বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

খেজুরের দাম পাইকারিতে কমলেও খুচরায় কমেনি

আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৩৩ পিএম

শুল্কহার কমানোর সুযোগে দেশে খেজুরের রেকর্ড আমদানির ফলে পাইকারি বাজারে কমেছে খেজুরের দাম। তবে পাইকারি বাজারে কম দামে খেজুর বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে এখনো বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে খেজুর। বাজার ঘুড়ে দেখা গেছে কমদামি খেজুর গুলোর দাম দুই একটা কমলেও দামি খেজুরগুলো বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই।

সরেজমিন পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার, সদরঘাট,ওয়াজঘাট,বাবুবাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুড়ে দেখা যায়, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি জাহিদি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৪০ টাকা, বড়ই খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৪৭০ থেকে ৫২০ টাকা, দাব্বাস খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৪৭০ -৫২০ টাকা এবং আজোয়া খেজুর ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায়।

বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে ২০-৩০ টাকা কম বেশি করে বিক্রি করে আসছেন তারা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা আরেও বলেন, দুয়েকটি খেজুরের দাম কিছুটা কমলেও বেশিরভাগ খেজুর আগের দামেই কিনতে হয়েছে তাদের।

অন্যদিকে খেজুরের পাইকারি বাজারে ঘুরে দেখা যায়, জাহিদি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১৬০ -১৭০ টাকায়, বড়ই খেজুর ৩৫০-৩৬০ টাকায়, দাব্বাস ৩৫০-৩৬০ ও আজোয়া ৯০০-৯৫০ টাকা প্রতি কেজি পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে। যা আগের বছরের থেকে প্রতি কেজিতে অন্তত ৭০ টাকার বেশি কমেছে। সেই হিসেবে খুচরো খেজুরের দাম তেমন কমেনি বললেই চলে।

চট্রগ্রাম বন্দরে খবর নিয়ে জানা যায়, ২০২৪ সালে চট্রগ্রাম বন্দর দিয়ে খেজুর আমদানি হয়েছে ৭৫ হাজার ২২০ মেট্রিকটন, ২০২৩ সালে আমদানি হয়েছিলে ৬৭ হাজার ৩২৩ মেট্রিক টন। রোজার শুরুতে প্রতিবছর খেজুরের বাজার নিয়ে অস্থিরতা থাকায় এ বছর তা নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য আগে ভাগেই শুল্ক হার কমিয়েছে সরকার। দেশে খেজুরের চাহিদা রয়েছে ৮০-৯০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে শুধু রমজান মাসেই চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে বিদ্যমান কাস্টমস ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ১০ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়। 

সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে খেজুরের কাস্টমস ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। অগ্রিম আয়কর ১০ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়। এতে করে মোট করহার ২৪.৯০ শতাংশ কমানো হয়েছে।

পাইকারি খেজুর ব্যবসায়ীরা জানান, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর কম দামেই খেজুর আমদানি করতে পারছেন বলে কম দামে বিক্রি করতে পারছেন। সব ধরনের খেজুরই দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয় বলে প্রায়ই দাম ওঠা নামা করে। তবে রমজান মাসকে কেন্দ্র করে এবার তাদের খেজুরের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে, তাই এবার রমজানে খেজুরের দাম বাড়ার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন পাইকাররা।

অন্যদিকে শহরের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছু খেজুরের দাম আগের তুলনায় দাম কিছুটা কমলেও অন্যান্য খেজুরের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে (যেমন আজোয়া, মারিয়াম, ম্যাগজুল)। 

আগে কেবল মাত্র রমজান মাসে খেজুর বিক্রি হলেও এখন প্রায় ১২ মাসই খেজুরের চাহিদা রয়েছে বলেও জানা যায়। তবে রমজানে মাসের ক্রেতার চাপ এখন শুরু হয়নি, শবে বরাতে পর থেকে ক্রেতার আশা করছেন তারা। সেই সাথে রমজান মাসে খেজুর দাম নিয়ে পাইকারদের বিপরীত আশঙ্কা করছেন খুচরা ব্যবসায়িরা, এখন কিছুটা কম থাকলেও রমজানে খেজুরের দাম আরো বাড়বে বলে ধারণা করছেন তারা।

সদরঘাটে খেজুর কিনতে আসা রানা নামে এক ক্রেতা জানান, শুধু খবরেই দেখি খেজুরের দাম কমেছে, কিনতে আসলে দেখি উল্টোটা। আগে যে দামে কিনেছি এখনো সেই দামেই কিনছি। এভাবে হলে রোজায় খেজুরের দাম আরো বাড়বে। এ দেশে কেয়ামত ছাড়া কোনো জিনিসের দাম কমবে বলে মনে হয় না।

বাদামতলীর ব্যবসায়ী মো. নাজমুল জানান, আমি খোলা খেজুর ১৩০ টাকা পাইকারি বিক্রি করি, সেই একই খেজুর স্টিমার ঘাটে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়, একটু আগায়া নয়া বাজারে দেখি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মূলত বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় দামের এমন তারতম্য। খেজুরের দাম আমরা কমে বিক্রি করলেও তার সুফল ভোক্তারা পাচ্ছে না।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর ফল আমদানি রপ্তানি কারক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, খেজুরের দাম পাইকারি বাজারে কমলেও খুচরা বাজারে কমেনি। এর কারণ ভোক্তারা আসলে জানে না কোন খেজুরের দাম কতো। খেজুর যদি প্যাকেটিং আকারে এমআরপি রেট দিয়ে বিক্রি করা হতো তাহলে এ সমস্যা টা হতো না। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে হবে। এ ছাড়া টিসিবিতে সরকারের আরো বেশি পরিমাণ খেজুর বিক্রির ব্যবস্থা করলে দাম কমার সুফলটা ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাবে। সেই সাথে খুচরা ব্যবসায়ীদের নৈতিকতাও ঠিক করতে হবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত