চাকরি না করে অনেকই ব্যবসা করতে চান। কিন্তু ব্যবসা করতে অভিজ্ঞতা, প্রস্তুতি ও কমবেশি মূলধনের প্রয়োজন হয়। যাদের খুব বেশি মূলধন থাকে না তারা অল্প পুঁজিতে শুরু করতে পারেন গার্মেন্টসের স্টক লট ব্যবসা। সেক্ষেত্রে স্টক লটের ধারণা নিয়ে, জেনে ও বুঝে তারপর ছোট গার্মেন্ট থেকে স্টক কিনে লোকাল মার্কেটে বিক্রি দিয়ে শুরু করতে পারেন। তারপর ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি বাড়াবেন।
আমাদের দেশের গার্মেন্ট হলো খুবই সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠিত ক্ষেত্র। এই শিল্প ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা ব্যবসা এবং দিন দিন সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো স্টক লট ব্যবসা। স্টক লট বিভিন্ন সংখ্যার হতে পারে শর্ট কোয়ান্টিটি কিংবা লং কোয়ান্টিটি। সংখ্যার অনুপাতে যা নির্ধারিত হয়। গার্মেন্ট শিল্পে স্টক লট হয় কয়েকটি কারণে, বিশেষ করে শিপমেন্ট বাতিল, শিপমেন্টে দেরি, কন্টিনিউয়াস রি-চেক প্রভৃতি কারণে। এলসিও অন্যতম সমস্যা। কম পুঁজি ও যারা শোরুম কিংবা সাধারণ দোকান দেওয়ার চিন্তায় আছেন, তাদের জন্য এ ধরনের ব্যবসা খুবই ভালো। এ ব্যবসায় পরিশ্রম, যোগাযোগ দক্ষতা থাকলে খুব দ্রুতই সফল হওয়া যায়।
ব্যবসা শুরুর আগে-পরে
পোশাক কেনার সময় দাম কম, পরিমাণে বেশি কেনা ভালো। এতে লাভ তুলনামূলক বেশি হয়। না জেনে, না বুঝে লট কেনা থেকে বিরত থাকা। কারণ আমাদের দেশে শীত গ্রীষ্মে এই দুই ঋতুতেই এ ধরনের পোশাকের চাহিদা থাকে। তাই এক সিজনের পোশাক অন্য সিজনে কিনে রেখে দিলে একদিকে যেমন টাকা আটকে থাকে তেমনি লোকসান হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সেলাই খরচ হতে পারে। সাইজে ভুল থাকতে পারে। তাই লট কেনার সময় এসব বিষয়ে সচেতন থাকা দরকার।
বাজার সম্ভাবনা
শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট ও বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের কাপড় শোরুম বা দোকানে বিক্রি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে লোকভেদে বিক্রির কয়েকদিন পর দাম পরিশোধের ব্যবস্থা রাখতে পারেন। যদি লোকাল মার্কেটের ক্রেতা পরিচিত থাকে তাহলে গুণগত মানে সেরা পণ্য বাজারদরের চেয়ে কম দামে কিনে ওই ক্রেতার কাছে বিক্রি করা যায়। এক্ষেত্রে এর স্যাম্পল নিয়ে লোকাল মার্কেটে গিয়ে দেখাতে পারেন। এতে আপনার অভিজ্ঞতা যেমন বাড়বে, তেমনি বাণিজ্যিক ধারণাও বৃদ্ধি পাবে। এসব পণ্যের চাহিদা সব সময় থাকে। আবার অনলাইনেও এসব পোশাক বিক্রি করা যায়।
কোথায় পাওয়া যাবে
বিভিন্ন বায়িং হাউজ, গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি এবং অনেকে ছোট লটে গার্মেন্ট আইটেম বিক্রি করেন। এছাড়া অনেক ব্যবসায়ী লোকাল পার্টির কাছে বিক্রি করেন। তাদের কাছে ভালো মানের কালেকশন থাকে। কোনো বায়িং হাউজ কিংবা লোকাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন। সরাসরি গার্মেন্টস থেকে লট কেনা অনেক ঝামেলার। শুরুতে কোথায় এবং কাদের কাছে কী পরিমাণ মাল আছে তা জানুন। ধীরে ধীরে গার্মেন্টসের দিকে হাত বাড়ান। পরিচিত অভিজ্ঞ কিংবা শুভাকাক্সক্ষীর সাহায্য নিন। এক্ষেত্রে ব্যবসার অগ্রগতি দ্রুততর হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এটাই সবচেয়ে ভালো। পরবর্তী সময়ে ব্যবসার একটা চেইন তৈরি হয়ে যাবে।
ব্যবসার জায়গা
একটি নির্দিষ্ট জায়গা থাকতে হবে। না হলে আপনার প্রতি আগ্রহ কমে যাবে। বেশি ঝামেলায়ও পড়তে হবে না। দোকান, শোরুম বা অফিস না থাকলে, নিজের বাসায় শুরু করতে পারেন ব্যবসাটি। শুরুতে তেমন কিছু না থাকলেও চলবে। যেমন একটা টেবিল, দুইটা চেয়ার, কম্পিউটার ও পোশাকের লট থাকার জায়গা।
লাভ
ব্যবসা শুরুতে দুই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন। স্টক লট ব্যবসায় লাভের কোনো লিমিট নেই। আপনি যদি পলো শার্ট ১১০ করে এক হাজারটি কিনে বিক্রি করতে পারবেন প্রতিটি ১৪০ টাকায়। টি-শার্ট ১০০ টাকা করে এক হাজারটি কিনে ১৩০ টাকা করে বিক্রি করতে পারবেন। জিন্স প্যান্ট ২০০ থেকে ২২০ করে এক হাজারটি কিনে বিক্রি করা যাবে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়। গ্যাবার্ডিন প্যান্ট ১৪০ থেকে ১৭০ করে এক হাজারটি কিনে বিক্রি করা যাবে ১৯০ টাকা করে। ছোটদের পোশাক এক সেট ২৫০ থেকে ৩০০ করে এক হাজারটি বিক্রি করা যাবে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকায়। পণ্যের মান অনুযায়ী দাম কমবেশি হতে পারে।