বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৫ ফাল্গুন ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যু ছায়াযুদ্ধের গতি বাড়াবে

আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৫০ এএম

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন ‘হামাস’-এর রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর সংগঠনটির শীর্ষনেতা সামি আবু জুহরি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এভাবে ‘হামাস একটি আদর্শ, একটি প্রতিষ্ঠান এবং এটি কোনো ব্যক্তিবিশেষের নয়। হামাস যাবতীয় আত্মত্যাগের ঊর্ধ্বে উঠে তার কার্যক্রম চালাবে এবং আমরা জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।’ সত্যিকার অর্থে ইসরায়েল নামের একটি চূড়ান্ত দখলদার রাষ্ট্রের সামনে দাঁড়িয়ে যেকোনো প্রতিরোধ আন্দোলন আপনা-আপনি অঙ্কুরিত হাওয়ার কথা। অতীতের ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত এ কথার বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না, যেখানে দশকের পর দশক ধরে শরণার্থী শিবিরের বাস্তুচ্যুত শিশুরা রাষ্ট্রহীনতার গ্লানির মধ্যে বিদ্রোহী মনোভাবে বেড়ে ওঠে। সামি আবু জুহরি সেই ফিলিস্তিনের মাটির প্রজ¦লিত জাতীয় মুক্তির বাসনার কথাই ইঙ্গিত করেছেন। ইসমাইল হানিয়া যেমন মাত্র ২৫ বছর বয়সে ইসরায়েলি কারাপ্রকোষ্ঠ চিনেছেন; একইভাবে এখনো হাজারে হাজার শরণার্থী তাঁবুতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কিশোর বয়সী থেকে তরুণরা দেশকে মুক্ত করার লড়াইয়ে ঝাঁপ দেন। সেই কারণেই চার দশকেও ফিলিস্তিনের মাটি থেকে হামাসের নাম-নিশানা মুছে ফেলতে পারেনি দুনিয়ার সর্বাধুনিক যুদ্ধ-সরঞ্জামের পসরা সাজানো ইসরায়েল। কার্যত ইসমাইল হানিয়াকে ইরানের রাজধানী তেহরানে যেভাবে গত বুধবার সকালে হত্যা করা হয়েছে, তাতে ইসরায়েলের ক্ষমতা আর সক্ষমতার বাহাদুরির হয়তো ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে (এখনো দায় স্বীকার করেনি ইসরায়েল)। কিন্তু তাতে হামাসের প্রতিরোধের মেরুদণ্ড ভেঙে পড়বে বলে মনে হয় না। প্রকৃতপক্ষে গাজার জনসাধারণ আর হামাস যোদ্ধা আলাদা করা মুশকিল। সেই কারণেই ১০ মাসেও বিলীন হয়নি হামাস। তবে এও সত্যি সালেহ আল আরোরি, রেজা মৌসাভি, ইব্রাহিম বিয়ারি থেকে শুরু করে প্রায় ১০ মাসের যুদ্ধে যত হামাস নেতা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মধ্য ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুটাই সংগঠনটির কাছে সবচেয়ে বড় আঘাতের ব্যাপার এবং এটি সাময়িক শূন্যতা তৈরি করবে। বহির্বিশে^ দেন-দরবারের নেতার অভাব দেখা যাবে সংগঠনটিতে।

 

