মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে চায় সরকার

আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৬:৩৭ এএম

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন চীন সফরের মাধ্যমে সরকার দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চায় বলে জানিয়েছেন তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এই সফরে বিনিয়োগ ও বাংলাদেশে শিল্প স্থানান্তরের বিষয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে বলে জানান তিনি।

গতকাল রবিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব এসব কথা বলেন। এর আগে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন চীন সফর নিয়ে আলোচনা হয়।

শফিকুল আলম বলেন, চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, এটা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সফর। দুই দেশ কূটনীতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করছে। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ২৬ মার্চ চীন সফরে যাবেন। অধ্যাপক ইউনূস ২৮ মার্চ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আগের দিন ২৭ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন। এ ছাড়া চীনের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এসব মিটিংয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশে চীনের কারখানাগুলো ‘রিলোকেট’ করা।

প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আগেও চীনের সোলার (সৌরবিদ্যুৎ) কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কারণ, বৈশ্বিকভাবে চীন অনেক ট্রেড বেরিয়ারের মধ্যে পড়ে গেছে। বাংলাদেশ থেকে উৎপাদন করে যদি রপ্তানি করে, তাহলে কোনো বাধার মুখে পড়বে না। দুটি কোম্পানি বাংলাদেশে অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর একটি হচ্ছে ‘লংগি’। এটা বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোলার প্যানেল কোম্পানি। বিশ্বের ৭০ ভাগ সোলার তারা তৈরি করে। বাংলাদেশে তারা আসা মানে এ খাতে প্রচুর জব তৈরি হবে এবং এক্সপোর্ট করা যাবে।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, চার দিনের সফরকালে পিকিং ইউনিভার্সিটিতে বক্তব্য রাখবেন প্রধান উপদেষ্টা। পিকিং ইউনিভার্সিটি প্রধান উপদেষ্টাকে একটি সম্মানসূচক ডিগ্রি দেবে। এ ছাড়া তিনি চীনের হাইটেক পার্কে যাবেন। সেখানে ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল, সোলার প্ল্যান্ট ও চিপস কারখানা পরিদর্শন করবেন।

সফরে মূল ফোকাস হবে চীনের সিইওদের (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবে পরিণত করা। এ সফরে চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন শফিকুল আলম।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের মান উন্নয়ন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার এই সফরে আলোচনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশে একটি জেনারেল হাসপাতাল করে দেবে বলেছে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা চাচ্ছেন, চীনের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে হাসপাতাল তৈরি করে।

চীনের রাষ্ট্রদূতের বরাত দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ৫ আগস্টের পর চীনের কোম্পানিগুলো গত সাত মাসে বাংলাদেশে বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে। এই সফরের পর প্রচুর বিনিয়োগ আসবে। চীনের হাসপাতাল চেইনগুলো যেন বাংলাদেশে এসে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে, প্রধান উপদেষ্টা সেটাও চাচ্ছেন।

চলমান গ্যাস সংকট নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের পাশাপাশি বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আশা করছি, দ্রুতই গ্যাস সংকট দূর হবে।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব জানান, জাতিসংঘের মহাসচিব দেশের সংস্কারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ায় সংস্কার হবে না। এটা পুরোটাই হবে নিজস্ব প্রক্রিয়ায়। এ প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মহলের সবাই আমাদের সমর্থন দেওয়ার কথা বলছেন। তবে এ সমর্থন আমরা নেব কি না, সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে সিপিডির এই বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত না। আমরা মনে করি, এতে আমাদের সুযোগ বাড়বে। চাঁদাবাজি, কর কমানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্মিলিত চেষ্টায় দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখা গেছে।

পুলিশের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক : দেশের আইনশৃঙ্খলার উন্নতির লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা আগামীকাল সারা দেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে ব্রিফিংয়ে জানান উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, এ বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক নির্দেশনা দেবেন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের কথা শুনবেন। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বিশেষ এই বৈঠকে এসপি থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন পদমর্যাদার ১২৭ জন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন।

সাত কলেজ নিয়ে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি : ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সাত কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত নাম ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি। সাত কলেজের সমন্বয়কদের নিয়ে ২৮টি টিম করা হয়েছে। টিম লিডারদের নিয়ে এই নাম দেওয়া হয়েছে। এর রূপরেখা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। সাত কলেজের অধ্যক্ষদের মধ্য থেকে একজনকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। যিনি নির্বাচিত হবেন তার প্রতিষ্ঠানই হবে সাত কলেজের হেডকোয়ার্টার।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত