বাংলাদেশের শ্রমবাজার মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ওপরই অনেকটা নির্ভরশীল। দেশের প্রবাসী আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশই আসে এই অঞ্চলগুলো থেকে। তবে দিন দিন এই দেশগুলো প্রবাসীদের জন্য অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কিছু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সিন্ডিকেট ও দালালদের দৌরাত্ম্য শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রতিবছর যে সংখ্যক প্রবাসী যাচ্ছেন, তার বিপরীতে আয় সেভাবে আসছে না। সৌদি আরবের মতো সবচেয়ে বেশি প্রবাসী অধ্যুষিত দেশেও রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে কমছে। আর সম্প্রতি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকেও আয় কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ ও সৌদি আরর থেকে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ৩৪১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ১১৭ টাকা) দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ৮৯৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এই তিন দেশের শ্রমবাজার ঝুঁকিতে পড়েছে।
দেশে শক্তিশালী সিন্ডিকেট, দালাল ও এজেন্সিগুলোর নানা অনিয়মের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে প্রবাসী আয় ইতিমধ্যেই ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। যদিও এসব দেশে যেতেও অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশিদের খরচ অন্তত দ্বিগুণেরও বেশি। দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রবাসীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অবৈধ হয়ে পড়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে আয় পাঠাতে পারছেন না। এসব দেশে প্রবাসী বাড়লেও হুন্ডির কারবারিদের থাবায় আয়ের বড় অংশই অবৈধভাবে আসছে।
দেশে গত কয়েক দশকে মধ্যবিত্তদের জীবন বদলানোর প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে শ্রমবাজার। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ও সুখের জন্য তাই প্রতিবছর এই শ্রেণির লাখ-লাখ মানুষ কাজের জন্য বিদেশে পাড়ি জমান। যাদের অধিকাংশই জমি বন্ধক ও ঋণ নিয়ে কাজের জন্য দেশ ছাড়েন। এদের অনেকেই আবার দালাল ও এজেন্সির খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। এমন বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও যতই সময় গড়িয়েছে ততই চাঙ্গা হয়েছে দেশের শ্রমবাজার। বেড়েছে প্রবাসী শ্রমিকের সংখ্যা। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে সচল দেশের অর্থনীতির চাকা।
কিন্তু যে প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি বিদেশি মুদ্রা পাঠাচ্ছেন, তাদের সুরক্ষায় সরকার তেমন কিছুই করছে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ পেতে সরকারকে নানা শর্ত ও সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। অথচ দেশের প্রবাসীরা বছরে ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠালেও তারা অবহেলা, প্রতারণা ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।
কিছুদিন ধরে সিন্ডিকেট-দালাল ও কিছু এজেন্সির দুর্নীতির কারণে শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তার সর্বশেষ নজির মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে গত ৩১ মে বন্ধ হয়েছে শ্রমবাজারটি। এতে করে ভিসা ও কাজের অনুমতি থাকার পরও প্রায় ৩২ হাজার কর্মীর দেশটিতে যাওয়া আটকে গেছে। এর আগে একই কারণে গত ২২ মে বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয় মালদ্বীপ সরকার।
বর্তমানে ১২ লাখেরও বেশি প্রবাসী রয়েছেন মালয়েশিয়ায়। এর মধ্যে গত তিন বছরেই দেশটিতে গেছেন ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৫২১ জন। এতে করে দেশটি থেকে প্রবাসী আয়ও ধারাবাহিকভাবে বাড়তে দেখা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে মালয়েশিয়া থেকে প্রবাসী আয় ছিল ১০২ কোটি ডলার, যা ১১২ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। আর চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স আসে ১২২ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ থেকে ৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে। যে সময়ে বিদেশি মুদ্রার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, ঠিক সে সময়ে দুদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এদিকে জনশক্তি রপ্তানিতে দেশের প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরবের শ্রমবাজারেও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। কর্মীসংখ্যা বাড়লেও কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স। সবকিছুর মূলে শ্রম খাতসংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদের তুলনায় বাংলাদেশিদের জন্য ব্যয়বহুল হয়ে পড়া সৌদি আরবে আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) নবায়ন নিয়েও বিপাকে পড়তে হচ্ছে প্রবাসীদের। সব মিলিয়ে সৌদি আরব বাংলাদেশের জন্য অভিবাসনবান্ধব হতে পারছে না। ফ্রি ভিসা নামে সিন্ডিকেটের তৈরি এক ভিসায় দেশটিতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন প্রবাসীরা। এই ভিসায় যাওয়ার পর কাজ না পেয়ে লুকিয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। অনেকেই পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে সরকারিভাবে দেশে ফিরছেন। ফলে জনশক্তি গেলেও এই শ্রমবাজার থেকে আসা রেমিট্যান্স কমছে। অন্যদিকে অবৈধ পন্থায় যাওয়া শ্রমিকদের গ্রেপ্তার করছে সৌদি সরকার। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এই প্রধান শ্রমবাজারে।
বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ৩৮ লাখ ৮৫ হাজার প্রবাসী রয়েছেন সৌদি আরবে। গত চার বছরে দেশটিতে গেছেন ১৬ লাখ ৬০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি। তবে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী গেলেও দেশটি থেকে আয় ধারাবাহিকভাবে কমছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে ৪৫৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা পরের অর্থবছর ২০২২-২৩-এ ৩৭৬ কোটি ডলারে নেমে আসে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১০ মাসে এ আয় আরও কমে ২১৬ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। যদিও তুলনামূলক কমসংখ্যক প্রবাসী নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স আসছে দেশে।
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছিলেন ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৩২ জন। এ দেশটি থেকে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৬৫ কোটি ডলার, যা সৌদি আরবের চেয়ে ৬৯ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে আরব আমিরাত থেকে ২০৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে, যা পরের অর্থবছরে ৩০৩ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। আয় কমে গেছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশ কুয়েত, কাতার ও বাহরাইন থেকেও। জনশক্তি রপ্তানি খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব দেশে থাকা প্রবাসীদের একটি বড় অংশই হুন্ডিতে প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন। মূলত দেশে ব্যাংকিং চ্যানেল ও ডলারের দামের পার্থক্য হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন তারা। এ ছাড়া বিপুল সংখ্যক অবৈধ প্রবাসী রয়েছেন, যাদের ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর সুযোগ নেই।
অভিবাসীবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিন্ডিকেটের কারণে সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছে। এর আগে মালদ্বীপ সরকারও বাংলাদেশি কর্মী নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এসব শ্রমবাজার বন্ধের মূল কারণ দুর্নীতি। অন্যদিকে শ্রমিকদের সঙ্গে রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালদের প্রতারণা। এ-সংক্রান্ত সংবাদ রোজ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে। এমনকি নাম ধরেই প্রকাশ হচ্ছে। তবু কেন মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মূলত অপরাধ করে শাস্তি না পাওয়ায় প্রতারণার ঘটনা বাড়ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শ্রমবাজারে। দেশের শ্রমবাজার বাঁচাতে এই সিন্ডিকেটকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। নয়তো আমাদের দেশের শ্রমবাজার অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে বা হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন (২ হাজার ৪৭৭ কোটি) ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসে। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্সপ্রবাহ ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কমে নেমে আসে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারে। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।
গত দুই বছরে অভিবাসী শ্রমিকদের অর্ধেকের গন্তব্য ছিল সৌদি আরব। এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার, কুয়েত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর। এসব শ্রমবাজারে শ্রমিকের সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে দেশের রেমিট্যান্সপ্রবাহও বাড়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে একেবারেই বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। এর প্রধান কারণ দালাল-সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। যাদের খপ্পরে পড়ে বিদেশগামীরা কয়েক লাখ টাকা খরচ করে দেশ ছাড়লেও পর্যাপ্ত কাজ পাচ্ছেন না। এমনকি অনেকে কাজ না পেয়ে হতাশা নিয়ে দেশে ফিরছেন। ফলে রেমিট্যান্স কমছে।
সিন্ডিকেটে বন্ধ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার : জনশক্তি রপ্তানির নিরিখে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। গত বছর সেখানে সাড়ে ৩ লাখ শ্রমিক গিয়েছিলেন, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪৪ হাজারের বেশি শ্রমিক গেছেন। দেশটি বাংলাদেশের রমরমা শ্রমবাজার হলেও দুর্নীতির কারণে ২০১৮ সালের পর গত ৩১ মে ফের বন্ধ হলো।
