বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভ

৩ শতাধিক শ্রমিক ছাঁটাই, মামলা খেল ৯ শতাধিক

আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:২৩ এএম

মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে টানা আট দিনের শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় তিন শতাধিক শ্রমিককে ছাঁটাই করেছে বিভিন্ন কারখানার কর্র্তৃপক্ষ, যাদের ছবিসহ তালিকা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে কারখানার ফটকে। ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৯২ জনের নাম উল্লেখসহ নয় শতাধিক শ্রমিকের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করেছেন মালিকরা।

এদিকে ভাঙচুরের অভিযোগে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা জয়নাল আবেদীনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আশুলিয়া থানার ওসি শেখ রিজাউল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব মামলায় এখন পর্যন্ত সাত-আটজন গ্রেপ্তার আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর মধ্যে কারখানায় ভাঙচুরসহ মারধরের ঘটনায় ক্ষতি, চুরি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে গত ১০ জানুয়ারি ৫৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩০০ শ্রমিকের বিরুদ্ধে একটি মামলা (১৭) করেছেন মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডাইং মিলস লিমিটেডের নিরাপত্তা কর্মকর্তা আবদুস সালাম। পরদিন এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহ আজিজ বাদী হয়ে ৬২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

একই দিন একই অভিযোগে নিট এশিয়া লিমিটেড কারখানার প্রধান ব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) আনোয়ারুল ইসলাম বাদী হয়ে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। ১২ জানুয়ারি অরবিট অ্যাপারেলস লিমিটেডের শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেদিনই মাহমুদ ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার এইচআর বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ শাহ আলম বাদী হয়ে ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। পরদিন হা-মীম গ্রুপের নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৬০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

গত সোমবার পর্যন্ত টানা আট দিনের শ্রমিক অসন্তোষের পর তা দমনে প্রশাসন কঠোর অবস্থান নেওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার থেকে তৈরি পোশাক শ্রমিকরা কাজে ফিরেছে। কিন্তু বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকদের ছাঁটাইও শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে আশুলিয়ার বুড়িরবাজার, জিরাবো ও কাঠগড়াসহ বিভিন্ন এলাকার এআর জিন্স প্রডিউসার, এফজিএস ডেনিম ওয়ার ও লিলি ফ্যাশনসহ কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকদের ছবিসংবলিত ছাঁটাইয়ের তালিকা কারখানার মূল ফটকে ঝুলতে দেখা যায়।

এসব তালিকায় তিন শতাধিক শ্রমিকের নাম রয়েছে। এ সময় প্রায় ১০টি কারখানায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার নোটিস ঝুলতে দেখা গেছে।

টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলন ছাড়া কোনো দাবি আদায় হয় না। তাই শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করে থাকে। শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় যারা নাশকতাকারী এবং ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কোনো নিরপরাধ শ্রমিক যেন ছাঁটাইয়ের শিকার না হয় সে বিষয়ে কর্র্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখতে হবে।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, শ্রমিক আন্দোলনে বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে যারা নির্দোষ, তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তারা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারেন।

গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ও উত্তরা আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীনকে গত সোমবার মধ্যরাতে পুরান ঢাকার কারাগারসংলগ্ন তার বোনের বাসা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ পরিচয়দানকারী ওই কর্মকর্তা বলেছেন, তার বিরুদ্ধে শ্রমিক আন্দোলনের বিষয়ে অভিযোগ আছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মো. মশিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকদের সংগঠিত করে উত্তরা, দক্ষিণখান ও বিমানবন্দর এলাকার বিভিন্ন গার্মেন্টে হামলা, ভাঙচুর ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর আগে তিনটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও তিনি বরখাস্ত হন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত