সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

আর্তেতার ২০০তম ম্যাচে আর্সেনালের শিরোপা-স্বপ্নের শেষযাত্রা? 

আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ পিএম

ম্যাচটি ছিল আর্সেনালের হয়ে মিকেল আর্তেতার ২০০তম প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচ। কিন্তু উদযাপনের বদলে এটি যেন হয়ে উঠল আরেকটি ব্যর্থ শিরোপা অভিযানের সমাপ্তি। রবিবার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে শিরোপার দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে গানাররা।

৬৮.২% বলের দখল রেখেও আর্সেনাল ম্যাচে তেমন কোনো ছাপ রাখতে পারেনি। ডিক্লান রাইসের ৭৪তম মিনিটের দুর্দান্ত শট সমতা আনলেও, প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ব্রুনো ফার্নান্দেসের ফ্রি-কিকেই পিছিয়ে পড়ে আর্তেতার দল। 

আর্সেনাল বেশ কিছুদিন ধরেই ছন্দহীন। মূলত ট্রান্সফার মার্কেটে একজন পরীক্ষিত স্ট্রাইকার দলে না ভেড়ানোই তাদের অন্যতম বড় ভুল হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও কাই হাভার্টজ চোটে থাকায় এই সংকট আরও প্রকট হয়েছে। 

ম্যাচের শেষ মুহূর্তে যখন গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল আর্সেনাল, তখনও তাদের আক্রমণভাগে ছিল হতাশাজনক নীরবতা। অবাক করার মতো সিদ্ধান্ত নেন কোচ আর্তেতা—প্রয়োজন ছিল গোলস্কোরারের, কিন্তু তিনি কিয়েরান টিয়ার্নিকে নামান, যিনি মৌসুম শেষেই ক্লাব ছেড়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, স্ট্রাইকার না এনে রাহিম স্টার্লিংকে দলে ভেড়ানো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চেলসি থেকে ধারে আনা স্টার্লিং একেবারেই কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি, যা এই ম্যাচেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। 

২০০তম ম্যাচের মাইলফলক ছোঁয়ার পরও ট্রফি জেতার চাপে থাকছেন মিকেল আর্তেতা। ২০২০ সালে এফএ কাপ জেতার পর এখন পর্যন্ত কোনো বড় শিরোপা এনে দিতে পারেননি তিনি। যদিও তার অধীনে আর্সেনালের পারফরম্যান্সের উন্নতি হয়েছে, তবে ক্লাবের উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সেটি এখনো সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। 

এদিকে, ক্লাব কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে বড় পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সাবেক স্পোর্টিং ডিরেক্টর আন্দ্রেয়া বার্তাকে দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করছে আর্সেনাল, যিনি এই গ্রীষ্মেই এডুকে পরিবর্তন করতে পারেন। 

এই ড্রয়ের ফলে শীর্ষে থাকা লিভারপুলের চেয়ে ১৫ পয়েন্ট পিছিয়ে পড়েছে আর্সেনাল, যা কার্যত তাদের শিরোপার আশা শেষ করে দিয়েছে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে আর্তেতাকে যখন প্রশ্ন করা হয়, শিরোপার দৌড় শেষ হয়ে গেল কি না—তিনি সরাসরি উত্তর এড়িয়ে যান, ‘আমি এখনই সে কথা বলতে চাই না। আমাদের প্রতিটি ম্যাচ জয়ের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু তা পারিনি। এখন এসব নিয়ে কথা বলার সময় নয়।’ 

গোলরক্ষক ডেভিড রায়ার ভুলেই ফার্নান্দেসের ফ্রি-কিক থেকে গোল হজম করে আর্সেনাল। তিনি নিজেকে ভুল জায়গায় দাঁড় করিয়েছিলেন, যার সুযোগ নিয়ে নিখুঁত শটে ইউনাইটেডকে এগিয়ে নেন পর্তুগিজ মিডফিল্ডার। তবে দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত কিছু সেভ করে কিছুটা ভুল শোধরান রায়া। শেষ মুহূর্তে ব্রুনো ফার্নান্দেসের আরেকটি শট ঠেকিয়ে দলকে হার এড়াতে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি।

 এই ম্যাচটিই যেন আর্সেনালের পুরো মৌসুমের প্রতিচ্ছবি। বল দখলে আধিপত্য, পরিকল্পিত পাসিং ফুটবল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে কার্যকর কিছু করতে না পারা। স্ট্রাইকার সংকট, ভুল ট্রান্সফার সিদ্ধান্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ব্যর্থতাই শেষ পর্যন্ত তাদের শিরোপার স্বপ্ন ধূলিসাৎ করেছে। 

আর্তেতার সামনে এখন চ্যালেঞ্জ একটাই—দলের উন্নতি কেবল পরিসংখ্যানেই সীমাবদ্ধ না রেখে, তা ট্রফির মাধ্যমে প্রমাণ করা। অন্যথায়, এই উন্নতির মূল্য থেকে যাবে প্রশ্নবিদ্ধ।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত