সবাই যখন শীতে জবুথবু তখন হাফহাতা জামা পরে কারওয়ান বাজার রেললাইনের পাশে দেয়াল ঘেঁষে দুটি চৌকি একসঙ্গে করে থাকার ব্যবস্থা করছেন সাজু মিয়া। এই শীতে যখন মানুষ কাঁথা বা লেপের তলে আশ্রয় নিচ্ছে তখন মাথা গোজাঁর ঠাঁই করতে ব্যস্ত তিনি। ঘরের চালের ব্যবস্থা করছেন শক্ত পলিথিন দিয়ে।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) পাশে মোল্লাবাড়ি বস্তিতে লাগা আগুনে তার ঘরও পুড়েছে। মাছ কেটে সংসার চালানো সাজুর পরিবারে তিন মেয়ে, দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে।
সাজু মিয়া বলেন, ‘ভাই গরিবের শীত থাকতে নেই। ঘর পুড়ে তার সব শেষ। গ্রামের বাড়ি জামালপুর বকশিগঞ্জে, কিন্তু সেখানে কোনো জমি বা ভিটে নেই। ৮/১০ বছর ধরে এই বস্তিতে আছি। তাই এখানেই মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছি।’
গত শুক্রবার দিনগত রাতে মোল্লাবাড়ি বস্তিতে লাগা আগুনে বস্তির প্রায় সব ঘর পুড়ে গেছে। বস্তিবাসীর দাবি, প্রায় ৩০০ ঘর পুড়ে গেছে। আজ রবিবার সকালে সরজমিনে দেখা যায় সাজু মিয়ার মতো অনেকেই এখন আশ্রয় নিয়েছেন বস্তির অদূরে রেললাইেনের পাশে। সরকারের কাছ থেকে চাল, ডাল ও একটি কম্বল পেলেও সামনের দিন কীভাবে চলবেন বা কতদিন এভাবে থাকতে হবে সে চিন্তাই তাদের মাথায়।
জবুথবু হয়ে বসে থাকা এক বৃদ্ধার সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের। তার নাম মরিয়ম। স্বামী ছেড়ে চলে গেছেন অনেক আগেই। এক মেয়ে ছিল, তাকে বিয়ে দিয়েছেন। এখন একাই এই বস্তিতে থাকতেন। তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারে কাঁচা সবজি টুকিয়ে বা কম দামে কিনে ব্যবসা করতেন। গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে, কিন্তু নদীতে তার সব ভেঙে গেছে। কিছু নেই। এখন এই একখানা চকি তার সম্বল।
কিশোরগঞ্জ নিকলীতে বুলু মিয়ার গ্রামের বাড়ি। কিন্তু সেখানে কিছু নেই তার। নদীর ভাঙনে তার ঘর-জমি গেছে, ঢাকার আগুনে পুড়ল আবার ঘর। তিনি বলেন, পাঁচজনের পরিবার নিয়ে প্রায় ৮/১০ বছর ধরে এই বস্তিতে থাকছেন। কোনো রকমে চলা সংসার এখন আর কিছুই রইল না।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, ঘটনার দুই দিন পরও তারা মালিকের দেখা পাননি। সরকারকে এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান তাদের।
থানায় মামলা
আগুনের ঘটনায় মৃত্যু ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা করেছেন একজন ভুক্তভোগী।
রবিবার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম মশিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, মৃতদেহ দুটির দাবিদারদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর লাশ হস্তান্তরের বিষয়টি দেখা হবে।