দেশের প্রধান দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সব অঙ্গনেই এই প্রধান দুই দলের কর্মী-সমর্থক রয়েছে। ব্যতিক্রম নয় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দেশের দু’একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সবখানেই আওয়ামীপন্থী ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন রয়েছে। পাশাপাশি আছে জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠনও। যারা বিভিন্ন সময় দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যাম্পাসগুলোতে সভা-সমাবেশ, মানবন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করেন। কেন্দ্রীয় রাজনীতির মতো তাদের মাঝেও বিভেদ রয়েছে।
যেমন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘ডামি নির্বাচন’ বর্জনের জন্য আন্দোলন করে বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা। এভাবে নানান সময়ে নিজ দলীয় কর্মসূচি পালনে আলাদাভাবে মাঠে দেখা যায় শিক্ষকদের। দেশের ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহারের দাবিতে মাঠে শিক্ষকরা। এই আন্দোলনে সকল মতাদর্শ ও দলের শিক্ষকরা স্বতঃফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় নানা সমালোচনা তৈরী হয়েছে।
নেটিজেনরা প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘নিজেদের স্বার্থে শিক্ষকরা এখন একই প্লাটফর্মে দাঁড়িয়েছেন। বিষয়টি একদিক থেকে পজেটিভ মনে হলেও অন্যদিক থেকে মোটেও ভালো খবর নয়। কারণ শিক্ষার্থীদের ভবিষৎতের কথা চিন্তা না করেই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অথচ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিতে শিক্ষকদের কখনো একই প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আওয়াজ তুলতে দেখা যায়নি। তবে পেনশন বাতিলের আন্দোলনে তারা একাট্টা হয়েছেন।’
জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে আগামীকাল সোমবার (১ জুলাই) থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
রবিবার (৩০ জুন) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংগঠনটি জানিয়েছে, পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন তিন মাসেরও অধিক সময় ধরে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছরের ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, প্রতীকী স্মারকলিপি প্রদান ও অবস্থান কর্মসূচি মতো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত ২৫-২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিত হয় এবং আজ ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে।
আরও বলা হয়, আপনার অবগত আছেন, প্রস্তাবিত ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাস্তবায়ন করা হলে বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, যারা আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় আসতে আগ্রহী, তারাও এর ভুক্তভোগী হবেন। কাজেই আমাদের এ আন্দোলন আগামী দিনের তরুণ সমাজের স্বার্থরক্ষার পক্ষে এবং উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থা চক্রান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বলছে, আমরা এখনও আশা করি সরকার অনতিবিলম্বে এ যৌক্তিক দাবি মেনে নেবেন- যাতে আমরা ক্লাসে ফিরে যেতে পারি। অন্যথায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশ পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ১ জুলাই ২০২৪ থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী এক শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই আন্দোলন সকল শিক্ষকদের আন্দোলন। সরকার অনায্যভাবে আমাদের ওপর নতুন পেনশনব্যবস্থা চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না। তাই আন্দোলনে এসেছি।’
তবে শিক্ষকদের চলমান এই আন্দোলন দীর্ঘমেয়াদি হলে সবথেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন শিক্ষার্থীরা। কারণ দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখনও করোনার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুনভাবে সেশনজট তৈরি হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্লাস-পরীক্ষা চালু রেখে শিক্ষকরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন, আমরা তা প্রত্যাশা করি। শিক্ষার্থীদের সেই প্রত্যাশা শিক্ষকরা কতটা আমলে নিবেন তা সময়েই বলে দিবে।