকার নামিদামি মডেলদের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার আড়ালে সোনা চোরাকারবার চালান। ২০২১ সালের ২ আগস্ট রাতে পিয়াসাসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলে আরাভের নামটিও আসে। কিন্তু পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের কারণে তার নামটি প্রকাশ করা হয়নি। সমাজের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর ছবি উঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার কাজটিও চালাতেন আরাভ। সোনা কারবারি আরাভ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া এলাকায় রবিউল ইসলাম ওরফে হৃদয় ওরফে সোহাগ মোল্লা নামে পরিচিত। তিন ভাইবোনের মধ্যে আরাভ বড়। বিয়ে করেছেন পাঁচটি। তার একটি সন্তান আছে। কিছুদিন আগে সন্তান ও বাবা-মা ও দুই বোনকে দুবাই নিয়ে যান আরাভ। দেশে এলেও এলাকায় তেমন একটা যেতেন না। বেশিরভাগ সময় থাকেন গুলশান ও বনানী এলাকার অভিজাত হোটেলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুলশান এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে জানান, আরাভ মহাজালিয়াতি চক্রের সদস্য। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্রেও তিনি জালিয়াতি করেছেন। জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম লেখা আছে রবিউল ইসলাম। বাবার নাম মতিউর রহমান, মায়ের নাম লাকি এবং স্ত্রীর নাম রুমা। তিনি মাধ্যমিক পাস করেছেন এবং জন্মস্থান বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার কোদালিয়া ইউনিয়নে। অথচ তার বাড়ি গোপালগঞ্জ।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।