শ্রমবাজার বন্ধের দিনে প্রায় ৩২ হাজার মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক কর্মী দালাল-এজেন্সির প্রতারণায় দেশটিতে যেতে পারেননি। এই বিদেশগামী প্রত্যেকটি মানুষ ঋণ করে গড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা দালাল ও এজেন্সিকে দিয়েছেন। তারা নিরুপায় হয়ে বিমানবন্দর থেকে হতাশা নিয়ে গ্রামে ফিরেছেন। এই মানুষগুলো এখন কীভাবে ঋণ শোধ করবেন, তার উত্তর নেই কারও কাছে। আবার কত বছর পর দ্বার খুলবে এই শ্রমবাজারের, তারও নিশ্চয়তাও নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সৌদি আরব থেকে মাত্র ১৯৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৭৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৫৪ কোটি ১৯ লাখ ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৭২ কোটি ১৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশটি থেকে। এতে প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে কমেছে রেমিট্যান্সপ্রবাহ।
অবৈধ নিয়োগের কারণে বন্ধ মালদ্বীপের শ্রমবাজার : সিন্ডিকেট ও দালালদের দৌরাত্ম্যে ২০১৯ সালে বন্ধ হয় মালদ্বীপের শ্রমবাজার। শ্রমবাজার বন্ধের ওই বছরে দেশটিতে যান ৪ হাজার ৪১১ জন কর্মী। করোনা মহামারী শুরুর পর বৈধ কাগজ না থাকা কর্মীদের ধরে দেশে পাঠানো শুরু করে মালদ্বীপ। ২০২১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়েই ১৬ হাজার কর্মীকে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য করা হয়।
এরপর ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধই ছিল মালদ্বীপের শ্রমবাজার। এর মধ্যে কিছু কিছু কর্মী যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন পুরনো কর্মীর বদলি হিসেবে। আর কিছু কর্মী গেছেন পেশাদার ও দক্ষ কর্মী হিসেবে। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে প্রায় ৪০ হাজার অনিয়মিত বাংলাদেশি কর্মীকে বৈধ করেছে দেশটি। এরপর গত ডিসেম্বরে শ্রমবাজার চালু করা হয়।
চালুর পর দুদেশেই সক্রিয় হয়ে ওঠে দালাল চক্র। গত জানুয়ারি থেকে দালালরা মূলত অদক্ষ কর্মী পাঠানো শুরু করে দেশটিতে। এই শ্রমবাজার চালুর কয়েক মাস পরই অবৈধ শ্রমিক নিয়োগের কারণে গত ২২ মে ফের কর্মী নেওয়া বন্ধ করেছে দেশটি। অথচ ২২ মে পর্যন্ত মালদ্বীপ যেতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ৬ হাজার ৪৩৬ জন। তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ ভিসা না পেয়ে আটকা পড়েছেন। তারাও ভিসা জটিলতায় মালদ্বীপ যেতে পারেননি।
রোমানিয়া ও ইতালি শ্রমবাজারেও অস্থিরতা : মাত্র সাড়ে ৩ বছরে ৩৫ হাজারের বেশি শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছিলেন পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায়। সহজে ভিসাপ্রাপ্তি এবং কাজের সুযোগ থাকায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছিল দেশটি। বাংলাদেশে স্থাপিত হয়েছিল রোমানিয়ার অস্থায়ী ভিসা সেন্টারও। তবে কিছুদিনের মধ্যেই হোঁচট খায় সেই উদ্যোগ। বিএমইটির দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হঠকারী আচরণ, বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির খামখেয়ালি এবং অতি লোভের পাশাপাশি শ্রমিকদের মধ্যেও তৈরি হয় পশ্চিম ইউরোপে পাড়ি জমানোর প্রবণতা। ফলে বন্ধ হয়ে যায় ভিসা সেন্টার। সর্বশেষ গত ছয় মাসে বেশ কিছু শ্রমিক ভিসা পেলেও বিএমইটির কিছু কর্মকর্তার খামখেয়ালিপনার কারণে যথাসময়ে পাড়ি জমাতে পারছেন না তারা। ফলে এই শ্রমবাজারেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।
এদিকে ভালো নেই ইতালির শ্রমবাজারও। দেশ জুড়ে কর্মী সংকট কাটাতে দুই বছর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে প্রায় ছয় লাখ কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দেয় ইতালি। এই ঘোষণার পর বাংলাদেশি শ্রমিকরা দেশটিতে যাওয়া শুরু করেন। কিন্তু এখানেও জটিলতা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশি কর্মীদের ‘নুল্লা ওস্তা’ (ওয়ার্ক পারমিট) ইস্যু করা হলেও দীর্ঘ সময় ধরে তাদের পাসপোর্ট আটকে রাখছে বাংলাদেশে ইতালির দূতাবাস। বিষয়টি নিয়ে হতাশায় ভুগছেন ইতালিয়ান প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং বাংলাদেশি কর্মীরা। কিছুদিন আগে বাংলাদেশে ইতালির দূতাবাসের সামনে মানববন্ধন করেছেন বাংলাদেশি কর্মীরা।
এমন পরিস্থিতিতে ইতালির ভিসা পেতে দেরি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা দিয়েছে ঢাকায় অবস্থিত দেশটির দূতাবাস। গত ১ মে নিজেদের ফেসবুক পেজে দূতাবাস থেকে জানানো হয়, করোনা মহামারীর আগে সময়ের তুলনায় তিন গুণেরও বেশি এবং ২০২২ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি কর্মী আবেদন করেছেন। এসব আবেদনের সঙ্গে জাল নথি বা অনিয়মিত নুল্লা ওস্তা রয়েছে। এই পরিস্থিতির কারণে, দূতাবাসকে অতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা প্রকৃত আবেদনকারীদের প্রক্রিয়াটিকে ধীর করে দিচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে যে বা যারা সংকট সৃষ্টি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি হবে এবং সেই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।