মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

চট্টগ্রামে সিটির জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪ মাসের ক্র্যাশ কর্মসূচি

আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২০ পিএম

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে চার মাসের ক্র্যাশ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা। এই সময়ের মধ্যে খালগুলো থেকে ময়লা আবর্জনা অপসারণ, খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ অব্যাহত রাখা, ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, খাল সংস্কার ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ শেষ করা এবং পাহাড় কাটা বন্ধ রাখা। যদি এই সময়ের মধ্যে কোনো সংস্থা তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে তাহলে তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

রবিবার (১৯ জানুয়ারি) বিভিন্ন সংস্থার সাথে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং দুর্যোগ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

এ বিষয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, এবারের উদ্যোগের সঙ্গে অন্যান্যবারের পার্থক্য হলো এবার শাস্তি বা জবাবদিহিতা বিষয়টি থাকবে। অন্যান্য সময়ে জবাবদিহিতা থাকতো না। একইসঙ্গে এবার জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টি খুব উচ্চ পর্যায় থেকে মনিটরিং করা হবে। 

মনিটরিংয়ের বিষয়টি উত্থাপন করে ফাওজুল কবির খান বলেন, এই যে আমরা তিন উপদেষ্টা এসে খাল পরিদর্শন করে মিটিং করে যাচ্ছি। পরবর্তীতে গণপূর্ত উপদেষ্টা এসে খাল পরিষ্কার কার্যক্রম দেখবেন। আবার পুরো কাজগুলো সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা দেখতে ঢাকা থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা আসবেন। অর্থাৎ আমরা আগামী চার মাসের জন্য ক্র্যাশ কর্মসূচি নিয়েছি জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে। 

খালের ময়লা আবর্জনা অপসারণে আমরা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেবো এবং তারাই কাজগুলো করবে বলে জানান উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। 

অপরদিকে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিয়ে দুটো সমস্যার কথা উল্লেখ করে ফাওজুল কবির খানন বলেন, জলাবদ্ধতা সমস্যার দুটো বিষয় আছে। একটি হলো খাল পুনরুদ্ধার করা, অপরটি হল আর্থিক সংস্থান। এখন জলাবদ্ধতা খাতে সরকারের পক্ষ থেকে টাকা খরচ হয়েছে, কিন্তু জনগণ সুফল পায়নি। তাই এখন নতুন করে অর্থের সংস্থান করতে গেলে আগের টাকা খরচের প্রশ্ন উঠবে। তারপরও এবিষয়ে নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলা হবে। 

জলাবদ্ধতায় উঠে এসেছে পাহাড় কাটা প্রসঙ্গ। চট্টগ্রামের নালা, খাল ও কর্ণফুলী নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার পেছনে এই পাহাড় কাটা মাটি অন্যতম কারণ উল্লেখ করে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে জলাবদ্ধতা সমস্যাটি থাকবেই। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে আমরা শক্ত অবস্থান নেব। পাহাড় কাটা বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসন, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় কাজ করবে। যেখানে পাহাড় কাটা হয় সেখানে বিদ্যুৎ ও ওয়াসার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এটা দ্রুত করতে হবে। সব কাজ মনিটরিং হবে। এবার কেউ ব্যর্থ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব নিতে হবে। কেউ যদি নালায় বা খালে ময়লা নিক্ষেপ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, আমরা যেহেতু সমস্যা চিহ্নিত করতে পেরেছি তাই সমাধানও করতে পারবো। এক্ষেত্রে প্রযুক্তির পাশাপাশি আইনের বিষয়গুলোও আমরা দেখছি। একইসাথে চট্টগ্রামের যারা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আছেন পরিবেশ ইস্যুতে নগরবাসীকে সহায়তা করে বিভিন্ন মতামত মিডিয়ায় প্রকাশ করতে পারেন। 

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নাগিন পাহাড়টা কে কাটে। খবর নিয়ে দেখেন। সিডিএ’র কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি পরিবেশের দিকে আঙুল দেয়ার আগে নিজের দিকে দেন। আপনি কি করেন। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে আপনাদের ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে। 

এর আগে সেনাবাহিনী, সিডিএ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা নিজেদের বিভাগের কাজ উপস্থাপন করেন। 

উল্লেখ্য, জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান সমস্যা। বর্ষা মৌসুম এলেই চট্টগ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতা দুর্ভোগের মুখোমুখি হয়। সভায় চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন, সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংস্থার প্রধান এবং বুদ্ধিজীবী, প্রকৌশলী ও নগরবিদরা উপস্থিত ছিলেন।

 

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত