রাজধানীর শাহবাগের বারডেম হাসপাতাল থেকে লাফিয়ে পড়ে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় কোন তদন্ত ছাড়াই চিকিৎসকের গাফিলতি ছিল না বলে দাবি করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে, এ ঘটনায় নিহতের স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে পরিবার থেকে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
শনিবার বিকেলে বারডেম হাসপাতালের ১২ তলার টয়লেটের ভেন্টিলেটর ভেঙে নিচে লাফিয়ে পরে নিহত হয় ইউরোলজি বিভাগে চিকিৎসাধীন সোহরাব হোসেন (২০) নামের এক রোগী। তার পুরুষাঙ্গে অস্ত্র পাচার করা হয়েছিল। পরিবারের দাবি অস্ত্র পাচারের পর থেকে দুই দিন ঘুমহীন থাকার পর অসহ্য যন্ত্রণা সইতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে।
এ ঘটনায় বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসকদের গাফিলতিকে দায়ী করেছে নিহতের পরিবার। তাদের দাবি, সোহরাব যখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল, দুই দিন দুই রাত ঘুমহীন ছিল, তখন দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও নার্সদের কাছে বারবার মিনতি করলেও কোন কথায় কান না দিয়ে উল্টো হাসপাতাল থেকে ভর্তি বাতিল করার হুমকি দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আত্মহত্যার পেছনে চিকিৎসকের কোণ গাফিলতি ছিল কিনা তা তদন্তে হাসপাতালের পক্ষ থেকে গতকাল পর্যন্ত কোন কমিটি গঠন করা হয়নি।
বারডেম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শহীদুল হক মল্লিক নিহতের পরিবারের অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন দাবি করেন। তবে ঘটনা তদন্তে গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোন তদন্ত কমিটি করা হয়নি বলে তিনি জানান। তদন্ত ছাড়া কীভাবে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ ভিত্তিহীন বলছেন এমন প্রশ্নের জবাবে শহীদুল হক মল্লিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই রোগীর চিকিৎসার ডকুমেন্টারি এভিডেন্স দেখে, ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি চিকিৎসকের কোন ভুল ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিহতের পরিবারের সঙ্গে কোন খারাপ ব্যবহারের ঘটনা ঘটেনি।’
নিহত সোহরাব হোসেনের বড় ভাই কবির মোল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার ভাইকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি তার পুরুষাঙ্গে অস্ত্র পাচার করা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে ১২ তলার ১২০২ নম্বর কেবিনে দেওয়া হয়। ওই রাত থেকেই সোহরাবের ঘুম আসছিল না। অস্ত্র পাচার স্থলে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছিল। ব্যথা সহ্য করতে না পেরে ছোটাছুটিও করত। আমরা বারবার ডাক্তার ও নার্সদের বললেও তারা আমাদের কথায় কান দেয়নি। তারা বলেছে এমন রোগীর একটু ব্যথা করবেই, ঠিক হয়ে যাবে। গত শনিবার বিকেলে ব্যথা বেশি বেড়ে গেলে সে ছোটাছুটি শুরু করে। আশ পাশের লোকদের মারধরও করে। তখন ডাক্তারদের কাছে আমরা কান্নাকাটিও করি। ঘুমের ওষুধ দিতে বলি কিন্তু তারা কোন ওষুধ না দিয়ে উল্টো আমাদের হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। ব্যথা সইতে না পেরে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কেবিন থেকে বের হয়ে পাশের একটি ওয়ার্ডের টয়লেটে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে ভেন্টিলেটর ভেঙে নিচে লাফিয়ে পরে মারা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’
লাশের সুরত হাল প্রতিবেদন তৈরিকারী রমনা থানার এস আই শওকত আলী বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে নিহত সোহরাব হোসেনের অস্ত্র পাচারের পর প্রচণ্ড যন্ত্রণা অনুভূত হয়। যন্ত্রণা সইতে না পেরে ১২ তলার টয়লেটের গ্লাস ও অ্যাডজাস্টার ফ্যান ভেঙে নিচে লাফিয়ে পরে মারা যায়। শনিবার বিকেল সোয়া ৫ টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি একে আজাদ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাসপাতালের পরিচালককে ঘটনাটির প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে কোন চিকিৎসকের গাফিলতি প্রমাণিত হলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতীতেও চিকিৎসায় গাফিলতির জন্য অনেক সিনিয়র চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়গুলি সেভাবে প্রকাশ করা হয়নি।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে। যদি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয় তবে ময়নাতদন্তে ধরা পরবে’।
এদিকে, রবিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেক মর্গ থেকে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মাগরিবের পর সোহরাবের লাশ তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদীর সৈয়দগাও এ দাফন করা হয়। সে স্থানীয় একটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। তিন ভাইয়ের মধ্যে সোহরাব হোসেন সবার ছোট। তার পিতার নাম মো. মতিউর রহমান। মাতা আনোয়ারা বেগম।