‘২০-২২ বছর আগেও নদীর পানি পরিষ্কার আছিলো। তখন নদীতে অনেক মাছ পাওন যাইতো। অনেক শিশুও (শুশুক বা ডলফিন) দেহা যাইতো এই নদীতে। ওহন তো পানি পইচ্চা গেছে। শিশু তো দূরে থাউক, মাছের দেহাই মেলে না তেমন। হাজারীবাগের চামড়ার কারখানা তো সরাইয়া নিছে সরকার। আমগো এদিকের (কেরানীগঞ্জের) ওয়াশের কারখানাগুলা কবে সরাইবো? এগুলাই পানি দূষিত করতাছে।’
এই প্রশ্ন ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে একসময় নিয়মিত মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা গোবর্ধন বর্মণের। নদীতে এখন আর মাছ তেমন না মেলায় পেশা পরিবর্তন করেছেন তিনি। তবে এখনো সুযোগ পেলে মাঝেমধ্যেই মাছ ধরতে চলে আসেন বুড়িগঙ্গায়।
গোবর্ধন বর্মণের মতো একই সুরে নৌকার মাঝি আবুল হাসেম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গেল বছর লকডাউনের সময় ওয়াশগুলা (ওয়াশিং ও ডাইং কারখানা) বন্ধ থাকলে পানি ফকফকা (পরিষ্কার) হইয়া গেছিল। লকডাউনের পর আবার সব কারখানা খুললো, আবার পানিও কালা হইয়া গেলো। এইগুলা সরাইলেই পানি আবার পরিষ্কার হইবো। মাছও হয়তো মিলবো।’
বুড়িগঙ্গা নদীর পানির দিকে তাকালেই বোঝা যায় গোবর্ধন ও হাসেমের খেদোক্তির কারণ। ওয়াশিং ও ডাইং কারখানার রাসায়নিক মিশ্রিত বিষাক্ত রঙিন বর্জ্য সরাসরি পড়ছে নদীতে। গোবর্ধন ও হাসেমের সুরে কথা বলেছেন এলাকার আরও অনেকে। তারা জানান, ক্রমাগত দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গা এখন মাছশূন্য। আর এ দূষণের অন্যতম উৎস অবৈধ ওয়াশিং ও ডাইং কারখানা।
বুড়িগঙ্গার দূষণ কমাতে সরকার হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানাগুলো স্থানান্তর করেছে সাভারে। তারপরও কমেনি নদী দূষণের মাত্রা। এক গবেষণায় পাওয়া তথ্যমতে, পুরো বিশ্বের দূষিত প্রথম ১০টি নদীর মধ্যে বুড়িগঙ্গার অবস্থান ষষ্ঠ। ট্যানারি স্থানান্তর হলেও কেরানীগঞ্জের ওয়াশিং ও ডাইং কারখানাগুলোর বিষাক্ত বর্জ্যে বাড়ছে বুড়িগঙ্গা দূষণ। কেরানীগঞ্জের এসব অবৈধ কারখানা বন্ধে রয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশনা। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে অনেক কারখানা একাধিকবার সিলগালার পরেও অল্প দিনের বিরতিতে সেগুলো খোলে টাকার বিনিময়ে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে।
মালিক সমিতির তথ্যমতে, কেরানীগঞ্জে ওয়াশিং ও ডাইং কারখানা রয়েছে ৮৭টি। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা হবে শতাধিক। এসব কারখানার একটিরও নেই ইটিপি (বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট)। গত বছরের শুরুতে বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ রোধে দুই তীরে ইটিপি ছাড়া স্থাপিত সব ওয়াশিং, ডাইং ও প্রিন্টিং কারখানা বন্ধ এবং একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। তবে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি পরিবেশ অধিদপ্তর। হাইকোর্টের আদেশের পরে বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে কেরানীগঞ্জে নদীর তীর ঘেঁষে স্থাপিত অনেকগুলো ওয়াশিং ও ডাইং কারখানা পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার সিলগালা করে সম্পূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে সিলগালার পর অল্প দিনের বিরতিতে পুনরায় চালু হয় কারখানাগুলো। প্রতিবার কারখানা সিলগালার সময় বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। সিলগালা কারখানা বারবার কীভাবে চালু হয়, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ কীভাবে পুনরায় চালু হয় এ নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কেচি শাহ এলাকার বাসিন্দা আবদুল হালিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওয়াশ মিলগুলো চলুক, কিন্তু অবশ্যই তা ইটিপি প্ল্যান্ট করে। ইটিপি প্ল্যান্ট ছাড়া ওয়াশ মিলগুলো চলছে, এতে করে নদীর যেমন মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি আমাদেরও ক্ষতি হচ্ছে। ওয়াশ মিলমালিকদের চেয়ে বেশি দোষী স্থানীয় প্রশাসন। তারা না চাইলে কখনোই অবৈধভাবে এখানে কারখানাগুলো চলতে পারত না।’
একই এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ মুজতবা বলেন, ‘ওয়াশ মিলমালিকরা উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে নিয়মিত টাকা-পয়সা দিয়ে অবৈধভাবে কারখানাগুলো চালাচ্ছে। টাকা-পয়সা দিতে যখন সামান্য ঝায়ঝামেলা হয়, তখনই উপজেলা থেকে আর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কারখানাগুলো লোক দেখানো বন্ধ করে দিয়ে যায়। আবার টাকা তাদের পকেটে গেলেই সব অবৈধ বৈধ হয়ে যায়। পরিবেশ অধিদপ্তর আর উপজেলা প্রশাসন যদি টাকা না খেত তাহলে সিলগালা করে দেওয়ার পরও কীভাবে বারবার কারখানাগুলো চালু হয়?’
