দুবাইতে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর স্টেডিয়ামে চলছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের আনন্দ উৎসব। সম্প্রচার সংস্থার ক্যামেরা খুঁজে ফিরছে ভারতীয় দলের এক একজন ক্রিকেটারকে, জানতে চাচ্ছে তাদের প্রতিক্রিয়া। একটা সময় ফ্রেমে এলেন বিরাট কোহলি, উৎফুল্ল কণ্ঠেই জানালেনÑ ‘ভারত আগামী ৮ বছরের জন্য পুরো বিশ্বের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত’। কতখানি সত্যি কোহলির এই দাবি, আর সময়টা ৮ বছরই কেন?
২০২৫-এর পরের ৮ বছর, অর্থাৎ ২০৩৩ পর্যন্ত সময়ে আছে বেশ কিছু আইসিসি ইভেন্ট যেসবে ভারত স্বাগতিক। ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে ভারত ও শ্রীলঙ্কায়। ২০২৯ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও হবে ভারতে আর ২০৩১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ হবে ভারত ও বাংলাদেশে। ৩টা আইসিসি ট্রফিতে স্বাগতিক হিসেবে নিশ্চয়ই শিরোপা জিততে চাইবে ভারত, এর বাইরে আছে ২০২৮ ও ২০৩০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০২৮ এর স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড, আর ২০৩০ এর স্বাগতিক ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড। এর বাইরে ২০২৫ ও ২০২৭ সালে এশিয়া কাপ হওয়ার সূচি এখন পর্যন্ত নির্ধারিত, পরে এই ধারাবাহিকতায় আরও কয়েকটি আসরও নিঃসন্দেহে আয়োজিত হবে। সব মিলিয়ে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের বাইরে মহাদেশীয় অথবা বৈশ্বিক বেশ কিছু আসর আছে আগামী ৮ বছরে। ভারতীয় দল নিশ্চয়ই এই সূচি মাথায় রেখেই তৈরি করছে খেলোয়াড়দের, নিচ্ছে প্রস্তুতি।
আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত স্বাগতিক। ২০২৪ এর শিরোপা জয়ের পরই বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা টি-টোয়েন্টির আন্তর্জাতিক সংস্করণ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তাদের বদলে সঞ্জু স্যামসন, অভিষেক শর্মা, তিলক বর্মা, রিঙ্কু সিংরাই এখন টি-টোয়েন্টিতে নিয়মিত মুখ। সঞ্জু স্যামসনের বয়স ৩০, অভিষেকের ২৪, তিলকের ২২, রিঙ্কুর ২৭; এই ক্রিকেটাররা কেউ যদি বড় কোনো চোট বা আঘাত না পান তাহলে অনায়াসে আরও ৬ থেকে ৮ বছর খেলবেন। তাদের সঙ্গে ছায়া হয়ে থাকবেন সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, শ্রেয়াস আইয়ার, জাসপ্রিত বুমরারা। অন্যদিকে ওয়ানডে দলে শুবমান গিলকে দেখা হচ্ছে ভবিষ্যৎ অধিনায়কের ভূমিকায়, এবারেই তো ছিলেন সহ-অধিনায়ক। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল থেকে শেষ মুহূর্তে বাদ পড়া যশস্বী জয়সওয়ালও নিশ্চয়ই সুযোগ পাবেন আগামীতে। তার বয়স এখন মাত্র ২৩, আগামী ৮ বছর তো হেসেখেলেই খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব এই প্রতিভাবান তরুণের।
ব্যাটিংয়ের বাইরে স্পিন বোলারদের পাইপলাইনটাও কম বড় নয় ভারতের। যেহেতু আগামী ৮ বছরে ৩টা আইসিসি ইভেন্ট ভারতে, তাই স্পিনারদের ওপরও থাকবে বাড়তি ভরসা। ৩৩ বছরের বরুণ চক্রবর্তী হয়তো আরও বছর চারেক খেলবেন। বছর চব্বিশের লেগস্পিনার রবি বিষনোই হতে পারেন বরুণের বিকল্প। ২৫ বছরের ওয়াশিংটন সুন্দর হয়ে উঠতে পারেন ৩১ বছর বয়সী অক্ষর প্যাটেলেরও বিকল্প, ব্যাটে বলে দুই ভূমিকাতেই পারদর্শী দুজনেই। হার্দিক পান্ডিয়ার উত্তরসূরি হয়ে উঠতে পারেন নীতিশ কুমার রেড্ডি, অস্ট্রেলিয়া সফরে নিজেকে চিনিয়েছেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। উইকেটের পেছনে লোকেশ রাহুল, রিশভ পান্তদের পর উঠে আসছেন ধ্রুব জুড়েল। পেসার হিসেবে হারশিত রানা, আর্শদীপ সিংরাও আগামী দিনগুলোতে জায়গা নেবেন শামি-বুমরাহদের। আগামী কয়েক বছরের জন্য ভারতীয় দলে প্রায় প্রতিটা জায়গাতেই উপযুক্ত একাধিক ক্রিকেটারের উপস্থিতিই কোহলিকে সাহস জুগিয়েছে কথাটা বলতে। কোহলি বলেছিলেন, ‘কেউ যখন বিদায় নেয়, সে চায় দলকে যেন ভালো একটা জায়গায় রেখে বিদায় নিতে পারে। আমার মনে হয় আমাদের এমন একটা স্কোয়াড আছে যা আগামী ৮ বছর বিশ্বের যে কোনো দলের বিপক্ষে জিততে পারে। শুবমান অসাধারণ, শ্রেয়াস খুবই চমৎকার, কেএল (লোকেশ রাহুল) নিয়মিত ম্যাচ শেষ করে আসছে আর হার্দিক ব্যাট হাতে দুর্দান্ত। আমাদের ড্রেসিং রুমেও অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে আর তারা তাদের খেলাটা আরও ওপরের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়। আমরা সিনিয়ররা আছি তাদের সাহায্য করার জন্য, আমাদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার জন্য। এটাই ভারতীয় দলকে শক্তিশালী বানিয়েছে।’
সত্তরের দশকের অর্ধেকটা রাজত্ব করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তাদের বিখ্যাত পেস বোলিং আক্রমণ আর ভিভ রিচার্ডসের মতো ব্যাটসম্যান ছিল যে কোনো প্রতিপক্ষের কাছে আতঙ্কের কারণ। উনিশ শতকের শেষ আর বিশ শতকের প্রথম দশকটা ছিল অস্ট্রেলিয়ার, প্রথমে স্টিভ ওয়াহ ও পরে রিকি পন্টিংয়ের হাত ধরে অস্ট্রেলিয়া হয়ে উঠেছিল অজেয়। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে রানার্স আপ, ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন এরপর ২০২৫ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয় আগামীতে হয়তো সময়টা ভারতেরই।