মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

সংবাদ প্রকাশের পর বনের গাছ কাটার অপরাধে মামলা ও তদন্ত কমিটি গঠন

  • প্রমাণ লোপাটে মরিয়া বনখেকো চক্র
  • তবুও গাছ কাটার সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৩ পিএম

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চরযমুনা সংলগ্ন মাঝেরচরের সংরক্ষিত বনের গাছ কেটে বনভূমি দখল করে মাছের ঘেরের আয়তন বাড়ানো নিয়ে দেশ রূপান্তরে শেষ পাতায় সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রমাণ লোপাট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বনখেকো চক্রটি।

তবুও এ ঘটনায় গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি রবিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন এসে অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন বলে জানান। ইতিমধ্যে গাছ কাটার অপরাধে অভিযুক্ত ঘের মালিক জুয়েল সিকদারকে আসামি করে আদালতে মামলা করেছে বন বিভাগ।

এর আগে গত ৭ মার্চ দৈনিক দেশ রূপান্তরে শেষ পাতায় ‘সংরক্ষিত বনে বনখেকো চক্রের থাবা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি নজরে আসে বন বিভাগের। তাৎক্ষণিক তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পটুয়াখালী সহকারী বন সংরক্ষক তারিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে এ তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বন বিভাগের রাঙ্গাবালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আমিতাভ বসু ও চরমোন্তাজ রেঞ্জ কর্মকর্তা কে এম মনিরুজ্জামান।

গঠিত এই তদন্ত কমিটি রোববার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন উপকূলীয় বন বিভাগের পটুয়াখালীর সহকারী বন সংরক্ষক মো. তারিকুল ইসলাম।

পরিদর্শন শেষে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়ে আমি ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। আমরা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে এবিষয়ের প্রতিবেদন দাখিল করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিদর্শনে দেখলাম— তারা (বনখেকো চক্র) কিছু অনিয়ম করেছে। কিছু গাছ কাটার আলামত পেয়েছি। কয়েকটা গাছ কেটেছে। কিছু জায়গা সম্প্রসারণ করে ঘের বড় করেছে। ইতোমধ্যেই আদালতে এ বিষয়ে মামলা করা হয়েছে। বন রক্ষায় আমাদের টহল অব্যাহত আছে। যাতে নতুন করে আর জায়গা সম্প্রসারণ করতে না পারে। এছাড়াও আমরা সকলে সজাগ দৃষ্টি রাখছি। যাতে এসব কাজ আর কেউ কোনদিন করতে না পারে। আমরা ইতোমধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে (জুয়েল সিকদার) আগামী দুইদিনের মধ্যে বনের ভেতরের বাঁধ অপসারণের নির্দেশ দিয়েছি। তা না হলে ভেকু মেশিন দিয়ে বাঁধ অপসারণ পূর্বের অবস্থান ফিরে আনা হবে।’

পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরিত ওই তদন্ত কমিটির চিঠিতে বলা হয়, প্রকাশিত সংবাদে সংরক্ষিত বনভূমির গাছ কেটে মাছের ঘেরের আয়তন বড় করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। কিন্তু সব দেখেও বন রক্ষাকারী বন বিভাগ উদাসীন। এছাড়া বন বিভাগের কানকুনিপাড়া ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার এবিষয়ে সম্পৃক্ততার কথা প্রতিবেদনে তুলা ধরা হয়।

বন বিভাগ জানায়, এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করে রোববার গলাচিপা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করেছে বন বিভাগ। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ঘটনা উদ্ঘাটন হয়েছে মর্মে রাঙ্গাবালী রেঞ্জের কানকুনিপাড়া ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র মজুমদার বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

এতে একমাত্র আসামি করা হয় অভিযুক্ত ঘের মালিক মো. জুয়েল সিকদারকে। জুয়েল চরযমুনা গ্রামের সালেক সিকদারের ছেলে। জুয়েলের বিরুদ্ধে করা মামলার অপরাধের ধরণে উল্লেখ করা হয়, সরকারি সংরক্ষিত ১৯৭৭-৭৮ সনের কেওড়া বাগানে অবৈধভাবে প্রবেশ করে কেওড়া গাছ কেটে বাগান পরিষ্কার করে ঘের সম্প্রসারণের অপচেষ্টা করেন।

রাঙ্গাবালী রেঞ্জ কর্মকর্তা অমিতাভ বসু বলেন, ‘চরযমুনা সংলগ্ন মাঝেরচরের সংরক্ষিত বনের পাশের পুরাতন ঘের সংস্কারে করতে গিয়ে বন অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। সেই বন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বন মোকদ্দমা করা হয়েছে। পরে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর আমাদের টহল কার্যক্রম জোরদার করেছি। কেউ বন অপরাধ সংঘটিত করলে তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে, প্রকাশিত সংবাদের পর থেকেই জুয়েল সিকদার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ঘটনার প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ এলাকার মানুষের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক লোক জানান, জুয়েল ও তার লোকজন সংবাদটিকে মিথ্যা প্রমাণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। গাছ কাটার আলামত হিসেবে থাকা অবশিষ্ট গোঁড়া লুকাতে ঘেরের মধ্যে পানি প্রবেশ করিয়েছেন। কাটা গাছের টুকরো গায়েব করেছেন। যাতে তদন্ত কমিটি এসে গাছ কাটার কোন ধরণের আলামত না পায়। কিন্তু জুয়েল এতে ব্যর্থ হয়েছেন। তদন্ত কমিটির সামনে এখন সবকিছু পরিষ্কার। চরযমুনা গ্রামের বাসিন্দা মামুন মাঝি জানান, গাছ কাটা হয়েছে। বনের মধ্যে ঘেরের বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এসবকিছু দেখে গেছে তদন্ত কমিটি।

উপকূলীয় বন বিভাগের পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সংবাদটি ভাইরাল হওয়ার পর আমরা অধিকতর তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তদন্ত কমিটির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া এ ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে। মামলা বিচারাধীন।’   

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত