সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র

হাসিনাকে ফেরত চাওয়া চিঠির জবাব দেয়নি ভারত

আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৫, ০১:৫৬ এএম

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় ফেরত চেয়ে ভারতকে কূটনৈতিক চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে প্রায় তিন মাস পার হলেও এখনো এর কোনো জবাব দেয়নি দেশটি।

গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম এ বিষয়ে বলেন, ভারত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো জবাব দেয়নি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ভারতের জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন এবং এখন পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করছেন।

৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলছে ভারত। সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত মন্তব্য না করার বিষয়ে ভারত যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করছি। এ ধরনের মন্তব্য অনাকাক্সিক্ষত এবং বাস্তবতাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, গত ৭ মার্চ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যে মন্তব্য করেছে, তা বাংলাদেশের নজরে এসেছে। তিনি স্পষ্ট করেন, বাংলাদেশের নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সংখ্যালঘু-সংক্রান্ত বিষয় একান্তই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এ বিষয়ে বাইরের কোনো রাষ্ট্রের মন্তব্য করা অনুচিত। তিনি বলেন, ‘অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এ ধরনের মন্তব্য হস্তক্ষেপের শামিল, যা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং বাস্তবতাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে। বাংলাদেশ সব সময় সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে বিশ্বাসী।’

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে রফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা আশা করি, ভারত সরকার এ ধরনের মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার পরিমাণ অর্ধেক করা হতে পারে : মিয়ানমার থেকে বল-পূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ সংস্থান করা সম্ভব না হলে আগামী ১ এপ্রিল থেকে খাদ্য সহায়তার পরিমাণ জনপ্রতি ১২ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ৬ মার্কিন ডলারে নামিয়ে আনতে বাধ্য হবে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা এরই মধ্যে এ তথ্য জানিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন সংগঠনের সহায়তায় যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা করা হবে এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য জাতিসংঘ এক বছর মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে থাকে এবং বছরের শুরুতে সেটি প্রকাশ করে। কিন্তু এ বছর পরিকল্পনা দুই বছর মেয়াদের জন্য হবে। এ বিষয়ে জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক রফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার ২০২৫-২৬ জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের (জেআরপি) আওতায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের জন্য দুই বছর মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নে কাজ করছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থায়ন নিশ্চিতকরণে সরকার বছরব্যাপী জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করে। এ বছর জেআরপি চূড়ান্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান আছে। এ মাসেই ২০২৫-২৬ জেআরপির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাজেট হ্রাসসহ যেসব চ্যালেঞ্জ সামনে আসবে, সেগুলোর জন্য যথাসময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় পরিকল্পনা ও কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশটির পররাষ্ট্রনীতির নতুন দিকনির্দেশনা নিয়ে অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তার বিষয়টি কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডির সম্প্রতি ঢাকা সফরের সময়ে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

এ বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, ফিলিপ্পো গ্রান্ডির সফরে রোহিঙ্গা সংকটবিষয়ক চ্যালেঞ্জ ও এর সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির নতুন দিকনির্দেশনা নিয়ে অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের মানবিক সহায়তার প্রসঙ্গটি উঠে আসে। বিশ্বের অনেক স্থানেই জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা তাদের কার্যক্রম সীমিত করতে বাধ্য হয়েছে জানিয়ে ফিলিপ্পো গ্রান্ডি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, বর্ণিত বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক সহায়তার পরিমাণ ক্রমেই সীমিত হয়ে আসতে পারে।’

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়, এ বছরের শেষের দিকে আয়োজিতব্য রোহিঙ্গা সংকটবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সংকট নিরসনে কার্যকর সমাধান আবিষ্কার করা এবং একই সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সহায়তায় নতুন দাতাদের একত্র করা সম্ভবপর হবে বলে মহাপরিচালক জানান।

ভেনেজুয়েলায় আটক বাংলাদেশি জাহাজের ক্যাপ্টেনকে ছাড়িয়ে আনার উদ্যোগ : রফিকুল আলম ব্রিফিংয়ের বাইরে ভেনেজুয়েলায় আটক বাংলাদেশি জাহাজের ক্যাপ্টেনকে ছাড়িয়ে আনার বিষয়ে বলেন, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন বাংলাদেশের কূটনীতিকরা। তিনি বলেন, ‘সম্ভাব্য সব ধরনের আইনি অধিকার নিশ্চিত করতে এবং মাস্টারের (ক্যাপ্টেন) আশু মুক্তি ও জাহাজের বন্দর ত্যাগের লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্রাসিলিয়ায় (ভেনেজুয়েলার দায়িত্বপ্রাপ্ত) বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে।’

বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ মেঘনা প্রেস্টিজ গত ২৯ জানুয়ারি ভেনেজুয়েলায় বন্দর ত্যাগের ঠিক আগে স্থানীয় একজন ডুবুরি প্রাণ হারান এবং অন্য একজন ডুবুরি আহত হন। এ ঘটনায় ভেনেজুয়েলা কর্র্তৃপক্ষ আইনি পদক্ষেপ শুরু করে। স্থানীয় কোস্ট গার্ডের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশি জাহাজটি নাবিক, মালামালসহ আটক করা হয়। জাহাজের ক্যাপ্টেন/মাস্টার মাহবুবুর রহমানকে বিগত ৩০ জানুয়ারি স্থানীয় পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। একই সঙ্গে দুটি মামলা করা হয়।

মহাপরিচালক রফিকুল আলম জানান, যেহেতু বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়াধীন এবং জাহাজের ক্যাপ্টেন বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছেন, সেহেতু ভেনেজুয়েলার অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে পাঠানোর জন্য ক্যাপ্টেনের মুক্তি ও জাহাজের বন্দর ত্যাগের উদ্দেশে আইনি যুক্তিসহ মামলার নথি ইংরেজিতে প্রস্তুত করে আইনি সারসংক্ষেপ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। ৫ মার্চ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি মামলার অগ্রগতির বিষয়ে সার্বিক তথ্য জানতে চেয়ে ভেনেজুয়েলা সরকারকে গত ১১ মার্চ আবার কূটনৈতিক চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত