যতই বলা হোক না কেন, দুবাই ভারতের ঘরের মাঠ নয় তারপরও একই ভেন্যুতে টানা ৫টা ম্যাচ খেলে ভারত যে সুবিধাটাই আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পেয়েছে সেটা যে অন্যায্য তা নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই। ভ্রমণক্লান্তির ধকল নেই, বিভিন্ন কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়ার বিষয় নেই...সব মিলিয়ে ফাইনালের মঞ্চে ভারত যে এগিয়ে থাকবে সেটা প্রত্যাশিতই। এই সুবিধার জন্যই দল ঘোষণার শেষ দিনে যশস্বী জয়সওয়ালকে বাদ দিয়ে বরুণ চক্রবর্তীকে ওয়ানডে দলে নিয়েছিল ভারত। ফাইনালে ৪ স্পিনারের ফাঁদে ফেলে কিউইদের ২৫১ রানেই আটকে দিয়েছে রোহিত শর্মার ভারত।
৫০ ওভারের ম্যাচে পেসাররা করেছেন মাত্র ১২ ওভার। মোহাম্মদ শামি ৯ ওভার আর হার্দিক পান্ডিয়া ৩। হার্দিককে শুরুতে ২ ওভার করিয়ে সেই যে থামিয়ে দিলেন রোহিত, ফেরালেন ৪৯তম ওভারে। ম্যাচের বাকি ৩৮ ওভার স্পিনারদের দিয়েই করিয়েছেন ভারত অধিনায়ক। আরও নির্দিষ্ট করে বললে বামহাতি স্পিনার। রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল আর কুলদীপ যাদব; এই তিনজন মিলে করেছেন ২৮ ওভার, ডানহাতি স্পিনার বরুণ করেছেন বাকি ১০ ওভার। এই স্পিনের চতুর্মুখী ফাঁসে হাঁসফাঁস করেছেন কিউই ব্যাটসম্যানরা, স্পিনারদের বিপক্ষেই ১২৫টা বল ডট খেলেছেন তারা। গোটা ইনিংসে ডট বলের সংখ্যা যেখানে ১৫৪। অর্থাৎ মোহাম্মদ শামি দিয়েছেন ২১টা ডট বল আর হার্দিক পান্ডিয়া ৮টি।
এভাবে রান আটকে রাখার ফাঁসে ছটফট করেই উইকেট বিলিয়ে এসেছে কিউই ব্যাটসম্যানরা। পাওয়ার প্লে’তে দারুণ শুরুর পর স্পিনাররা আক্রমণে আসতেই যে গুটিয়ে যাওয়া, সেখান থেকে আর শেকল ভেঙে বের হতে পারেননি তারা। কেন উইলিয়ামসন আর রাচিনকে শুরুতেই আউট করে কুলদীপ যে সুবিধাটা এনে দেন অধিনায়ককে, তার পূর্ণ ফায়দা নিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা আর অক্ষর প্যাটেল। বিশেষ করে ড্যারেল মিচেলের মন্থর ব্যাটিং, গ্লেন ফিলিপসের চুপসে যাওয়া...মাঝের ওভারগুলোতে বাউন্ডারির খরা; সবই ভুগিয়েছে কিউইদের। ৩১.৪ ওভারে জাদেজার বলে ফিলিপসের মারা চারের পরের চারটা আসে ৪২.৪ ওভারে, অর্থাৎ প্রায় ১০ ওভার ধরে কোনো বাউন্ডারিই মারতে পারেননি কিউই ব্যাটাররা।
এমন নয় যে উইকেটে টার্ন ছিল অনেক বেশি। টিভি সম্প্রচারে দেখিয়েছে, দুবাইয়ের উইকেটে গড় টার্ন ছিল মাত্র ২ ডিগ্রি। এর চেয়ে বেশি টার্ন ছিল একই ভেন্যুতে আগের সব ম্যাচেই। গ্রুপ ম্যাচে বরুণকে ৫ উইকেট দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড, ফাইনালে বরুণকে দেখে খেলতে গিয়ে কুলদীপেই ধরাশায়ী। ব্রেক থ্রুটা অবশ্য বরুণই দিয়েছিলেন, তবে দুটো বড় শিকার ধরেছেন কুলদীপই। রাচিন রবীন্দ্র আর কেন উইলিয়ামসন, নিজের প্রথম দুই ওভারে দুই বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানকেই ড্রেসিংরুমে ফেরত পাঠিয়েছেন কুলদীপ। উইকেট না পেলেও ৮ ওভারে মাত্র ২৯ রান দিয়ে কিপটে বোলিং অক্ষর প্যাটেলের। ১০ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন জাদেজা। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, কতটা কঠিনভাবেই স্পিনাররা চেপে ধরেছিলেন কিউই ব্যাটসম্যানদের।
স্পিনের ফাঁসে রান তুলতে না পেরেই আউট হয়েছেন বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান। ইনিংসে অনেকটা সময় কাটালেও থিতু হওয়ার পরিবর্তে বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানই বল নষ্ট করে বিদায় নিয়েছেন। তাই তো দলীয় রানটা থেকে গেছে ভারতের নাগালের মধ্যেই।