অতীতে বড় বড় করপোরেট হাউজকে দেখা গেছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে কাজ করতে। তবে কেউই সুখকর অভিজ্ঞতা নিয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি। বরং বিদায়বেলায় সঙ্গী হয়েছে আক্ষেপ, বিরক্তি। বাফুফের নেতৃত্বে এসেছে বদল। দেশেও ঘটেছে রাজনৈতিক বাঁকবদল। তাই বাফুফের নতুন নেতৃত্ব নতুন নতুন পৃষ্ঠপোষক আনতে শুরু করছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসিকে দীর্ঘমেয়াদে পথচলার সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছে। ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ জাতীয় দলের জন্য পাঁচ বছরের সমঝোতা চুক্তি সাক্ষর করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউসিবির চেয়ারম্যান শরীফ জহির। দুপক্ষই এটাকে দাবি করছেন পার্টনারশিপ হিসেবে। এই পাঁচ বছরে জাতীয় দলের র্যাংকিং উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সব চেষ্টাই দুপক্ষ মিলে করবে বলে জানিয়েছেন দুই সংস্থার শীর্ষ কর্তারা।
বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল চুক্তি সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের চুক্তিটা পাঁচ বছরের জন্য হয়েছে। তবে অতীতের মতো চুক্তির সব কিছু আমরা প্রকাশ করছি না। চুক্তিতে যেমন আর্থিক অংশ রয়েছে, একইভাবে বাহ্যিক অংশও আছে। ইউসিবির বৃহত্তম একটা ডিজিটাল, মার্কেটিং ও ব্র্যান্ড টিম আছে। এরা ডিজিটালি ফুটবল ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। এ ছাড়া নগদ অর্থটা আমরা ব্যবহার করব খেলোয়াড়দের উন্নয়নে এবং যতগুলো জাতীয় দল আছে সেগুলো চাহিদা মেটানোর জন্য। সব চুক্তিতেই কিছু শর্ত থাকবে। আমরা বাফুফের পক্ষ থেকে চেষ্টা করব ব্যাংক যাতে সন্তুষ্ট থাকে। চুক্তি অনুযায়ী আমরা যাতে সব প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি। সেটা করতে না পারলে ব্যাংক বলার আগেই তো উচিত বাফুফের সরে যাওয়া।’
গ্রামীণফোন, সিটিসেলের মতো বৃহৎ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তিক্ত অভিজ্ঞতা সঙ্গী করে ফুটবলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে অতীতে। তাবিথের বিশ্বাস ইউসিবিসহ অন্যান্য পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলোর আস্থা পেতে নতুন কমিটি ১০০ দিনের মধ্যেই অনেক কাজ করেছে, ‘নতুন নির্বাহী কমিটি গত ১০০ দিনের মধ্যে ফিফার আর্থিক বাধ্যবাধকতা থেকে বাফুফেকে মুক্ত করতে পেরেছে। সব প্রতিষ্ঠানই ফাইনান্সিয়াল পার্টনারশিপের আগে দেখতে চায় বাফুফের ফাইনান্সিয়াল অবস্থা কী রকম। আমি বলতে চাই, ফিফা আন্তর্জাতিক অডিটরের মাধ্যমে অডিট করে বাফুফেকে মুক্তি দিয়েছে, সেটাও ছয় বছর পর। বিগত কয়েক মাসে আমরা অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্ট শুরু করেছি। জাতীয় দলের প্রস্তুতি অনেক আগে শুরু হয়েছে। আমরা এগুলো বলতে চাই, যাতে আমাদের পার্টনাররা আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারেন।’
ইউসিবি চেয়ারম্যান শরীফ জহির যুব সমাজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও জাতীয় দলের র্যাংকিং উন্নতিতে কাজ করার কথা বলেছেন, ‘তরুণদের ফিটনেস, লাইফস্টাইলের জন্য খেলাধুলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের ইউসিবিএলের আগামীর লক্ষ্য হলো বেশি বেশি তরুণদের সুযোগ দিতে চাইছি। বাংলাদেশের আবহাওয়া, বাস্তবতা মিলিয়ে কিন্তু ফুটবলেরই অন্য সব খেলার চেয়ে জনপ্রিয় হওয়ার কথা। হয়তো বা এখন আমরা পিছিয়ে আছি। তবে একটা দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নিলে ভালো করার সুযোগ আছে। আমরা চাই জাতীয় দলের র্যাংকিংয়ে যাতে উন্নতি ঘটে। সেজন্য আমাদের সহযোগিতা বাফুফের নতুন নেতৃত্বের প্রতি থাকবে।’
ইউসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামদুদুর রশীদ বলেন, ‘ফুটবলের আকর্ষণ কমেছে ঠিক, তবে হারিয়ে যায়নি। এটাই আমাদের অনুপ্রাণিত করছে। ক্রিকেট যেমন অনেকটা এগিয়ে গেছে, ফুটবলকেও সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। কারণ এক সময় এর প্রচন্ড আকর্ষণ, জনপ্রিয়তা ছিল। এক বছর বা ছয় মাসের চুক্তি হলে আমরা এই স্বপ্নটা দেখতে পারতাম না। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির কারণ একটা লম্বা সময় এক সঙ্গে কাজ করতে পারা।’