সরেজমিন কেরানীগঞ্জের কয়েকটি ওয়াশিং ও ডাইং কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, পূর্ণগতিতে চলছে তাদের কাজকর্ম। লোকচক্ষু এড়ানোর জন্য দিনের বেলায় তেমন কাজ না করলেও রাতে পুরোদমে চলে কারখানাগুলো। প্রতিটি কারখানার সামনের রাস্তা লাগোয়া ড্রেনে তরল বর্জ্য। প্রতিটি কারখানার ফটক আটকানো অবস্থায় থাকে, প্রথম দেখায় মনে হবে বন্ধ একটি গুদাম ঘর। কিন্তু ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ। শ্রমিকরা কেউ তৈরি পোশাক ভাঁজ করছে, কেউ পানিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক মেলাচ্ছে, কেউবা আবার রং ও পরিষ্কারের জন্য পোশাক যন্ত্রে ঢোকাচ্ছে। এসব কারখানায় নেই রং ও রাসায়নিক মেশানো পানি পরিশোধনের কোনো যন্ত্র বা ইটিপি প্ল্যান্ট। রং ও রাসায়নিক মেশানো বিষাক্ত বর্জ্য যন্ত্র থেকে সরাসরি গিয়ে পড়ছে স্যুয়ারেজ লাইনে। পরে স্যুয়ারেজ লাইন হয়ে লাল কালচে পানি সরাসরি যাচ্ছে বুড়িগঙ্গায়। কয়েকটি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। একটি কারখানাতেও মালিকপক্ষের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
রহমত ওয়াশিং ও ডাইং কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, ঈদ মৌসুমকে সামনে রেখে পুরোদমে চলছে কাজ। কারখানার ভেতরে ঢুকতেই দেখা হয় ম্যানেজার (ব্যবস্থাপক) জাকিরের সঙ্গে। সিলগালা করার পরও কীভাবে কারখানা চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপাতত চালাচ্ছি, কিছুদিন পর আমরা চলে যাব।’ সিলগালা কারখানা কীভাবে চালু করলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে জাকির বলেন, ‘বোঝেনই তো বিষয়গুলো, এগুলো আবার বলতে হয় নাকি!’
