উপকূলীয় নারী মৎস্যশ্রমিকরা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় কম মজুরি পাচ্ছেন। এদিকে জেলে পরিবারের বেশির ভাগ নারী সদস্যই কোনো না কোনো সহিংসতার শিকার। বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে রবিবার অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরা হয়।
কোস্ট ট্রাস্টের উপ-নির্বাহী পরিচালক সনত কুমার ভৌমিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ‘ক্ষমতায়ন সূত্রের বাইরে উপকূলীয় জেলে পরিবারের বেশির ভাগ নারী: টেকসই মৎস্য খাতের জন্য নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ আবশ্যক’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে গবেষণার বিস্তারিত ফলাফল উপস্থাপন করেন কোস্ট ট্রাস্টের যুগ্ম পরিচালক মো. মজিবুল হক মনির এবং স্বাগত বক্তৃতা করেন একই সংগঠনের পরিচালক-প্রশাসন, মোস্তফা কামাল আকন্দ।
উপকূলীয় জেলা ভোলা, কক্সবাজার এবং বাগেরহাটের ১২০০ জেলে পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকার জেলে পরিবারের নারী সদস্যদের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি ও ক্ষমতায়নের অবস্থা তুলে আনা হয়েছে।
সমীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন করতে গিয়ে মো. মজিবুল হক মনির বলেন, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত নারী শ্রমিকদের সবাই পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় দৈনিক প্রায় ২৫ শতাংশ কম মজুরি পাচ্ছেন। সম্পদ কেনাকাটায় জেলে পরিবারের ৩১ শতাংশ নারীরই কোনো মতামত গ্রহণ করা হয় না, পরিবারের সাধারণ ব্যয়ের ক্ষেত্রে ৫৮ শতাংশ নারী সদস্যের কোনো মতামত নেওয়া হয় না। অন্যদিকে জেলে পরিবারের মাত্র ২শতাংশ নারী সদস্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে কোনো বিশেষ প্রয়োজনে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন এবং সমাজের কোন সালিশে বা অন্য কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জেলে পরিবারের ৮২ শতাংশ নারীই কোনোদিন কোনভাবে অংশগ্রহণ করেননি।
তা ছাড়া জেলে পরিবারের নারী সদস্যদের ৬৫ শতাংশ কোনো না কোনো সহিংসতার শিকার এবং পুরুষ সদস্য মাছ ধরতে বাড়ির বাইরে থাকলে তাদের প্রায় সবাই আতঙ্কে থাকেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি ইসরাইল পন্ডিত বলেন, সরকার মুক্ত জলাশয় নারীদের লিজ দিতে পারে তাহলে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে এবং ক্ষমতায়িত হবে নদীতে যে চর জাগে তা কৃষকদের বরাদ্দ দেয়া হয় এ সকল চর জেলেদের বরাদ্দ দিলে বিকল্প কাজের সৃষ্টি হবে।
শের ই বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ক প্রভাষক মোহম্মদ আলী বলেন, নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে নারীদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি শিল্পী দে বলেন, আমরা যদি আমাদের নারী উন্নয়ন সরকারি নীতিমালা ২০১১ নারীদের জন্য সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ মৎস্য আহরণ থেকে মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় এবং অভ্যন্তরীণ মৎস্যচাষে বিশ্বে ৫ম, নারীর অংশগ্রহণ এ ক্ষেত্রে স্বীকৃত হলে আমাদের এই অর্জন টেকসই করা সহজ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়, সেগুলো হল- মৎস্য খাতে নারীর অবদান চিহ্নিত করতে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন, জেলে পরিবারের নারী সদস্যদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা, নারী জেলেদের মৎস্যজীবী হিসাবে সরকারি আইডি কার্ড প্রদান করা, মৎস্য খাত সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত, মৎস্যশ্রমিকদের জন্য শ্রম নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ।