সরকারি কর্মচারীদের অনেকেই ‘স্যার’ সম্বোধন করেন। পাকিস্তানিরা এতদিন সরকারি কর্মকর্তাদের পদবীর সঙ্গে ‘সাহেব’ সম্বোধন করতেন। এই চর্চা ভারতীয় উপমহাদেশে মূলত ইংরেজ শাসনামলে শুরু হয়। তবে এই আধুনিক সময়ে স্বাধীন দেশে এই চর্চা যে জনগণের সেবকদের মানসিকতায় সেবার বদলে প্রভুত্বের বা হামবড়া ভাব জাগায় এই বিষয়টি আমলে নিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি কাজি ফায়েজ ইসা। তাই গত মঙ্গলবার এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন তিনি। এখন থেকে সরকারি পদবীর সঙ্গে ‘সাহিব’ বা সাহেব যোগ না করার নির্দেশ দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ঔপনিবেশিক আমলের এই চর্চা থেকে পাকিস্তানের সরে আসার এই সিদ্ধান্তের কথা।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, সাহেব সম্বোধন বন্ধে দুই পৃষ্ঠার ওই আদেশে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার নামের সঙ্গে সাহেব শব্দটি যুক্ত করা জনসাধারণের স্বার্থের পরিপন্থী। এতে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে দায়িত্বহীনতার মনোভাব তৈরি হয়, যা গ্রহণযোগ্য নয়। ওই আদেশে আরও বলা হয়, সাহেব শব্দটি সংযুক্ত করা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে কারণ এটি অপ্রয়োজনীয়ভাবে সরকারি কর্মচারীদের মর্যাদাকে বাড়িয়ে দেয়।
প্রধান বিচারপতির এই সিদ্ধান্তের সূত্রপাত এক শিশু হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে। গত বছর পেশোয়ারে একটি শিশু হত্যা করা হয়। জানা গেছে, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের তদন্তে অবহেলা ছিল। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসল দোষীদের সাজা না দিয়ে নির্দোষ এক ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো হয়। পরে আদালত ওই ব্যক্তিকে জামিন দেন।
শুনানিতে এ ঘটনায় জড়িত স্থানীয় পুলিশের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্টকে (ডিএসপি ) ‘সাহেব’ বলে সম্বোধন করেন খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল । আর তখনই এই আইনজীবীকে তিরস্কার করে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সাহেব ডেকে সবাইকে নষ্ট করছেন। তিনি একজন ডিএসপি বা বরং একজন অযোগ্য ডিএসপি।’