মডার্ন ওয়াশিং প্ল্যান্টের ম্যানেজার মো. আরিফ বলেন, ‘রোহিতপুরের বিসিকে কারখানা সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। কাজ যেদিন শেষ হবে ওইদিন আমরা চলে যাব এখান থেকে।’ তবে কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
সিলগালা হওয়া আরেকটি প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ওয়াশিং প্ল্যান্টের ম্যানেজার মো. কাদের বলেন, ‘সবারটাই তো সিলগালা করছিল, সবাই আবার চালু করছে, আমরাও চালু করছি।’ কীভাবে চালু করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো সবার বাইরে না ভাই, সবাই যেভাবে ম্যানেজ করেছে, আমাদেরটাও ওইভাবে করা হয়েছে।’
বুড়িগঙ্গার দূষণ নিয়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। বিভিন্ন ডাইয়িং ইন্ডাস্ট্রির দূষিত বর্জ্যরে কারণে বুড়িগঙ্গার পানি পচে কুচকুচে কালো হয়ে গেছে। বুড়িগঙ্গার পানির দুর্গন্ধ আশপাশের এলাকা থেকেও পাওয়া যায়। এ পানি এখন কোনো কাজে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অথচ একসময় এই নদীর পানি দিয়ে বাসাবাড়ির গৃহস্থলি কাজ করা হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘ল্যাবরেটরি অ্যানালাইসিসে দেখা যায়, ঢাকার চারপাশের নদীতে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ থাকার জন্য পানির যে গুণগত মান থাকা দরকার তার অনুপস্থিতি রয়েছে। বুড়িগঙ্গার পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে কমতে ১ মিলিগ্রামে নেমে এসেছে। এই যে পানি নষ্ট হয়েছে, নদী মারা গেছে, এগুলো একদিনে হয়নি। নদীর চারপাশের কলকারখানার বিষাক্ত পানি দিনের পর দিন ফেলে এমনটা হয়েছে।’
দূষণ নিয়ন্ত্রণ রোধের দায়িত্বে থাকা সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, ‘কলকারখানার বর্জ্যরে বিষয়টি মূলত পরিবেশ অধিদপ্তর ও শিল্প মন্ত্রণালয় দেখভাল করার কথা। কিন্তু আমাদের যে সংস্থাগুলো আছে তাদের মধ্যে মারাত্মক সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে। এ কাজটি কার? কে দেখভাল করবে? সংস্থার কেউ নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়, হয়তো আন্তরিকও নয়। যার কারণে নদী দেখভাল করার কোনো অভিভাবক নেই। রাষ্ট্রীয়ভাবে হাইকোর্ট নদী কমিশনকে নদীর অভিভাবক হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু তাদের সঙ্গে কথা বলার পর সবারই একটি কথা, “আমাদের লোকবলের অভাব, বাজেটের অভাব” সেটা শিল্প মন্ত্রণালয় হোক, কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তর, কিংবা নদী কমিশন সবারই একটি কথা। বুড়িগঙ্গাকে রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। আর না হলে রাজধানী ঢাকাকে সেবা প্রদানকারী সৃষ্টিকর্তার মহান দান এই বুড়িগঙ্গা নদী একসময় ছবিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আমরা ছবি দেখব আর বলব, আমাদের একসময় একটা বুড়িগঙ্গা নদী ছিল।’
প্রায় একই ধরনের মতামত দিয়ে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘ডাইং ও ওয়াশিং কারখানার দূষিত পানি সরাসরি নদীতে পড়ছে। এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এটা পরিবেশ আইনে একটি ক্রাইম (অপরাধ) হিসেবে স্বীকৃত। নদীকে সরকার জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই যে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি ও দূষণ, এটা আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে একটা জনসম্পৃক্ত সমন্বিত পদক্ষেপ নিয়ে এটার সমাধান বের করতে হবে। নদী দূষণের এ বিষয়টার শুধু কার্যপদ্ধতি ঠিক করলেই হবে না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তার বাস্তবায়নও করতে হবে।’
সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে নদী দূষণ রোধ করা সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই যে বারবার কারখানাগুলো বন্ধ করা, আবার খুলে দেওয়া, এটা সমাধান নয়। এখানে দুর্নীতির যথেষ্ট সুযোগ থাকে। তাছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ক্যাপাসিটিও নেই যে তারা এটার সঠিক সমাধান করবে। মূল উপায় হচ্ছে সবাইকে নিয়ে এটার সমাধান করতে হবে। কারখানাগুলোকে একটা সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে হবে। যেসব কারখানা পরিবেশ আইন মেনে চলছে তাদের পুরস্কৃত করতে হবে। আর যারা মানছে না তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হচ্ছে নদী দূষণ রোধের একমাত্র উপায়।’
সিলগালা করা ডাইং ও ওয়াশিং কারখানাগুলো কীভাবে চলছে জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, ‘প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এটা ভুল কথা। সিলগালা করার পরও কারখানা চালু করে থাকলে সেটা দণ্ডনীয় অপরাধ। বিষয়টা আমি মাত্র আপনার কাছ থেকে জানলাম। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে আমাদের করণীয় ঠিক করব। নিয়ম অমান্য করে কেউ সিলগালা কারখানা পুনরায় চালু করে থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
একই বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জহিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘ওয়াশিং কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে আমরা আমাদের আইন অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে বন্ধ করে দিয়ে আসছি। তারা আবার কীভাবে চালু করল এটা কেরানীগঞ্জের যারা দায়িত্বরত (উপজেলা প্রশাসন) আছে তাদের গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন। আমাদের জনবলের অভাবে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে পারি না। আমরা আবার তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাব। নিয়মিত মামলা করব। টাকা দিয়ে আমাদের ম্যানেজ করা হয় এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা।’