মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

গাইবান্ধায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকে হত্যার ঘটনায় মামলা

আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৪ পিএম

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিহত মামুন মন্ডলের বাবা মান্নান মন্ডল বাদী হয়ে সাদুল্লাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ২৭ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ থেকে ২২জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। তবে শুক্রবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বলে জানান পুলিশ।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজ উদ্দিন খন্দকার। তিনি জানান, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পুলিশ দূর্বৃত্তদের চিহ্নিত ও আটক করতে অভিযান শুরু করেছে।  

এদিকে গাইবান্ধা শহর থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে খামারপাড়া গ্রাম। গ্রামটি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের অন্তর্গত। আজ দুপুরে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল গ্রামজুড়ে শোকের মাতম। আল মামুনের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনদের ভিড়। মা রনজিনা বেগম ও মামুনের স্ত্রী দিনা খাতুনসহ সবাই কান্নাকাটি করছেন।

এ সময় মামুনের মা রনজিনা বেগম বিলাপ  করে বলেন, হামার ব্যাটা ম্যালা দিন থাকি কোনো দল করে না (আমার ছেলে অনেকদিন ধরে কোনো দল করে না)। সে এখন খেলাধুলা করে। তাকে ওরা পিটিয়ে মেরে ফেললো।  আমার বুকের মানিককে রাস্তায় মেরে ফেলে রাখলো। তোমরা আমার মানিককে এনে দাও। আমরা হত্যার বিচার চাই' ফাঁসি চাই। 

নিহত মামুনের মা আহাজারি করার সময় পাশে বসা মামুনের স্ত্রী দিনা খাতুন বলেন, 'গতকাল আমি রোজা রেখেছিলাম। মামুন বাড়িতে ছিল। বিকেল তিনটার পর মামুনের মোবাইলে একটি ফোন আসে। ফোন পেয়ে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে ধাপেরহাট বন্দরে যান। যাবার সময় বলে যায় তোমার জন্য ইফতার পাঠিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু পাঁচটার পর খবর পাই ওকে মেরে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে। 

তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে ওকে ডেকে নিয়ে রামদা, হকিস্টিক ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পেটানো হয়। এরপর তার পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। 

পাঁচ বছরের মেয়ে আয়াত খাতুনের মাথায় হাত দিয়ে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, হত্যাকারীদের এমন শাস্তি দেওয়া হোক, আমার মত আর কেউ যেন বিধবা না হয়। কোনো সন্তান যেন এতিম না হয়। এ সময় বিছানায় আহাজারি করছিল নিহত আল মামুনের বড় ভাই রকিব মন্ডল।

রকিব বলেন, ছোট ভাইকে হত্যার পর দুর্বৃত্তরা খান্ত থাকেনি। ১৫ থেকে ২০ জন দুর্বৃত্ত আমাদের বাসায় হামলা চালায়। তারা মামলা না করার জন্য ভয়ভীতি দেখিয়ে যায়। মামলা করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

নিহত আল মামুন মন্ডলের বাবা মান্নান মন্ডল জানান, গত কয়েক বছর থেকে দলের সাথে আল মামুন সক্রিয় ছিল না। দীর্ঘদিন থেকে মামুন ক্রিকেট খেলা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। সে বর্তমানে বিপিএলের সিলেটের নেট ফাস্ট বোলার ছিলে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আল মামুন মণ্ডল ধাপেরহাট বন্দরের জামদানি এলাকায় অবস্থান করছিলেন। এ সময় হঠাৎ ৭-৮ জন যুবক তার ওপর হামলা করে। কিছু বোঝার আগেই তাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে দুর্বৃত্তরা। একপর্যায়ে মামুন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। চিৎকার করতে থাকে। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ঘটনাস্থল থেকে দুবৃর্ত্তরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা আল মামুনকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। কিছুদূর যাবার পর তিনি মারা যান।

পরে লাশ ফিরিয়ে এনে ধাপেরহাট বন্দরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে স্থানীয় লোকজন ও নিহতের স্বজনরা। বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত অবরোধ চলে।

পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে বৃহস্পতিবার রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য লাশ গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। শুক্রবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত মামুনের লাশ তার বাড়িতে নিয়ে যায় স্বজনরা।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত