কুষ্টিয়ায় লেবেল ক্রসিংয়ে সৃষ্ট জ্যামে আটকে থাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে নিজের পায়ের জুতা খুলে বেধড়ক মারধর করেছে দুই নারী। এই ঘটনায় ওই দুই নারীকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের প্রাণকেন্দ্র কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন জামে মসজিদের দক্ষিণ পশ্চিমকোন সংলগ্ন মোড়ে এই ঘটনা ঘটে।
আকস্মিক ঘটে যাওয়া এই ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পরে তদন্তে নেমে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শহরের থানাপাড়া ছয় রাস্তার মোড় এবং হাউজিং বি-ব্লক থেকে দুই নারীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- শহরের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী সোহানা ইসলাম (৪৪) এবং হাউজিং বি-ব্লকের বাসিন্দা মোবাইল ব্যবসায়ী রিপন হোসেনের স্ত্রী সানজিদা আক্তার শান্তা (৩৯)।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ঘটনাস্থলে ঘটে যাওয়া দৃশ্যে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত কনস্টেবল নাজমুল হাসানের উপর দূর থেকে ছুটে এসে একজন নারী নিজ পায়ের জুতা খুলে হঠাৎ মারধর শুরু করে। সেখানে পাশে দাড়ানো অপর এক নারীও যুক্ত হয় ওই পুলিশ সদস্যের উপর হামলা ও মারধরের সাথে।
ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা সংযুক্ত ফার্মেসির দোকানদার প্রত্যক্ষদর্শী আসিফ বলেন, ওই নার তার বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলেন, এ সময় শাটল ট্রেন এসে প্লাটফরমে দাঁড়ানোর কারণে রেল গেটের দক্ষিণপাশে বিভিন্ন যানবাহনের জ্যাম সৃষ্টি হয়। কিছুক্ষণ পর ট্রেন ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ওই নারী তার রিকশাটিকে পার করে দিতে বলেন। কিন্তু রাস্তায় জ্যাম থাকায় ট্রাফিক পুলিশ সেটা করে দিতে পারেননি। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ওই নারীসহ আরও এক নারী এসে পুলিশকে বেধড়ক মারধর করে চলে যায়। তবে ঠিক কি কারণে এই ধরনের মারধর সেটা আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি।
ঘটনাস্থলে আক্রান্ত পুলিশ সদস্য নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমি সদ্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে ট্রান্সফার হয়ে কুষ্টিয়া কর্মস্থলে যোগ দিয়েছি। থাকি পুলিশ লাইনের ব্যারাকে। এই জেলায় আমার সহকর্মীদের বাহিরে তেমন কারো সাথে এখনও ঠিকমতো পরিচয়ই হয়ে উঠেনি। অথচ আজকে আমার উপর দুই নারী যে হামলা করেছে তাতে যে কেউ দেখে মনে করতে পারেন যে তাদের সাথে আমার আগে থেকেই কোনও পরিচয় এবং বিবদমান দ্বন্দ্বের জেরে আমাকে মারধর করেছে। বিষয়টি আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েও পড়েছে। সেকারণে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কাজে বাধাদানের অভিযোগ এনে মামলা করেছি।
গ্রেপ্তার সানজিদা আক্তার শান্তার স্বামী রিপন হোসেন বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় ডিবি পুলিশের একটা মাইক্রো এসে এনএস রোড পাঁচরাস্তার মোড়ে আমার দোকান থেকে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। আমাকে আমার বাসায় নিয়ে গিয়ে আমার স্ত্রী শান্তাকে তুলে নিয়ে থানায় যায়। তখনও আমি ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানিনা। পরে পুলিশের দেখানো ভিডিও ফুটেজ দেখে আমি আমার স্ত্রীকে সনাক্ত করি। ওই ভিডিও ফুটেজের ঘটনা দেখে আমি নিজেই অবাক হয়ে গেছি। এটা কিভাবে সম্ভব? আমার স্ত্রী শান্তা এমন অস্বাভিক আচরণ কেন করল তা আমিও বুঝে উঠতে পারছিনা। এমনকি ইতোপূর্বেও শাস্তার এমন আচরণ আমার চোখে পড়েনি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পুলিশ পরিদর্শক শেহাবুর রহমান জানান, রাষ্ট্রীয় কাজে দায়িত্বরত আইনশৃংখলা বাহিনীর উপর হামলা ও কাজে বাধাদানের অভিযোগে আক্রান্ত পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল হাসানের দেওয়া এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে আটক দুই নারীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাদের আদালতে সৌপর্দ হবে।