পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইজারাদারের বগা-চরগরবদির খেয়াঘাট দখলে নিয়ে জোর করে টাকা তুলছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতা সাইফুল গাজী, সরোয়ার মৃধা ও লোকমান মৃধার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা দখলবাজির এমন কাজ করছেন। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিএনপির অন্যান্য নেতাকর্মীরা।
ইজারাদার সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে পটুয়াখালী জেলা পরিষদের কাছ থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থক মো. কামরুজ্জামান হাওলাদার ৩০ লাখ ১৪ হাজার টাকায় খেয়াঘাটের ইজারা নেন। সরকারি বিধি মেনে ঘাটের কার্যক্রম চলছিল।
গত ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। এ সুযোগে মুরাদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল গাজী, ৭নং ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি সরোয়ার মৃধা ও ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক লোকমান মৃধার নেতৃত্বে ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও শ্রমিক দলের নেতাকর্মীদের সমন্বিত একটি দল ঘাটের সব ব্যবসা তাদের দখলে নেয়।
গত ১৭ আগস্ট খেয়া ঘাট ও সংলগ্ন দোকান, রেস্তোরা থেকে সাইফুল গাজী, সরোয়ারম মৃধা ও লোকমান মৃধার একান্তলোক নাসির হাওলাদার, রুহুল মৃধা টাকা তুলতে শুরু করে। ঘাটের দায়িত্বে থাকা ইজারাদার কামরুজ্জামানের লোকদেরকে মারধর করে চক্রটি তাদের ঘাট থেকে বের করে দিয়ে নিয়মিত টোল আদায় করছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে চরগরবদি ঘাট এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফেরীঘাটের পন্টুণের ওপর কয়েকজন ব্যক্তি মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার থামিয়ে টাকা তুলছেন।
স্থানীয়রা জানান, তারা সাইফুল গাজী ও সরোয়ার মৃধাদের লোক। দিন প্রতি ৫০০ টাকা মজুরিতে কাজ করছেন তারা।ঘাটের দোকানিরা জানান, প্রতিদিন ঘাট ও আশপাশের দোকানপাট থেকে শত শত টাকা তোলা হয়। টাকা তোলার দায়িত্বে রয়েছে সাইফুল গাজীর ইউনিয়ন যুবদলের কর্মী নাসির, রুহুলসহ কয়েকজন যুবক।
বগা-চরগরবদি খেয়াঘাটের ইজারাদার আওয়ামী লীগের সমর্থক মো. কামরুজ্জামান হাওলাদার বলেন, ‘বিএনপি নেতা সাইফুল গাজী, সরোয়ার মৃধা, লোকমান মৃধা ও তাদের লোকজন ঘাট দখল করে নিয়েছে। খেয়াঘাটের ইজারায় ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছিল। অথচ তারা বিনিয়োগ ছাড়াই ঘাট দখলে নিয়ে তাদের লোকজন দিয়ে টাকা তুলছেন। এব্যাপারে ঘটনার দিনই দুমকি থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি ।’
ঘাট দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা সাইফুল গাজী বলেন, ‘কিছু ছাত্র, পোলাপান ঘাটে এসে ইজারাদারদের বিরক্ত করছিল। ব্যাপারটি নিয়ে ইউএনও সাহেবের সঙ্গে বসেছিলাম। ইউএনও সাহেব সরকারি ইজারা যেন নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে আমাদের দেখে রাখতে বলেছেন। টাকা তুলে ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা।’
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব স্নেহাংসু সরকার কুট্টি বলেন, ‘দলের নাম ভাঙিয়ে যারা অন্যায় কাজ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: শাহীন মাহমুদ বলেন, ‘সরকার পতনের কয়েকদিন পর খেয়া ঘাট দখলের অভিযোগ নিয়ে ইজারাদারের পক্ষে লোকজন আমার কাছে এসেছিলেন। আমি এ ব্যাপারে তাদের পুলিশ এবং জেলা পরিষদের সঙ্গে কথা বলতে বলেছি।’