মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

শ্বাসরুদ্ধ অভিযানে শিশুর লাশ উদ্ধার, বাবা আটক

আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:০৭ পিএম

প্রায় ৬ ঘণ্টা বাড়ি ঘিরে রেখে রাজধানীর বাংলামোটরের বাসা থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে শ্বাসরুদ্ধকর এ অভিযান চালানো হয়।

পুলিশের সন্দেহ, মাদকাসক্ত বাবা নূরুজ্জামান ওরফে কাজল সাফায়াত নামে আড়াই বছরের শিশুটিকে হত্যা করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়েছে।

শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আড়াই বছরের ছেলে সাফায়াত ও পাঁচ বছরের সুরায়াত নিয়ে নূরুজ্জামান ১৬ বাংলামোটর লিঙ্ক রোডের বাসায় থাকতেন। এক ছেলেকে হত্যার খবর পেয়ে পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে যায়। এসময় তালাবদ্ধ বাসায় নূরুজ্জামান রামদা হাতে নিয়ে সুরায়াতকে জিম্মি করে রাখে। তালা ভাংতে গেলে সুরায়াতকেও হত্যা করতে পারে এই আশঙ্কায় পুলিশ কৌশলের আশ্রয় নেয়। তাকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা চলে। বিভিন্ন কথা বলে প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় নিয়ে নূরুজ্জামানকে বাসা থেকে বের করে সুরায়াতকে উদ্ধার করা হয়।

তিনি জানান, সাফায়াতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

মৃত শিশুটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন শাহবাগ থানার এসআই চম্পক চক্রবর্তী। তিনি জানান, শিশুটির শরীরে বড় ধরনের জখমের চিহ্ন নেই। তার কপালের বাম পাশে, থুতনির নিচে ও ঠোঁটে কালচে দাগ আছে। ময়নাতদন্তে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

নূরুজ্জামানের ভাই উজ্জ্বল দেশ রূপান্তরকে জানান, ভাই মাদকাসক্ত। এ কারনে সাফায়াত ও সুরায়াতের মা তাকে ছেড়ে চলে যায়। গতকাল সকাল ৭টার দিকে নুরুজ্জামান বড় ছেলে সুরায়াতকে কোলে নিয়ে রাম দা হাতে বাসার সামনে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। এর আগে মসজিদের মাইকে তিনি ঘোষণা দেন, তার ছোট ছেলে মারা গেছে।

অভিযানকালে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে ছিলেন র‌্যাব-২ এর উপপরিদর্শক শহিদুল ইসলাম। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, টেবিলে একটি শিশুকে সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছিল। পাশে আরেক ছেলেকে কোলে নিয়ে রামদা হাতে বসে ছিল বাবা।

এসময় নূরুজ্জামানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কোনো সহযোগিতা লাগবে কি না? উত্তরে তিনি বলেন, ‘কাউকে লাগবে না। আমি একটার দিকে আজিমপুর গিয়ে ছেলেকে দাফন করব।’

পরে পুলিশ পাশের মসজিদ থেকে একজন মৌলভী ডেকে আনেন। তার মাধ্যমে নূরুজ্জামানকে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়, শিশুটি মারা গেছে তার জানাজা ও দাফন প্রয়োজন। মৌলভীকে দিয়ে নূরুজ্জামানে বেরিয়ে আসতে রাজী করানো হয়। এরপর সুরায়াতকে নিয়ে বের হয়ে আসে নূরুজ্জামান। আর মৌলভী নিয়ে আসেন সাফায়াতের লাশ। পরে পুলিশ নূরুজ্জামানকে আটক করে।

ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিদর্শক আবদুস সহিদ বলেন, ‘আমরা বাসার ভেতরে একটা লাশ দেখতে পাই। ওই সময় নূরুজ্জামান হুমকি দিয়ে বলে আপনারা সরে যান। তা না হলে এই ছেলেকেও কুপিয়ে মেরে ফেলব। পরে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা সরে আসে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আজিম উদ্দিন জানান, মাদক সেবন ও বিক্রির অভিযোগে নূরুজ্জামান আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। শিশুটি মারা গেছে, না তাকে হত্যা করা হয়েছে তা ময়নাতদন্তে জানা যাবে। তিনি বলেন, পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে ভাই-বোনদের সঙ্গে নূরুজ্জামানের দ্বন্দ্ব চলছে বলে জেনেছি। তদন্তে এই বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত