'স্বাধীনতা সংগ্রামের অনুপ্রেরণায় স্বাধীন দেশের উপযোগী শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন সিরাজুল আলম খান। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানে তার রাজনৈতিক জীবন ও দর্শন পথ দেখায়।'
রবিবার (৯ জুন) রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সেমিনারে হলে ‘বাঙালির তৃতীয় জাগরণের পথপ্রদর্শক সিরাজুল আলম খানের’ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, আওয়ামী লীগের কারণে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারছি না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গণতন্ত্র রক্ষা করা যাবে না। তারা যতবার ক্ষমতায় আসছে ততবার গণতন্ত্র হরণ করেছে।
ভোটের অধিকার ও নিজের দেশের মালিকানা ফেরত চাইতে তরুণদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ফেরত দেয় না। শেখ হাসিনা নিজেই ঋণ খেলাপি। বেনজীর-আজিজকে ধরতে পারেন না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের এই অবস্থা হবে। আওয়ামী লীগের হাতে আমাদের স্বাধীনতা কখনো নিরাপদ নয়।
আব্দুস সালাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক শক্তি সৃষ্টি হয়েছিল তা দিয়ে স্বাধীন দেশ গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছিলেন সিরাজুল আলম খান। এই শ্রমিক লীগের জন্ম, কৃষক লীগের জন্ম সিরাজুল আলম খান দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কুপি জ্বালানোর কেউ ছিল না। সেই সময় তিনি কার্যালয়ে যেতেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি আন্দোলনমুখী করে তোলার জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল সিরাজুল আলম খাঁনের। যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধে গেলাম সে স্বপ্ন পূরণ হলো না।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, এখন রিটায়ার্ড আজিজ, রিটায়ার্ড বেনজীর দেখতে পাচ্ছেন। এস কে সিনহা রানিং বিচারপতি ছিলেন। তিনি ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে ফাউন্ডিং ফাদার নিয়ে বলেছিলেন। সিরাজুল আলম খান বাংলাদেশের অন্যতম ফাউন্ডিং ফাদার। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু ছাড়া সবার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করছে সরকার। এমনকি তার দলীয় লোকদেরও অনেক ক্ষেত্রে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে একচেটিয়া ব্যবসায় নেমেছে। সিরাজুল আলম খানরা ছিলেন বলেই সহজে মাত্র ৯ মাসে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সিরাজুল আলম খান মারা যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে কোথাও দেখিনি। শোক বিবৃতি দেওয়ার যে সাধারণ রাজনৈতিক সৌজন্য দেখাতে পারেনি। এ ঘটনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দেউলিয়াত্ব প্রমাণ করেছে। আওয়ামী লীগের ৫৫ হাজার ভাতা ভোগী মুক্তিযোদ্ধার জন্ম একাত্তর সালের পর। যারা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন আওয়ামী লীগের ইতিহাসে তারা নেই।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, স্বাধীনতার কথা বললাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা কতিপয় ব্যক্তির স্বাধীনতায় পরিণত হলো। শাসক বদলায় কিন্তু শাসন ব্যবস্থা বদলায় না। যদি একই ধরনের ব্যবস্থা থাকে তাহলে জনগণের প্রকৃত স্বাধীনতা আসে না।
তিনি বলেন, সিরাজুল আলম খান ধারণ করতেন স্বাধীনতার অর্থ সকল মানুষের স্বাধীনতার উপযোগী রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি করা। আজ তরুণদের ভাবতে হবে এই স্বাধীন রাষ্ট্রে আমার জায়গাটা কোথায়? যারা ক্ষমতায় আছেন সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে মধ্যরাতে ভোট ডাকাতি করার জন্য।
সাকি বলেন, সরকার আরও বেশি কর্তৃত্ব চাইবে, আরও বেশি জমিদারি চাইবে। আজকের লড়াই হচ্ছে রাষ্ট্রটাকে জনগণের করা। সরকারের পায়ের তলায় নেই। এরা দাপট দেখায়। এই দাপট আবার ভেঙে পড়ে যখন মানুষ নৈতিক প্রতিরোধ দেখায়।
অংশীদারিত্বের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজকে মাফিয়াদের দেশে পরিণত হয়েছে। এই জায়গা থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পর ঔপনিবেশিক শাসন, লুণ্ঠনের ব্যবস্থাকে বহাল রেখেই বাহাত্তরে একটা সংবিধান করা হলো।
স্বপন বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচারের সংবিধান আমরা পাইনি। এই সংবিধানে একদিকে বলা হয়েছে জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক অন্যদিকে জনগণের সেবককে সকল ক্ষমতার অধিকারী করা হয়েছে।
যুব বাঙালির সভাপতি রায়হান তানভীরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ সরকার। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুব বাঙালির সংগঠক মশিউর রহমান দীপু।
আলোচনায় অংশ নেন ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ, প্যালেস্টাইন প্রত্যাগত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু, যুব বাঙালির উপদেষ্টা কাজী তানসেন, সংগঠক সাগর খালাসী, মোহাম্মদ আলী পারভেজ, ওয়ালিদ হাসান ভুবন প্রমুখ।