বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবলে এক নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। ব্রিটিশ-বাংলাদেশি মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলার অনুমতি পাওয়ার পর এবারই প্রথম বাংলাদেশে আসছেন জাতীয় দলের খেলোয়াড় হিসেবে। তার আগমনের খবরে পুরো হবিগঞ্জ, বিশেষ করে তার গ্রামের স্নানঘাটে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
আজ সকালে মা, স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে সিলেটে পৌঁছাবেন হামজা। সেখান থেকে নিজ গ্রাম স্নানঘাটে যাবেন, যেখানে বিকেলে তাকে সংবর্ধনা দেবে গ্রামবাসী। হামজাকে একনজর দেখতে গ্রামের রাস্তায় ব্যানার-ফেস্টুনের ছড়াছড়ি, মানুষের মধ্যে আনন্দ-উত্তেজনা তুঙ্গে।
হামজার বাবা দেওয়ান মুর্শেদ চৌধুরী মনে করেন, তার ছেলের বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা বহুদিনের, যা শৈশব থেকেই গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘হামজার জন্ম লন্ডনে হলেও ছোটবেলায় তাকে নিয়মিত দেশে আনতাম। গ্রামে এসে সে স্থানীয় ছেলেদের সঙ্গে খেলত, এখানকার মাঠে দৌড়াত। সেই স্মৃতিই তাকে দেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহ দিয়েছে।’
গ্রামের মানুষও হামজার আগমনে উচ্ছ্বসিত। স্নানঘাটের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, ‘একজন আন্তর্জাতিক তারকা আমাদের গ্রামের সন্তান—এটা ভাবতেই রোমাঞ্চিত লাগছে। আমরা তাকে যথাযোগ্য সংবর্ধনা দিতে চাই।’ তরুণ রুবেল মিয়া মনে করেন, ‘হামজা শুধু আমাদের গ্রামের গর্ব নয়, পুরো বাংলাদেশের গর্ব। এত দিন হয়তো তাকে আমরা সেভাবে চিনতাম না, কিন্তু এখন তিনি জাতীয় দলে খেলবেন শুনে দারুণ লাগছে।’
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে রাজনীতির প্রভাব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন হামজার চাচা দেওয়ান গোলাম মাসুদ। তার মতে, ‘যদি ক্রীড়াঙ্গন রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকে, তাহলে দেশেই অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় উঠে আসবে। হামজার মতো আরও ফুটবলার তৈরি করা সম্ভব হবে।’
হবিগঞ্জে একদিন কাটিয়ে হামজা ঢাকায় যাবেন, যেখানে তিনি জাতীয় দলের সঙ্গে অনুশীলন করবেন। ২০ মার্চ এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে ভারত সফরে যাবেন বাংলাদেশ দল। সব ঠিক থাকলে, ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথমবারের মতো মাঠে নামবেন হামজা চৌধুরী।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) তার নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন জানান, ‘হামজার সঙ্গে সার্বক্ষণিক ছয়জন পুলিশ থাকবে এবং তাকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’
জাতীয় দলে হামজার অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য একটি যুগান্তকারী অধ্যায় হতে পারে। ফুটবলপ্রেমীদের আশা, তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দলের পারফরম্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফুটবলে আরও বড় স্বপ্ন দেখবে।