বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে মাঠের খেলার চেয়ে মাঠের বাইরের খেলাই যেন বেশি জমে! কোন দলের ক্রিকেট সরঞ্জাম খেলা শুরুর পর পৌঁছায়, কারও মাঝপথে অধিনায়ক বদল হয়, কেউ জুয়াড়ির প্রস্তাব পান...এসব খবরই গরম করে রাখে প্রেসবক্স। তবে এবারের বিপিএলে শুরু থেকেই মাঠের খেলা ভালো হলেও মাঠের বাইরের ঘটনাই বেশি ব্যস্ত রেখেছে সাংবাদিকদের। টিকিটের জন্য দর্শকদের তুলকালাম, বুথ ভাঙচুর, আগুন দেওয়া এসবের বাইরে আলোচনায় দুর্ব্যবহার! বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়ার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মাহফুজ আলম। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই মুখোমুখি বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুজনেই বিসিবি পরিচালক হয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়ন পেয়ে। বিপিএলকে ঘিরে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনায় দুজনের ভেতর সৃষ্টি হয়েছে মনোমালিন্য। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় আসরের প্রথম পর্ব চলাকালেই নাকি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের সামনেই নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে অপদস্থ করেন ফারুক আহমেদ। কোনো একটি বিষয়ে ফাহিমকে বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘ইউ অ্যাক্টিং লাইক ফানি? বিসিবি প্রেসিডেন্ট হতে চান? আসেন বানায় দেই’!
একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফাহিম এই ঘটনা অস্বীকার করেননি। বরং তিনি বলেছেন, ‘বিসিবি সভাপতির সেই মন্তব্য আমি পুনরায় বলতে চাই না। তবে সেটি আমাকে খুবই আশাহত করেছে। আমি জানি না কেন তিনি এতগুলো মানুষের সামনে এমন মন্তব্য করলেন! পরিচালকদের যে জায়গা দেওয়া দরকার সেটি কতটা বিসিবি প্রেসিডেন্ট দিতে চান, তা স্পষ্ট নয়। আমার কথাটা কিছুটা ভিন্ন হতে পারত। কারণ, আমরা দুজনই নতুন এসেছি। সেখানে আমাদের মধ্যে একসঙ্গে কাজ করার যে ব্যাপারটা, সেখানে এ ধরনের মন্তব্য সমীচীন নয়।’
এই প্রসঙ্গে সিলেটে ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পদত্যাগ করতে চায়নি। বলেছে কাজ করা কঠিন। পদত্যাগ করতে চায় এমন কিছু শুনিনি। যাই হোক, ফাহিম ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যমুনা টিভির সঙ্গে আমি কথা বলেছি। ফাহিম ভাই আমার সঙ্গে ছিল।’ ফারুক আরও বলেছেন, ‘নতুন বোর্ড বলতে তো ফাহিম ভাই আর আমাকেই বোঝায়। বাকি সবাই তো পুরনো। যখন কাজের মাত্রা বেশি, লোকসংখ্যা কমÑ তখন অনেক দিকে নজর দিতে হয়। তখন ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। ঐ জিনিস থেকেই উনি হয়তো চিন্তা করেছেন কাজ ঠিকমতো করতে পারছেন না। টিকিটের চাপ ছিল, প্রেসিডেন্ট বক্সেও একটা ঘটনা ঘটেছে। সব মিলে দিনটা আমার সেরা দিন ছিল না। তখন একটা কথা এসেছে। কার সঙ্গে কী বলেছি হয়তো আমার মনেও নেই। মতের অমিল খুব স্বাভাবিক। এখানে দোষের কিছু দেখি না। এগুলো আগে নিজেরা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।’
তবে বিসিবি প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, সাময়িক মতানৈক্য হলেও এখন সব ঠিক হয়ে গেছে, ‘ফাহিম ভাই আমার বয়োজ্যেষ্ঠ, সিনিয়র মানুষ। আমারও সিনিয়র প্লেয়ার। আমার অনেক সিনিয়র। সেদিক বিবেচনা করে উনি হয়তো মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন। ফাহিম ভাই আর কোনো কথা বলতে চাননি। আমার পাশেই ছিলেন। মোট কথা আমরা সমস্যার সমাধান করেছি।’
দুজনের সম্পর্ক হয়তো ফের জোড়া লেগেছে, তবে একটা ফাটল যে তৈরি হয়েছে সেটা স্পষ্ট হয়ে গেছে তাদের কথাতেই।