বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

বিচার সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচন দ্রুত রাজপথে নামব

আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৫, ০৬:৩৪ এএম

জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা রাজপথে এসেছি জনগণের কথা শোনার জন্য ও তাদের দাবি আদায়ের জন্য। আমরা বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচন আদায়ে সম্মিলিতভাবে খুব দ্রুতই রাজপথে নামব।’

গতকাল সোমবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইফতার ও দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এনসিপির আয়োজনে এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মব কালচারের রাজনীতি তৈরি করে বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা এসব ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করব। যে যার জায়গা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাহায্য করব। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেব না।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যে আকাক্সক্ষা তার জন্য আমরা কারও ওপর নির্ভর হতে চাই না। সে আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে আমরা নিজেরাই মাঠে নেমেছি। রাজনৈতিক দল গঠন করেছি। আমাদের এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি দাবি হচ্ছে বিচার এবং সংস্কার। ৫ আগস্ট পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের যে সরকার গঠিত হয়েছে এবং যারাই সামনে রাজনীতি করতে যাচ্ছেন তাদের সবার ন্যায্যতার ভিত্তি হচ্ছে এই আহত যোদ্ধা এবং শহীদ পরিবাররা। ফলে তাদের মনের আকাক্সক্ষাটা আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে। শত শত মামলা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা মামলা করেছেন। আওয়ামী লীগের খুনিদের আসামি করে মামলা করা হয়েছে। তাদের বিচার করা ছাড়াই যদি নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটা সরকার ক্ষমতায় চলে আসে তাহলে কী নিশ্চয়তা আছে যে, আওয়ামী লীগকে আবার পুনর্বাসিত করা হবে না এই বাংলাদেশে? আমরা মনে করি ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তাদের রায় দিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট রাজনীতির আর জায়গা হবে না।’

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে আমরা নাকি নির্বাচন পেছানোর রাজনীতি করছি। যারা এই অভিযোগ করছে তাদের আমরা পালটা বলতে চাই, আপনারা বিচার ও সংস্কার পেছানোর রাজনীতি করবেন না। বিচার ও সংস্কারের প্রতি ঐকমত্য পোষণ করুন। সরকারকে বলব, দ্রুত বিচার ও সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। কত দিনের মধ্যে কোন প্রক্রিয়ায় আমরা দৃশ্যমান বিচারের অগ্রগতি দেখতে পারব, দৃশ্যমান সংস্থার বাস্তবায়ন করতে পারব তার সুস্পষ্ট রোডম্যাপ অবিলম্বে ঘোষণা করতে হবে।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়ে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করেছিলাম। তিনিসহ অন্যান্য উপদেষ্টা এবং সেনাপ্রধান প্রত্যেকেই আমাদের কাছে অঙ্গীকার করেছিলেন, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং বিচারের দায়িত্ব আপনারা নিচ্ছেন। ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এবং সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে আওয়ামী লীগের ফায়সালা কী হবে? এই অঙ্গীকার থেকে তারা দূরে সরে যেতে পারবেন না। জনগণের সামনে তাদের দাঁড়াতে হবে। আমরা কড়ায় গ-ায় জবাবদিহি নেব যে, আমাদের বিচার ও সংস্কার কতটুকু আদায় হলো। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনের জন্য এতই তাড়াহুড়া করেন তাদের কিন্তু ভোট চাইতে গেলে জনগণের সামনে তার জবাবদিহি দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমরা সেটি ধরে রাখতে চাই। আমরা কেউ নির্বাচনের বিরুদ্ধে না। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব বলে আমরা নিজেরা একটা রাজনৈতিক দল গঠন করেছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সংবিধান অকার্যকর ও ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে আমরা একটি নতুন সংবিধান এই জাতিকে উপহার দিয়ে যাব ইনশাল্লাহ।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘আমার ভাইদের যারা নির্মমভাবে হত্যা করছে, গুলি করছে, আগুনে পুড়িয়ে মারছে এসব খুনির বিচার আমরা বাংলার মাটিতে দেখতে চাই। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাই, এসব খুনের হুকুমদাতা খুনি হাসিনাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার বিচার করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে শহীদ জাবীর ইব্রাহিমের বাবা নওশের আলী বলেন, ‘এনসিপির কাছে শহীদ ও আহত পরিবারের জোর দাবিÑ আগে বিচার করতে হবে। আমরা বিচার না হওয়ার আগে কোনো নির্বাচন চাই না। আগে বিচার হবে তারপর সংস্কার হবে। এই বাংলাদেশে সংস্কার না হলে আরেকটা চব্বিশ অপেক্ষা করছে। আমরা কোনো চব্বিশ, একাত্তর, নব্বই ও রক্তক্ষরণ চাই না। চাই সংস্কার ও বিচার।’

আশুলিয়ার শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা বলেন, ‘আমার সন্তানকে কেন হত্যা করা হলো এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।’

ইফতারে আরও অংশ নেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত