বাবা কী সেটা বুঝে ওঠার আগেই মেগুমির কাছ থেকে দূরে চলে যান তার বাবা। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে মা আসাকোর সংগ্রামী জীবন শুরু হয়। ধীরে ধীরে মেয়ে বড় হয়ে স্কুলের আঙিনায় পা রাখে। বিপদ যেন তখনই শুরু হলো চাকরিজীবী আসাকোর। মেগুমি যেন দিন দিন মানসিকভাবে বিমর্ষ হয়ে পড়ছে। বাবার অনুপস্থিতি তাকে অসুখী করে তুলছে। একপর্যায়ে সে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।
স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেও কোনো সমাধান পাননি আসাকো। আসলে জাপানে সিঙ্গেল প্যারেন্ট বা একা মা কিংবা বাবার সন্তানদের সমাজ ভালো চোখে দেখে না।
মেয়ের কষ্ট সইতে না পেরে আসাকো এক অদ্ভুত সমাধান খুঁজে বের করেন। তিনি শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন জাপানে আত্মীয় ভাড়া করার এজেন্সির কথা।
বিবিসি জানায়, এই এজেন্সিগুলো চুক্তিতে একজন অভিনেতাকে পাঠায় যিনি কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে যান কিংবা ডেটিংয়ে সঙ্গ দিতে যান কোনো নিঃসঙ্গ মানুষকে।
আসাকো এজেন্সিতে যোগাযোগ করেন মেয়ের জন্য বাবা ভাড়া করতে। অডিশনের মাধ্যমে বাবা হিসেবে বেছে নেওয়া হয় তাকাশি নামে ব্যক্তিকে।
তাকাশি একটা রেন্টাল এজেন্সি চালান, যেখানে ২০জন মানুষ নিয়মিত কাজ করেন। আর বিভিন্ন বয়সের এক হাজারের ওপর নারী-পুরুষ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন। তারা যেকোনো ধরনের পরিস্থিতিতে, যেকোনো নাম এবং বেশ ধারণ করে চাহিদামত চরিত্রে অভিনয় করেন।
আসাকো তাকাশির সঙ্গে কয়েকবার দেখা করেন। তিনি কেমন বাবার অভিনয় প্রত্যাশা করছেন সেটি বুঝিয়ে দেন।
এরপর আসাকো মেয়েকে একদিন বলেন, যে তার বাবা আবার বিয়ে করেছেন এবং তার সংসার আছে। কিন্তু তিনি মেয়েকে দেখতে চান। তার বাবা একজন ‘অভিনেতা’ বলে মেয়েকে জানান আসাকো।
মেগুমি মায়ের কথা শুনে কষ্ট পেলেও বাবার সঙ্গে দেখা করতে চান। প্রথম দেখাতেই তাকাশিকে বাবা মনে করেন মেগুমি। শুরু করে দেন মান-অভিমান আর বাবার অনুপস্থিতিতে কষ্টের কাহিনীর গল্প।
এরপর থেকে তাকাশির বাবার চরিত্রে অভিনয় শুরু হয়। মাঝে মাঝে এসে তিনি মা-মেয়েকে নিয়ে বাইরে কোথাও ঘুরতে যান, সিনেমা দেখতে যান একসঙ্গে এবং জন্মদিনে একসঙ্গে সময় কাটাতে থাকেন। এর মধ্যে ধীরে ধীরে মেগুমির আচরণে পরিবর্তনে আসতে থাকে।
মা আসাকো বলেন, “আমি দেখলাম মেগুমি আগের মতো আর বিষণ্ণ না, কথা বলা শুরু করেছে সে। হাসতে আর মানুষের সঙ্গে মিশতে শুরু করে। আমার তখন মনে হয় আমার কষ্ট সার্থক।”
তবে এর জন্য তাকাশিকে ফি হিসেবে দিতে হচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। প্রতিবারই দেখা করার জন্য তাকাশিকে দেওয়া হয় ৯০ মার্কিন ডলার।
তাকাশিও দেখতে পাচ্ছেন, বিষণ্ণ, চুপচাপ, দ্বিধাগ্রস্ত বাচ্চা মেয়েটি থেকে মেগুমি এখন সুখী আর আত্মবিশ্বাসী তরুণী হয়ে উঠছে।
তাকাশি এই সম্পর্ককে কেবলই একটি চাকরির অংশ হিসেবেই দেখছেন। এদিকে আসাকো তার উপর এই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন যে এই বন্দোবস্ত কখনো শেষ করতে চান না তিনি।
এদিকে যতই দিন যাচ্ছে মিথ্যার ডালপালা বাড়তে। আবার আসাকো এবং তাকাশি দুইজনই খুব শঙ্কায় থাকেন- মেগুমি যেদিন জেনে যাবে এই মিথ্যার বেসাতি, সেদিন কতই না কষ্ট পাবে মেয়েটা।
“আমার অবস্থা পৃথিবীতে প্রথম নয়। আরো কত মা হয়তো আরো বড় বড় মিথ্যার ঝুঁকি নিয়েছেন নিজের সন্তানকে একটু খুশি করার জন্য। হয়তো মেগুমি সেটা বুঝতে পারবে” যোগ করেন ডিভোর্সের কারণে এমন চ্যালেঞ্জে পড়া আসোকা।