চট্টগ্রামের সড়ক আলোকায়নে অর্থ দিচ্ছে ভারত। নগরীর ৪৬০ কিলোমিটারের সড়ক আলোকায়নের জন্য ২৬০ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকার প্রকল্পের অর্থায়ন করছে ভারত সরকার। শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর পাঁচ তারকা হোটেল র্যাডিসন ব্লু বে ভিউতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সাথে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তিতে চসিকের পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এবং ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাপর্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে মহাব্যবস্থাপক (স্মার্ট সিটিজ) নিরাজ কুমার চুক্তি স্বাক্ষর করেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ীত হলে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রাফিক এবং পথচারীদের জন্য কার্যকর ও টেকসই সড়ক বাতির আলোক সুবিধা নিশ্চিত হবে। রাতে শহরের সৌন্দর্য, ব্যবসায়িক সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য মেয়রের প্রতি আহ্বান জানান। অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সততার বিষয়টি নিশ্চিত করার আহবান জানিয়ে মন্ত্রী এম তাজুল ইসলাম বলেন, আমি কুমিল্লার মানুষ হয়েও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে সর্বোচ্চ অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করেছি। তাই অর্থ খরচে যাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৬০ কিলোমিটার সড়কের আলোকায়ন হতে যাচ্ছে যা পরিবেশ বান্ধব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, টেকসই ও কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এটি বাস্তবায়নের পর চট্টগ্রামের কোন অলি-গলি আলোকায়নের বাইরে থাকবে না।
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই-কমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে ছিল ভারত। বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারতের ভূমিকার টোকেন অফ ফ্রেন্ডশিপ হিসেবে কাজ করবে এ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধবভাবে চট্টগ্রামকে আলোাকিত করা সম্ভব হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান প্রকল্পের সফলতা কামনা করেন। অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, ডিআইজি নূরে আলম মিনা, পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম, সিডিএ'র চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার রাজীব রঞ্জন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া চসিকের কাউন্সিলর এবং চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ‘মডারনাইজেশন অব সিটি স্ট্রিট লাইট সিস্টেমএট ডিফারেন্ট এরিয়া আন্ডার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন’ শীর্ষক এই প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ৯ জুলাই একনেক সভায় অনুমোদন পায়। চট্টগ্রামের ৪১ ওয়ার্ডের প্রতিটিতে বিভিন্ন সড়কজুড়ে ১০ কিলোমিটারে এলইডি লাইট লাগানোর এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারত সরকার ঋণ দিচ্ছে ২১৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা এবং সরকারি তহবিল (জিওবি) থেকে দেওয়া হচ্ছে ৪৬ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়ীত হলে সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিল কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। এছাড়াও বাতি গুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫০০ টি সুইচের বদলে চারটি কেন্দ্রীয় সার্ভার স্টেশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তাতেও প্রায় ১২ লাখ টাকারও বেশি সাশ্রয় হবে।