বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তদের জীবনযাপন আরও কঠিন হবে

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম

নতুন বছরের শুরুতে হুট করে প্রায় ১০০টি পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের লোকদের জীবনযাপন আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভ্যাট একটি প্রত্যক্ষ কর। এটি ভোক্তা দিয়ে থাকেন বলে একে ভোক্তাকরও বলা হয়। যেহেতু ভ্যাট ভোক্তা দেন কাজেই ভ্যাট বাড়ানোর অর্থই হচ্ছে তাদের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া। বর্ধিত ভ্যাট হার কার্যকর হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবেন। ফলে ভোক্তা বা জনগণকে আগের চেয়ে বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সরকারের খুবই দুর্বল অবস্থার প্রতিফলন। মানুষকে বোঝার সক্ষমতা তাদের নেই। পাশাপাশি এটি তাদের দায়িত্বহীনতার প্রতিফলন। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে তা বোঝা যায়। শেখ হাসিনার অর্থমন্ত্রীর মতো কথা বলছে যে মানুষের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না। আসলে সরকার আইএমএফের কথায় চলছে। সরকারের নিজস্ব কোনো চিন্তাভাবনা নেই। মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। সরকারের এ ভুল সিদ্ধান্তের ফলে অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়বে।’

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, ‘অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানো নজিরবিহীন। এর আগে এমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। যদিও অন্তর্র্বর্তী সরকার বলছে, এই বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক কম প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে। কিন্তু এর প্রভাব আখেরে ভোক্তাদের ওপরই পড়বে।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ এমনিতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট। এ সিদ্ধান্ত তাদের বোঝা আরও বাড়াবে। সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্য থাকলে কর ফাঁকি ঠেকানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। কর ফাঁকি রোধ করা গেলে এ ধরনের পদক্ষেপের প্রয়োজন হতো না এবং জনগণের কষ্টও লাঘব হতো।’

গত ১ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির এনবিআরের প্রস্তাব পাস করা হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত সাপেক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ না থাকায় অধ্যাদেশের মাধ্যমে শুল্ক-কর বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে।

জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সামগ্রিক রাজস্ব আদায় ২ দশমিক ৬২ শতাংশ কমে যাওয়ায় দেশীয় ও বিদেশি উৎস থেকে যখন সরকারের ঋণ নেওয়ার চাপ বাড়ছে, ঠিক সেই প্রেক্ষাপটেই পরোক্ষ কর বাড়ানোর পথে গেল এনবিআর। অবশ্য ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অনুমোদন করা ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্তের অংশ হিসেবেও এই ভ্যাট বাড়ানোর সুপারিশ ছিল।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত