মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

বেঙ্গালুরু থেকেও তাড়ানো হচ্ছে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’

আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:১৬ এএম

আসামের পর বাংলাভাষী মানুষদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে বেঙ্গালুরুয়েও । দুদিনের মধ্যে এসব লোকদের রাজ্য ছেড়ে বের হয়ে যেতে হবে।

বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে বলেছে, দক্ষিণ ভারতের বিজেপি শাসিত শহরটির পৌরসভা কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে উচ্ছেদ আতঙ্কে আছে হাজার হাজার বাংলাভাষী।

এসব বাংলাভাষীর অধিকাংশই দরিদ্র মুসলিম। তাদের দাবি, তারা আসলে পশ্চিমবঙ্গের লোক। একসময় কাজের সন্ধান এবং জীবিকা সূত্রে শহরটিতে এসেছেন।

আসামের নাগরিকত্ব তালিকার (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের পর থেকে ভারতের আরো কয়েকটি রাজ্যে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ তাড়ানোর দাবি তুলে বিজিপি।

তবে ডেডলাইন দিয়ে বাংলাভাষী এসব লোকদের তাড়ানোর সিদ্ধান্তে সর্বশেষ আলোচনায় এখন কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরু।

এসব দরিদ্র লোকদের তাড়ানোর জন্য ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চূড়ান্ত সময়সীমা ধার্য করে দিয়েছিল শহর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বামপন্থী সংগঠনগুলোর আন্দোলনের মুখে আরো দুদিন সময় বাড়ানো হয়েছে।

কিন্তু বাংলাভাষীদের কাছে ভারতীয় নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র থাকলেও রাজ্যের বিজেপির নেতা-বিধায়কদের দাবি, সেগুলোর বেশির ভাগই জাল এবং কর্নাটক থেকে এসব লোকদের তাড়াতেই হবে।

আসামের ৪০ লাখ বাংলাভাষী লোককে ‘অবৈধ নাগরিক’ ঘোষণা করায় সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই দেশটির সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়, বেঙ্গালুরুর অনেক বস্তিতে হাজার হাজার ‘বাংলাদেশি’ অবৈধভাবে বসবাস করছে। তাদের প্রত্যেকেই বেআইনিভাবে পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে এখানে থাকছে।

তিন মাস আগে দেশটির প্রথম সারির এক টিভি চ্যানেলের স্টিং অপারেশনে প্রতিবেদনে এক বাঙালি জানান, ‘বাংলাদেশের জায়গা-জমি ও কর্মসংস্থান নেই বলে তারা বাধ্য হয়ে সপরিবারে ভারতে চলে এসেছেন। টাকা দিয়ে এদেশের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন।’

মূলত এরপর থেকে রাজ্যের মহাদেবপুরার বিজেপি এমএলএ ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অরবিন্দ লিম্বাভালির নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশি খেদাও’ আন্দোলন শুরু হয়। ভারতের কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘের (আরএসএস) এই নেতা আদর্শ হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচারক হিসেবেও পরিচিত।

লিম্বাভালি কয়েকদিন আগে টুইটার বার্তায় ঘোষণা দেন, ‘অবৈধ বাংলাদেশিরা’ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিরাট হুমকি। কোনো শিল্প-কারখানায় বা সাইটে এসব লোকদের কাজ দিলে মালিকদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। এছাড়া এদেরকে তাড়ানোর জন্য শহরের সোনডেকোপ্পাতে ডিটেনশন সেন্টার তৈরি হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

এদিকে কর্নাটক বিজেপির মুখপাত্র ড. ভামান আচারিয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, আগে রাজ্যের অভিবাসী শ্রমিকরা বিহার বা উড়িষ্যা থেকে আসলেও গত কয়েক বছর ধরে যারা আসছেন তাদের অধিকাংশই ‘বাংলাদেশি’।

তার দাবি, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তারা প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে আসেন, এরপর সেখান থেকে তারা দক্ষিণ ভারতের দিকে চলে আসেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দেখতে পাচ্ছে, তাদের বেশিরভাগের পরিচয়পত্র জাল এবং তারা অবৈধভাবে এদেশে বাস করছেন।

তবে আতঙ্কিত বাঙালিদের পক্ষে পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জের সিপিএম এমপি মোহাম্মদ সেলিম বলেন, এরা আসলে নদীয়া-মালদা-মুর্শিদাবাদ জেলারই লোক।  কিন্তু বিজেপি নেতারা ‘উইপোকা’র মতো ফ্যাসিস্ট ভাষা ব্যবহার করে বাঙালিদের ওপর আক্রমণ করা শুরু করলে এদের ওপর খড়গ নেমে এসেছে।

তার দাবি, বিজেপিই চক্রান্ত করে বেঙ্গালুরুর মিউনিসিপাল করপোরেশনকে দিয়ে এই উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে। অথচ প্রায় সবারই রেশন কার্ড, গ্রাম পঞ্চায়েতের পরিচয়পত্র বা ঠিকানার প্রমাণ সবই আছে। এদের বেশির ভাগই অত্যন্ত গরিব মুসলিম।

এসব লোকদের শহর থেকে বের হয়ে যাওয়ার দুই দিনের বাড়তি সময়ের মধ্যে কেন্দ্র ও রাজ্যসরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলে তিনি জানান।

তবে বিজেপির দাবি, কর্নাটকে অন্তত চার লাখ ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বাস করছেন এবং তাদের স্থানীয় মানুষের আয়-রোজগারে ভাগ বসাচ্ছেন। তাই এই ইস্যুতে কোনো ধরনের আপোস চান না তারা।

২০১৯ সালের এপ্রিল বা মে মাসের দিকে ভারতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে রাজ্যটির গরিব অভিবাসী মুসলিম বাঙালিদের ওপর দুর্ভোগ নেমে আসছে সেই ইঙ্গিতই স্পষ্ট।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত