আলোচিত সাংসদ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে যাকে সন্দেহ করা হচ্ছে, সেই মো. আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহিনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনতে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি রয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ পুলিশ দেশটির সহযোগিতা চেয়েছে। পাশাপাশি নিজস্ব প্রক্রিয়ায়ও আক্তারুজ্জামানকে দেশে ফেরত আনতে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য গত ২৬ মে কলকাতায় যায় ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে ঢাকায় ফিরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
হারুন অর রশীদ বলেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহিন। হত্যাকাণ্ডটি ভারতের মাটিতে সংঘটিত হয়েছে। এ জন্য সেখানকার পুলিশও এই আসামিকে চাইবে। আমরাও তাদের কাছে শাহিনকে ফেরাতে অনুরোধ করেছি। তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমাদের জানিয়েছে।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সংসদ সদস্য হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরেকজন (সিয়াম হোসেন) কাঠমান্ডুতে অবস্থান করছেন। আর খুনের মদদদাতা (আক্তারুজ্জামান) যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাদের মোবাইল নম্বর, পাসপোর্টসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে পুলিশ মহাপরিদর্শক ইন্টারপোলকে অবহিত করেছেন। এই দুজনকে দেশে ফেরাতে গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দূতাবাস ও কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংকে তল্লাশি চালিয়ে আনোয়ারুল আজীমের শরীরের কিছু অংশ পাওয়া গেছে বলে জানান হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, তাদের কলকাতায় যাওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সংসদ সদস্যের দেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা। এ কারণে তারা সেখানকার পুলিশকে সেপটিক ট্যাংক ও পয়োনিষ্কাশন নালা দেখার অনুরোধ করেন। পরে সেখানে ভুক্তভোগীর শরীরের কিছু অংশ পাওয়া গেছে। সেগুলোর ডিএনএ টেস্ট করার পর এ বিষয়ে তারা (কলকাতার পুলিশ) চূড়ান্তভাবে জানাবে।
স্বাভাবিকভাবে সেখানে খণ্ডিত দেহাংশ থাকার কথা নয় উল্লেখ করে হারুন অর রশীদ বলেন, এ কারণেই আমরা মনে করছি, এগুলো তারই (আনোয়ারুল আজীম) হবে। কলকাতা পুলিশ খুব দ্রুতই ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল জানাবে।
কলকাতায় নিজেদের কার্যক্রম নিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, সংসদ সদস্য খুনের ঘটনায় দেশে তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের মধ্যে আমানুল্লাহ (প্রকৃত নাম শিমুল ভূঁইয়া) হলেন মূল ঘাতক। খুনের মূল পরিকল্পনাকারীর সঙ্গে শিমুল ভূঁইয়ার কয়েক দফায় বৈঠক হয়েছে। তার কাছ থেকে অনেক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। ওখানে গিয়ে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এ ছাড়া অপরাধীরা কোন সময়ে কোন গাড়ি ব্যবহার করেছে, কখন ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেছে—এসব বিষয় ডিজিটাল মাধ্যম থেকে পাওয়া প্রমাণের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে।
কলকাতায় গিয়ে সেখানকার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি পুলিশের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে জানিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকায় গ্রেপ্তার আসামিদের দেওয়া তথ্যের মিল পেয়েছেন। এ ছাড়া পারিপার্শ্বিক যেসব প্রমাণাদি রয়েছে, সেগুলোও আসামিদের বক্তব্য অনুযায়ী মিলিয়ে দেখেছেন। এ ক্ষেত্রে তারা যেসব বিষয় চেয়েছিলেন, সব কটিই করতে পেরেছেন।
এখন পর্যন্ত তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হারুন অর রশীদ বলেন, এই খুনের পরিকল্পনা করা হয় দুই মাস আগে। আগেও দুবার তাকে হত্যার পরিকল্পনা হয়। তৃতীয়বার দেশে পরিকল্পনা করে কলকাতায় গিয়ে হত্যা করা হয়। তারা হত্যা করে লাশ গুম করার পাশাপাশি মোবাইলের মাধ্যমে অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। কখনো বেনাপোল, দিল্লি, মোজাফফরাবাদ, বিহার—এসব জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়।