চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে টিকে থাকার ম্যাচ। হেরে গেলেই নিশ্চিত হয়ে যাবে বিদায়। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকার পরও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের ইনিংসে ৭ উইকেটে ৩২৫ রান তোলে আফগানিস্তান। এমনটা সম্ভব হয় ইবরাহিম জাদরানের কীর্তিময় ১৭৭ রানের ইনিংসের সঙ্গে মিডল অর্ডারে আরও তিন ব্যাটসম্যানের দায়িত্বশীল ও কার্যকর ব্যাটিংয়ের সুবাদে। এ রানটাই তাড়া করতে গিয়ে হোঁচট খায় ইংল্যান্ড। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও আফগানদের কাছে ৮ রানে হেরে গিয়ে আসর থেকে বিদায় নিতে হলো বাটলারদের।
এই মাঠে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৩৫১ করেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হয়েছিল ইংল্যান্ডকে। সেই স্মৃতি পুঁজি করে ৩২৫ রানের জবাবে নেমে ৩০ রানে ২ উইকেট হারায় ইংলিশরা। এরপর জো রুটের সঙ্গে ৬৮ রানের জুটি গড়ে ৪৫ বলে ৩৮ রানে থামেন বেন ডাকেট। হ্যারি ব্রুকের ব্যাট থেকে আসে ২১ বলে ২৫ রানের ইনিংস। অধিনায়ক জস বাটলারের সঙ্গে রুটে ৮৩ রানের জুটি আশা জাগাচ্ছিল। বাটলার ৩৮ ও লিয়াম লিভিংস্টোন ১০ রানে ফিরলে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। এর মাঝে ৯৮ বলে ক্যারিয়ারের ১৭তম সেঞ্চুরি তুলে নেন জো রুট। ২০১৯ বিশ্বকাপ শেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন। ৬ বছর ও ৩৭ ইনিংস শেষে ওয়ানডেতে তিন অঙ্ক ছোঁয়া রুট থামেন ১১১ বলে ১১ চার, ১ ছয়ে ১২০ রানে। তখনো জয় থেকে ৩৯ রান দূরে ইংল্যান্ড। জেমি ওভারটনের ২৮ বলে ৩২ ও জোফরা আর্চারের ৮ বলে ১৪ রানের ইনিংস শেষতক আক্ষেপ হয়েই থেকে যায়। ১ বল বাকি থাকতে ৩১৭ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। আজমতউল্লাহ ওমরজাই নেন ৫ উইকেট।
অথচ ৩৭ রানে ৩ উইকেট খোঁয়ানোর পরও যুদ্ধংবাজ জাতিটি হাল ছাড়েনি। আফগানদের হয়ে ঘুরে দাঁড়ান ওপেনার ইবরাহিম জাদরান। শুরু থেকে শেষ ওভারের প্রথম বল পর্যন্ত ক্রিজের একটি প্রান্ত অক্ষুণ্ন রাখেন একক প্রচেষ্টায়। তুলে নেন সেঞ্চুরি, গড়েন দুর্দান্ত কীর্তি। ইনজুরিতে সাত মাস মাঠের বাইরে ছিলেন জাদরান। প্রায় বছরখানেক পর ওয়ানডে খেলতে নেমে ১০৬ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন জাদরান। ইনিংসে ১২টি চার ও ৬টি ছক্কা হাঁকান তিনি। ষষ্ঠ ওয়ানডে সেঞ্চুরিটিকে ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস হিসেবে রূপ দেন। শুধু তাই নয়, লাহোরের এই গাদ্দাফি স্টেডিয়ামেই গত ২২ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৪৩ বলে ১৬৫ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলেছিলেন বেন ডাকেট। তার ক্যারিয়ারসেরা এই ইনিংসটিই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চের কীর্তি ছিল। ৪ দিন যেতেই ডাকেটের চোখের সামনে এ কীর্তি নিজের করে নেন ইবরাহিম। ১৪০তম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ডাকেটকে ছাপিয়ে যান তিনি। শেষ ওভারের প্রথম বলে ১৪৬ বলে ১৭৭ রান করে আউট হন ইবরাহিম।
৩৭ রানে ৩ উইকেট খোঁয়ানোর পর ক্রিজে এসে ইবরাহিমের সঙ্গে ১০৩ রানের জুটি গড়েন আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদি। ধ্বংসাবস্থা থেকে দলীয় ইনিংস মেরামতের প্রাথমিক দায়িত্ব সামাল দেয় এ জুটি। শাহিদি করেন ৬৭ বলে ৪০ রান। এর পর ৩১ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। এই জুটিতে ইবরাহিম-আজমত মিলে নেন ৬৩ বলে ৭২ রান। দলের ২১২ রানে ফেরেন আজমত। মাঠে আসেন আফগান দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মোহাম্মদ নবি। উপহার দেন ২ চার, ৩ ছক্কায় ২৪ বলে ৪০ রানের মারকুটে ইনিংস। ষষ্ঠ উইকেটে ইবরাহিম-নবি মিলে এনে দেন ৫৫ বলে ১১১ রানের ক্যামিও জুটি। তাতে অনায়াসেই তিনশ পেরিয়ে যায় আফগানদের সংগ্রহ। আফগান ইনিংসে শুরুতে ধস নামিয়েছিলেন জোফরা আর্চার। ইনিংসে শুরুর ওই ৩ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। আর ইনিংসের শেষ ওভার করতে এসে ইবরাহিম ও নবির উইকেট পান লিয়াম লিভিংস্টোন।