এখন মোটা দাগে প্রশ্নটি দাঁড়াল, হানিয়াকে হত্যা করে ইসরায়েল কী পেল? আরও বড় প্রশ্ন হলো, মধ্যপ্রাচ্য আর ফিলিস্তিনের সংকটের সীমা-পরিসীমা কী হাল হলো? এ অবস্থায় এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। সংকট কতটা গভীর হলো, তাও সময় বলবে। আপাতত পরিস্থিতি এটুকু অনুমান করা যায়, আগামী দিনে ইয়েমেন, লেবানন থেকে ধেয়ে আসা রকেট আর ছোটখাটো ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নিশানা হতে যাচ্ছে ইসরায়েল। আর তেলআবিব হয়তো তার যাবতীয় সমরাস্ত্র দিয়ে এসব হামলার অনেকটা ঠেকিয়েও দেবে, তবে ইসরায়েলকে স্বস্তিতে থাকতে দেবে না ওইসব অঞ্চলের যোদ্ধা দল, যারা কিনা তেহরানের প্রধান ‘অরাষ্ট্রীয় মিত্র’। তেহরানের কেন্দ্রে গিয়ে গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে নিখুঁত অভিযান কারা চালিয়ে হানিয়াকে হত্যার অপারেশনের পর এ অঞ্চল বারুদের বিস্ফোরণের দোরগোড়ায়। এদিকে এর মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো যে, ইসরায়েল বরাবরের মতো আরব ভূখণ্ডে নিজের অস্তিত্ব জারি রাখতে অস্ত্র আর সামরিক কৌশলকেই শেষ এবং একমাত্র উপায় মনে করে। গাজায় ৪০ হাজারের মতো মানুষ হত্যার পরও তারা যুদ্ধবিরতি, দমে যাওয়া বা নমনীয় হওয়ার রাস্তায় নেই। একটি যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য গাজার নিয়ন্ত্রক কর্র্তৃপক্ষ হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা যতটা এগিয়েছিল, তা হানিয়ার হত্যাকাণ্ডে নিশ্চিত ভেস্তে যাবে।  সর্বোপরি, অশান্ত মধ্যপ্রাচ্যের আগুনে ইসরায়েল আরও ঘি ঢালল। ইসরায়েলি যুদ্ধযন্ত্র এমন একটি সময়ে এই কাণ্ডটি ঘটাল, যখন ইরান এমনিতেই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্টকে হারিয়ে একটি শোকের সময় পার করছে। এর মধ্যে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে গিয়েই নিহত হলেন তেহরানের ‘প্রিয় অতিথি’ হানিয়া। উত্তর তেহরানের একটি বাড়ির নিরাপত্তার ঘেরাটোপ পেরিয়ে নিখুঁত গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে যেহেতু ৬২ বছর বয়সী হানিয়া প্রাণ হারালেন, সেহেতু গোটা বিষয়টি ইরানের শিয়া মতাবলম্বী রক্ষণশীল প্রশাসনের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার মতো হলো। ব্যাপারটি ইরানি কর্মকর্তাদের মনোবলেও ধাক্কা দিয়েছে নিঃসন্দেহে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে হামাসই ইরানের একমাত্র সুন্নীপন্থি কোনো মিত্রগোষ্ঠী, যার শীর্ষস্তরের নেতাকে নিজ ভূখণ্ডেই রক্ষা করতে পারল না তেহরানের নিরাপত্তা জাল। ইসরায়েল ও পশ্চিমাবিরোধী রণকৌশলের প্রশ্নে ইসমাইল হানিয়ার মতো নেতা তাদের জন্য ছোটখাটো কেউ নন।

স্বভাবতই গত এক দেড় দশকে ইরানের অভ্যন্তরে এমন কিছু হামলা হয়েছে, যা দেশটির নিরাপত্তা উদ্বেগ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে বাধ্য। হানিয়াকে হত্যার অভিযানসহ বিগত কয়েক বছরে ইরানের অভ্যন্তরে ও বাইরে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ইসরায়েলি গোপন অভিযানের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। ২০২০ সালে ইরানের প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে তেহরানে গুপ্তহত্যা চালিয়ে হত্যা করা হয়। এতে ইসরায়েলের গোয়েন্দাদের হাত রয়েছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এসব হামলায় বাদ যায়নি ইসলামি বিপ্লবের সমর্থক ইসলামি গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) শীর্ষ কর্মকর্তারাও। সর্বশেষ সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে এ রকমই গুপ্তহত্যা চালিয়ে সাত গার্ড কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল। এর আগে ২০২২ সালে আইআরজিসির একজন কর্নেল তেহরানের বাসভবনের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি ইরানে নানা সময়ে নানা মাত্রার হামলা হয়েছে। ইরানের পরমাণু স্থাপনায় লাগাতার সাইবার হামলা হয়েছে। এবার ইসমাইল হানিয়া যেভাবে বাসার ভেতর প্রহরীসহ খুন হলেন, তাতে সবচেয়ে বড় সন্দেহ আর অনিশ্চয়তার মেঘে ঢাকা পড়েছে ইরানি নিরাপত্তাশৃঙ্খলের ফাঁকফোকর। এরই মধ্যে ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধছে, তবে কী ইরানের বর্তমান রাষ্ট্রযন্ত্রের নেতৃত্বের আসনে থাকা সবাই ইসরায়েলি নিশানার আওতায়! তা ছাড়া পরমাণু স্থাপনাও যে নজরদারির আওতার বাইরে নেই, তা ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এই মুহূর্তে কোনো বড় আঞ্চলিক সংঘাত বা ইরান-ইসরায়েল সরাসরি যুদ্ধের সম্ভাবনা নেই। এটি গাজা ও ইরানের শীর্ষনেতাদের মনোভাবেই বোঝা যাচ্ছে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি এই হত্যাকাণ্ডের জবাব দেওয়া তেহরানের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে ঘোষণা দিলেও, ইরানের তরফ থেকে আগ্রাসী জবাবে সম্মুখসমরে নামার সম্ভাবনা নেই বলেই ধারণা করা যায়। এ ক্ষেত্রে  ইসরায়েলকে জবাব দিতে আঞ্চলিক প্রতিরোধশক্তির ওপরই নির্ভর করবে ইরান, যেমনটি তারা বরাবরের মতো করে থাকে। বিশেষ করে চলতি সপ্তাহে বৈরুতে ইসরায়েলি অভিযানে লেবানন-ভিত্তিক শিয়া যোদ্ধা দল হিজবুল্লাহর কমান্ডার ফুয়াদ শুকুর নিহতের মধ্যে হানিয়ার হত্যাকাণ্ড গোটা পরিস্থিতিকে এমন জায়গায় নিয়ে গেল, যেখানে ইসরায়েল হয়তো তার সীমানার চারপাশের কোনো না কোনো দিক থেকে জবাব পাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ইয়েমেন থেকে লেবানন, সিরিয়া থেকে ফিলিস্তিন কিংবা সুদূর ইরাকে বহু অস্ত্রধারী গোষ্ঠী ইরানের মদদপুষ্ট। তাই সরাসরি সংঘাতের বদলে চিরচেনা ‘প্রক্সি ওয়ার’ তথা ‘ছায়াযুদ্ধের’ মাত্রা বাড়তে পারে। আর এতে পশ্চিমা স্থাপনা বা ঘাঁটি  লক্ষ্যবস্তু  হতে পারে।  ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুতে শিয়াপন্থি হিজবুল্লাহ থেকে ইয়েমেনের শিয়া মতাবলম্বী বাহিনী হুতি কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ইসরায়েল এবং লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যকার সীমান্তে জায়নবাদী বাহিনী ও হিজবুল্লাহ মুখোমুখি সর্বাত্মক সংঘাত থেকে এক পা দূরে। গাজা যুদ্ধের মধ্যে সেখানে নিয়মিত উত্তেজনা চলছে। সুতরাং ইরানের দিক থেকে এসব মদদপুষ্ট বাহিনীকে কাজে লাগানোই এ মুহূর্তে বিবেচনাধীন হতে পারে। এর বাইরে হামাসের দিক থেকেও নতুন কোনো কৌশল হাজির হতে পারে। এই কৌশল যে শুধু নেতৃত্ব নির্বাচন, তা নয়; বরং সংগঠনটির সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড নতুন করে আক্রমণের পরিকল্পনা আঁটবে। আর হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি-বন্দিমুক্তির আলোচনা সম্ভবত বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের এজেন্ডায় ততটা গুরুত্বের জায়গা দখল করে নেই। কারণ নিজ দেশের অব্যাহত বিক্ষোভের মুখেও সমঝোতার পথে না হেঁটে এমন বেআইনি হত্যা মিশন কোনো ইতিবাচক বার্তা বহন করে না। তা ছাড়া হামাসের মতো ধর্মাশ্রয়ী স্বাধীনতাকামী সংগঠনে হানিয়াকেই বাস্তববাদী মনে করা হতো। কাতারের দোহায় বসে তিনি বিশ্ব জুড়ে হামাসের কূটনীতি সামলাতেন। এবার তার অনুপস্থিতি সমঝোতা ও সমাধানের আলোচনাকে কঠিন করে তুলতে পারে।

ইসমাইল হানিয়ার মতো শীর্ষনেতার অভাব ‘যিনি কিনা একই সঙ্গে আপসহীন’ পূরণ  করতে পারবে কিনা হামাস; সেটাই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বাস্তবতা হলো, ইসরায়েল রাষ্ট্রের দখলদারি, বর্ণবাদী আর যুদ্ধবাজ মানসিকতা যত দিন অটুট থাকবে তত দিন হামাসের মতো সংগঠন সেখানে থাকবেই। শুধু গাজার মাটিতেই নয়, বরং গোটা ফিলিস্তিনেই হামাসের জনপ্রিয়তা রয়েছে। হানিয়ার মৃত্যুতে পশ্চিম তীর অচল হয়ে পড়েছে, অথচ সেখানকার ফিলিস্তিন কর্র্তৃপক্ষ (পিএ) চালাচ্ছে ফাতাহ; হামাস নয়। সামগ্রিকভাবে মাহমুদ আব্বাস ও তার দল ফাতাহর নতজানু মনোভাবের কারণে দুর্নীতিবাজ পিএ প্রশাসন ক্রমেই জনভিত্তি হারিয়েছে। নাটকীয় ব্যাপার হলো, ২০০৭ সালে হামাস-ফাতাহ ঐক্যের সরকারের পিএ প্রশাসনে হানিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। বলা বাহুল্য, গাজা-পশ্চিম তীর নিয়ে সর্বশেষ ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে হানিয়ার হামাস ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ফাতাহকে হারিয়ে জয়ী হয়। পশ্চিমা প্রশাসন আর ইসরায়েলি চাপে পিএ প্রেসিডেন্ট ও ফাতাহপ্রধান আব্বাস সেই সরকার ভেঙে দেন। সেই থেকে আজও গাজায় ঢুকতে পারেনি ফাতাহ। পিএর কর্র্তৃত্বের বদলে সেখানে এখনো হামাসের শাসন বলবৎ। দীর্ঘ এক-দেড় দশক ধরে পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের মুখে দাঁড়িয়ে পিএ প্রশাসন নতজানু। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সর্বোতভাবে ইসরায়েলি দখলদারত্ব। ফিলিস্তিনিদের জনবিন্যাস ইতিহাসের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে। এ অবস্থায় বহু জরিপে দেখা গেছে, হামাসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কিন্তু আব্বাসের প্রশাসন ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ২০০৬ সালের পর আর নির্বাচন আয়োজন করেননি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হামাসের ইসলামপন্থি মতাদর্শ জায়গা দখল করেছে, যার ছায়াতলে জাতীয় মুক্তির স্বপ্ন দেখা তরুণরা দলে দলে ভিড় করেছে। সুন্নি মতাদর্শের হামাস বরাবরের মতো স্বাধীনতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ আর জাতীয় মুক্তি সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছে। অন্যদিকে ফাতাহ চরম সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে। এমনকি গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলার পর হামাসের জনপ্রিয়তার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। ফিলিস্তিনিদের এখনকার প্রজন্ম রাষ্ট্রহারা অবস্থা দেখতে দেখতে ক্লান্ত। তাই হামাসের ভিত্তিটা লুকিয়ে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের ক্রোধ আর বঞ্চনায়। 

১৯৮৩ সালে প্রথম ইন্তিফাদার (ফিলিস্তিনিদের জাগরণ) সময় ইসমাইল হানিয়ার মতো তরুণ ছাত্র আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর শরণার্থী পরিবারে বেড়ে ওঠা হানিয়া গোটা জীবনটাই ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রামে ব্যয় করেছেন। আশির দশকে ইসলামি চিন্তক আহমেদ ইয়াসিনের হাত ধরে যোগ দেন হামাসে, যার ভিত্তি ছিল মিসরভিত্তিক মুসলিম ব্রাদারহুড। গোটা আশির দশকে কয়েকবার তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করে ইসরায়েলি প্রশাসন। পরে তিনিই হয়ে ওঠেন হামাসের অন্যতম শীর্ষকর্তা। ২০০৬ সালের নির্বাচনের পর ফিলিস্তিনিদের ঐক্যের সরকারে তিনিই হন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বিশ্ব জুড়ে ফিলিস্তিনি নেতা হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ২০১৭ সালে খালেদ মেশালের হাত থেকে সংগঠনে রাজনৈতিক শাখার দায়িত্বভার তুলে নেন। ফিলিস্তিনিদের মুক্তির জন্য লড়তে গিয়ে তার পরিবারও প্রায় নিশ্চিহ্ন। চলতি যুদ্ধে গত এপ্রিলে তার ছেলেরাসহ নাতি-নাতনিরা প্রাণ হারিয়েছেন।

ধ্বংসস্তূপের মধ্যে স্বজনহারানোর শোকে ফিলিস্তিনিদের দিন-রাত যখন একাকার, তখন হানিয়ার মৃত্যুর খবর অবরুদ্ধ গাজাবাসীর বেদনা আরও গভীর হয়েছে। হানিয়াকে ফিলিস্তিনিরা তাদের জন্য অকাতরে লড়ে যাওয়া এক বীর মনে করেন। হানিয়ার মৃত্যু যেন ফিলিস্তিন ছাড়িয়ে জর্দান, লেবানন ও সিরিয়ার শরণার্থী তাঁবুগুলোকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

লেখক: সাংবাদিক ও বিশ্লেষক

[email protected]

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত