মাদারীপুরে ৮ থেকে ১০ মাস ধরে প্রতিবন্ধী ভাতা দুই সমাজসেবা কর্মকর্তা নিজেদের বিকাশ নম্বর দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভাতাভোগীরা জানেন না যে, সরকার থেকে প্রাপ্ত প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকায় তাদের নাম রয়েছে। মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নে ঘটেছে এমন ঘটনা।
ভুক্তভোগী একাধিক ভাতাভোগী সদর উপজেলার সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার এবং কালকিনি উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুপাই হাওলাদারের নামে মাদারীপুর সদর উপজেলা থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়। তবে রুপাই হাওলাদার নিজেই বিষয়টি জানেন না। সম্প্রতি তিনি অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তার নামে ৫ কিস্তির ১২ হাজার ৭৫০ টাকা এবং বিগত দুই কিস্তির আরও ৫ হাজার ১০০ টাকা তার বিকাশ নম্বরে যাচ্ছে না। যে দুই বিকাশ নম্বরে রুপাই হাওলাদারের টাকা যাচ্ছে তা হলো সদর উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেনের।
এ ছাড়া একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক দম্পতির বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়ের নামে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে নিয়মিতভাবে নিজেদের বিকাশ নম্বরে টাকা গেলেও হঠাৎ গত ৩ কিস্তির টাকা তাদের নম্বরে আসেনি। পরে ভুক্তভোগীর মা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন মেয়ের নামের টাকা বর্তমানে সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেনের এক ঘনিষ্ঠজনের বিকাশ নম্বরে যাচ্ছে।
মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের ঘটকচর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর সরদার অভিযোগ করেন যে, অনেক আগে প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার জন্য মেম্বারের কাছে আইডি কার্ড দিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি জানতে পেরেছেন যে, তার নামে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়ন থেকে ২০২২-২৩ সালে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তার নামের প্রথম ৫ কিস্তির ১২ হাজার ৭৫০ এবং দ্বিতীয় কিস্তির ৫ হাজার ১০০ টাকা কালকিনি উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মশিউর রহমানের বিকাশ নম্বরে যাচ্ছে। এ ছাড়া কালকিনি পৌর সভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগমের বয়স্ক ভাতার টাকাও তার নম্বরে যাচ্ছে!
ভুক্তভোগী রুপাই হাওলাদারের ছেলে রাকিব বলেন, ‘আমাদের বিকাশ নম্বরের স্থানে অন্য লোকের নম্বর দিয়ে তারা টাকা তুলে নেয়। আমরা কোনো টাকা পাইনি। পরে আমরা ডিসি বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।’
আমেনা বেগম নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, গত ৮ থেকে ১০ মাস ধরে কোনো টাকা পাই না। অফিসের লোকেরা আমার টাকা নিয়ে যাচ্ছে।’
এ ছাড়া সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন ‘ভদ্রখোলা আদর্শ সংস্থা’ নামে একটি ভুয়া স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে প্রতিবছর সমাজকল্যাণ পরিষদসহ সরকারি দপ্তর থেকে আর্থিক অনুদান নিচ্ছেন বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
অভিযুক্ত সদর উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করব।’ অভিযুক্ত অন্য সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মশিউর রহমানও বিষয়টি ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আশাদুল ইসলাম বলেন, ‘যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও স্থানীয় সরকার উপপরিচালক (অতি. দায়িত্ব) নুসরাত আজমেরি হক বলেন, ‘ভাতাভোগীদের অর্থ আত্মসাৎ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’