পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বৈসাবির রঙ। আর এই রঙে রাঙাতে রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠিত হলো বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ‘জুম্মদের সাংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিতকরণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে অধিকতরভাবে এগিয়ে আসুন’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে রাঙ্গামাটিতে বর্ষবরণ উপলক্ষে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু সাংক্রান উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বুধবার (১০ এপ্রিল) সকালে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, সাংক্রান, বিষু, বিহু উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে শহরের পৌরসভা চত্বরে আয়োজিত হয় বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠান। পাহাড়িরা এতে অংশ নিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে চলে আসা এই শোভাযাত্রায় নিজেদের ঐতিহ্য তুলে ধরে। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক গায়ে দিয়ে তাদের সংস্কৃতি তুলে ধরে। আনন্দ-আমেজে বৈসাবির উপলক্ষ সবার কাছে পৌঁছে দেয় এই শোভাযাত্রা। আনন্দ উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি জাতিসত্ত্বার অধিকারের কথাও প্রাধান্য পেয়েছে অনুষ্ঠানে।
বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু সাংক্রান উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও অবসরপ্রাপ্ত উপসচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়। বিশেষ অতিথি হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার, বিশিষ্ট আইনজীবী ও নারী অধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুষ্মিতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট চঞ্চু চাকমা, বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক শিশির চাকমাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্ষবরণ বৃহৎ সামাজিক উৎসব। তথাকথিত আধুনিক সংস্কৃতির নামে যাতে আমরা নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলে না যাই। পাশাপাশি জুম্ম জাতির দীর্ঘদিনের শোষণ ও বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন তিনি।
উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টুমনি তালুকদার বলেন, জুম্মদের সাংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিতকরণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে অধিকতরভাবে এগিয়ে আসুন, আমাদের এই স্লোগানের মূল দাবি হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করা। একমাত্র চুক্তি বাস্তবায়নের হলেই জুম্ম জাতি তাদের সাংস্কৃতিক অধিকার ফিরে পাবে।
দলীয় নৃত্যের মাধ্যমে শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা। নৃত্য ও আলোচনাসভা শেষে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। প্রতিবছর এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে বৈসাবির মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পাহাড়িরা এতে অংশ নিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে চলে আসা এই শোভাযাত্রায় নিজেদের ঐতিহ্য তুলে ধরে। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক গায়ে দিয়ে তাদের সংস্কৃতি তুলে ধরে। আনন্দ-আমেজে বৈসাবির উপলক্ষ সবার কাছে পৌঁছে দেয় এই শোভাযাত্রা।
ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও শুক্রবার (১২ এপ্রিল) ফুল ভাসানোর মাধ্যমে তিন দিনব্যাপী আয়োজিত এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে।