ঈদের আগে খুলনার সালাম জুট মিলের শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে হতাশাজনক পরিস্থিতিতে পড়েছেন মিলটির শ্রমিকরা। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস বলছে, মিলটিতে নিজস্ব অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা ছিল না। ফলে প্রাথমিক অবস্থায় আগুন নির্বাপন করা সম্ভব হয়নি। বুধবার (৩ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জুট মিলটিতে আগুন লাগে।
খুলনা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মো. সাইফুজ্জামান বলেন, জুট মিলে লাগা আগুন ৮ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এলেও বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপণে ড্যাম্পিং ডাউনের কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। দিনভর ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট কাজ করে। তবে সন্ধ্যার মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট গুলো প্রত্যাবর্তন করা হবে। তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য মাত্র একটি ইউনিট মিলে রাখা হয়।
উপ-পরিচালক আরও বলেন, মিলটিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে যে ধরনের যন্ত্রপাতি থাকার কথা তা ছিল না। সাধারণত এ ধরনের মিলে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থাকতে হয়। স্পিংলার সিস্টেম বা আগুন নেভানোর জন্য নিজস্ব একটি ইউনিট থাকার কথা। যেটিও মিলে ছিল না। এসব ব্যবস্থা থাকলে প্রাথমিক পর্যায়েই হয়তো আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হত। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। আগুন লাগার কারণও এখনো জানা যায়নি। এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে।
এদিকে, মিলটির প্রডাকশন অফিসার শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, আগুনে ৭৫০ মেট্রিক টন প্রক্রিয়াজাত পাট ও ৩৫ হাজার টন কাচা পাট পুড়ে গেছে। মিলের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সব মেশিনারীজ ও যন্ত্রপাতি। সবমিলিয়ে প্রায় ১ শ কোটি টাকা ক্ষতি এমন দাবি করেছেন তিনি। তবে কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্সে এ প্রতিষ্ঠানের ৫০ কোটি টাকার ইনস্যুরেন্স করা ছিল।
অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় সাড়ে ৪শ’ শ্রমিকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যেই বেতন ও ঈদ বোনাস পাওয়ার কথা ছিল। তবে সেই আশা নিরাশায় পরিণত হল। এছাড়া মিলটি ঘুরে দাড়ানো নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।
মিলটির শ্রমিক রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, দুই একদিনের মধ্যেই বেতন-বোনাস পেতেন তারা। আগুন লাগার কারণে সেটি হচ্ছে না। সামনে ঈদ, আমরা এখন কি করবো? পরিবারের ছেলে মেয়েদের নতুন জামা কাপড় কিনে দেয়ার কথা ছিল। আগুনে সব শেষ করে দিল।
মিলটি দ্রুত ফের চালু করার দাবি জানিয়ে একজন সুপারভাইজার বলেন, চালু না হলে আমরা সকলেই বেকার হয়ে পড়বো। অন্যদিকে নতুন করে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ পাব কিনা সেটা উপরওয়ালাই জানে।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের দিকে সালাম জুট মিলটি চালু হয়। হঠাৎ বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রূপসা উপজেলার জাবুসায় অবস্থিত সালাম জুট মিলে আগুন লাগে। প্রথমে মিলের তিন নম্বর গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। শুকনো পাট হওয়ায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের বেশ বেগ পেতে হয়।